সম্পাদনায় : আজম পাটোয়ারী
প্রথম জীবন
মুসলিম খিলাফত সাম্রাজ্যে কঠোরতা ও কোমলতা মহান উদাহর দিতে গেলে প্রথমে যার নাম উচ্চারিত হয়, তিনি হচ্ছে দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ)। আমাদের আজকে কিংবদন্তী জীবনিতে আমরা এই মহান খলিফার অনুসরনিয় জীবন আলোচনার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
উমর মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম। তার মা বনু মাখজুম গোত্রের সদস্য ছিলেন।
যৌবনে তিনি মক্কার নিকটে তার বাবার উট চরাতেন। তার বাবা বুদ্ধিমত্তার কারণে গোত্রে সম্মান লাভ করেছিলেন। উমর বলেছেন : আমার বাবা খাত্তাব ছিলেন একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ।
তিনি আমাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতেন। যদি আমি কাজ না করতাম তবে তিনি আমাকে মারধর করতেন এবং ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত কাজ করাতেন।
আরবে ইসলাম পূর্ব লেখাপড়ার রীতি তেমন বেশি প্রচলিত ছিল না। এরপরও তরুণ বয়সে উমর লিখতে ও পড়তে শেখেন। নিজে কবি না হলেও কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল।
কুরাইশ ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি তার কৈশোরে সমরবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন। তিনি দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। কুস্তিগির হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। এছাড়াও তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন। তার বাবার পরে তিনি তার গোত্রের একজন বিরোধ মীমাংসাকারী হন।
উমর একজন বণিক হিসেবে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। এখানে তিনি রোমান ও পারসিয়ান পণ্ডিতদের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং এসব সমাজের অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত হন।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর যুগ ইসলামের প্রতি সহিংসতা :
৬১০ সালে মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম প্রচার শুরু করেন। অন্যান্য মক্কাবাসীর মতো উমর প্রথম পর্যায়ে ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তার হাতে মুসলিমরা নির্যাতিত হয়। বিরোধিতার এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তিনি কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করতেন এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন।
ইসলাম গ্রহণ :
উমর ৬১৬ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। উমর মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে তার বন্ধু নাইম বিন আবদুল্লাহর সাথে দেখা হয়। নাইম গোপনে মুসলিম হয়েছিলেন তবে উমর তা জানতেন না। উমর তাকে বলেন যে তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
এসময় উমর তার বোন ও ভগ্নিপতির ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে জানতে পারেন। এ সংবাদে রাগান্বিত হয়ে উমর তার বোনের বাড়ির দিকে যাত্রা করেন। বাইরে থেকে তিনি কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পান। এসময় খাব্বাব ইবনুল আরাত তাদের সূরা তোহা বিষয়ে পাঠ দিচ্ছিলেন। উমর ঘরে প্রবেশ করলে তারা পাণ্ডুলিপিটি লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু উমর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে একপর্যায়ে তাদের উপর হাত তোলেন।
এরপর বোনের বক্তব্যে তার মনে পরিবর্তন আসলে তিনি স্নেহপূর্ণ ভাবে পাণ্ডুলিপিটি দেখতে চান। কিন্তু তার বোন তাকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করতে বলেন এবং বলেন যে এরপরই তিনি তা দেখতে পারবেন। উমর গোসল করে পবিত্র হয়ে সূরা তোহার আয়াতগুলো পাঠ করেন।
এতে তার মন ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। এরপর তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে গিয়ে ইসলামগ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর। ইসলাম গ্রহণের পর উমর এসময় মুসলিমদের সবচেয়ে কঠোর প্রতিপক্ষ আবু জাহলকে তা জানান। উমরের ইসলাম গ্রহণের পর প্রকাশ্যে কাবার সামনে নামাজ আদায় করাতে মুসলিমরা বাধার সম্মুখীন হয় নি। ইসলাম গ্রহণের পর গোপনীয়তা পরিহার করে প্রকাশ্যে তিনি মুসলিমদের নিয়ে বাইরে আসেন এবং কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন।
তিনি ছাড়াও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন।সেদিন মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে ফারুক উপাধি দেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ প্রসঙ্গে বলেন
যখন উমর মুসলিম হন তখন থেকে আমরা সমানভাবে শক্তিশালী হয়েছিলাম এবং মান সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পেরেছিলাম।

মদিনায় হিজরত :
মক্কায় নির্যাতনের কারণে এবং মদিনা (তৎকালীন ইয়াসরিব) থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আসায় মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করতে থাকে। অধিকাংশ ব্যক্তিই ধরা পড়ার ভয়ে রাতে হিজরত করতেন।
কিন্তু উমর দিনের বেলায় (বিশজন সাহাবীসহ) প্রকাশ্যে হিজরত করেন।তখন তিনি কাফেরদের লক্ষ্য করে বলেন,‘কে আছো নিজ স্ত্রীকে বিধবা করবে? কে আছো নিজ সন্তানকে এতীম করবে? আসো আমার সঙ্গে মোকাবেলা করো!এসময় তার সাথে সাঈদ ইবনে যায়িদ ছিলেন।
খলিফা ওমরের তরবারি:
মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরত করার পর তিনি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দেন। উমরের সাথে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে উমর খলিফা হলে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা হিসাবরক্ষণের প্রধান পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পান। ৬২৪ সালে উমর বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৬২৫ সালে তিনি উহুদের যুদ্ধেও অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি বনু নাদির গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানেও অংশ নিয়েছেন। ৬২৫ সালে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে উমরের মেয়ে হাফসা বিনতে উমরের বিয়ে হয়। ৬২৭ সালে তিনি খন্দকের যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী বনু কুরাইজা গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিয়েছেন।
৬২৮ সালে তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে অংশ নেন এবং সাক্ষী হিসেবে এতে স্বাক্ষর করেন। ৬২৮ সালে উমর খায়বারের যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ৬৩০ সালে মক্কা বিজয়ের সময় উমর এতে অংশ নেন। পরে হুনায়নের যুদ্ধ এবং তাইফ অবরোধে তিনি অংশ নিয়েছেন। তাবুকের যুদ্ধে সাহায্য হিসেবে তিনি তার সম্পদের অর্ধেক দান করে দিয়েছিলেন।বিদায় হজ্জেও তিনি অংশ নিয়েছেন।
খিলাফতের প্রতিষ্ঠা :
মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর উমর প্রথমে তা বিশ্বাস করতে চাননি। বিদায় সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং বলেন যে মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেননি বরং মুসা (আঃ) যেমন চল্লিশ দিন পর ফিরে এসেছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)ও তদ্রূপ ফিরে আসবেন এবং যে বলবে নবী মারা গেছেন আমি তার হাত ও পা কাটব।
এসময় আবু বকর এসে ঘোষণা করেন, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ এর অনুসরণ করতে তারা জেনে রাখুক যে মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতে, অবশ্যই আল্লাহ সর্বদাই জীবিত থাকবেন কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।
আবু বকর কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন :
মুহাম্মদ (সাঃ) একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নন। তার পূর্বে সকল রাসূল গত হয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পিঠ ফিরিয়ে পিছু হটবে ? আর যে পিঠ ফিরিয়ে সরে পড়ে সে কখনও আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন।…সূরা আল ইমরান,১৪৪
এরপর উমর সত্য অনুভব করেন এবং শান্ত হন। সুন্নিদের দৃষ্টিতে মৃত্যু সংবাদ অস্বীকার করা মূলত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় উমর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাফনের প্রস্তুতি চলার সময় কিছু মুসলিম শহরের উপকণ্ঠে সাকিফা
নামক স্থানে তার উত্তরসূরির বিষয়ে আলোচনায় বসে। এরপর আবু বকর, উমর এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ এখানে উপস্থিত হন। এসময় আনসারদের মধ্য থেকে দাবি উঠে যে উত্তরসূরি আনসারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করতে হবে।উমর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে উত্তরাধিকার মুহাজিরদের মধ্য থেকে হতে হবে।
কিছু গোত্র ইসলামপূর্ব গোত্রীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল যাতে প্রত্যেক গোত্রের নেতা গোত্রকে নেতৃত্ব দিত। শেষপর্যন্ত আবু বকরকে খলিফা হিসেবে অধিক যোগ্য বলে দাবি করে তার প্রতি উমর আনুগত্য প্রকাশ করেন। এই সিদ্ধান্ত শেষপর্যন্ত সবাই মেনে নেয়। ইসলামী খিলাফতের প্রতিষ্ঠা উমরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ধরা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
হযরত আবু বক্কর এর যুগ :
উমর কঠোর প্রকৃতির শাসক ছিলেন। তাই অনেকে তার শাসন সমর্থন করতে চাননি। তবে এরপরও আবু বকর তাকে নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করে যান। উমর তার ইচ্ছাশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, রাজনৈতিক সচেতনতা, নিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার এবং দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সদয় আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন।
উল্লেখ করা হয় যে আবু বকর তার উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টাদের বলেছিলেন..
আমার কোমলতার জন্য তার (উমর) কঠোরতা ছিল। যখন খিলাফতের ভার তার কাঁধে আসবে তখন সে আর কঠোর থাকবে না। যদি আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে কাকে আমি আমার উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়েছি, তবে আমি তাকে বলব যে আপনার লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছি।
উত্তরসূরি হিসেবে উমরের ক্ষমতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে আবু বকর অবগত ছিলেন। উমর সম্পূর্ণ বিবাদহীন ভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। মৃত্যূর পূর্বে আবু বকর উমরকে ডেকে তার অসিয়ত লিখতে বলেন যাতে তিনি উমরকে নিজের উত্তরসূরি ঘোষণা করে যান। অসিয়তনামায় উমরকে ইরাক ও সিরিয়া জয়ের অভিযান চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আবু বকরের সিদ্ধান্ত ইসলামী খিলাফতকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছিল।

খলিফা হিসাবে শাসন :
২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। একই দিনে উমর খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ:
ক্ষমতাপ্রাপ্তি পর সকল মুসলিম তাকে বায়াত প্রদান করেন। তার ব্যক্তিত্বের কারণে জনতা তাকে সমীহ করত। মুহাম্মদ হুসাইন হায়কলের মতে উমরের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল তার প্রজা ও মজলিশ আল শুরার সদস্যদের মন জয় করা। উমর বাগ্মী ব্যক্তি ছিলেন। জনগণের মনে স্থান করে নেয়ার জন্য তার এই দক্ষতা সাহায্য করেছে। শাসক হিসেবে উমর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।
ফিদাকের জমির ব্যাপারে তিনি আবু বকরের নীতির অনুসরণ করেছেন এবং একে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারের নীতি চালু রাখেন।রিদ্দার যুদ্ধে কয়েক হাজার বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীকে দাস হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল। উমর এসকল বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেন।
এই ঘোষণা বেদুইন গোত্রগুলোর কাছে উমরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল।
রাজনৈতিক ও বেসামরিক প্রশাসন :
রাজনৈতিক ও বেসামরিক প্রশাসন
উমরের সরকার এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। এতে খলিফা ছিলেন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ। পুরো সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। পাশাপাশি আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এসব অঞ্চলের কিছু স্বায়ত্তশাসিত এলাকা খিলাফতের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয়।
প্রদেশগুলো প্রাদেশিক গভর্নর বা ওয়ালি কর্তৃক শাসিত হত। উমর ব্যক্তিগত ভাবে ওয়ালিদের নিযুক্ত করতেন। প্রদেশগুলোকে বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত করা হত। পুরো সাম্রাজ্যে প্রায় ১০০ এর মতো জেলা ছিল। প্রতিটি জেলা বা প্রধান শহর একজন অধস্তন গভর্নর বা আমিলের দায়িত্বে থাকত। আমিলরা সাধারণত উমর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন তবে প্রাদেশিক গভর্নররাও তাদের নিয়োগ দিতে পারতেন।
প্রাদেশিক স্তরে অন্যান্য অফিসাররা ছিলেন :
* কাতিব
* প্রধান সচিব
*কাতিব উদ দিওয়ান
* সামরিক সচিব
* সাহিব উল খারাজ
* রাজস্ব আদায়কারী
* সাহিব উল আহদাস
* পুলিশ প্রধান
* সাহিব বাইতুল মাল
* কোষাগার কর্মকর্তা
* কাজি
* প্রধান বিচারক
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওয়ালি প্রদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্মরত থাকলেও কিছু প্রদেশে পৃথক সামরিক অফিসার থাকত। প্রতিটি নিয়োগ লিখিত আকারে দেওয়া হত। নিয়োগের সময় গভর্নরদের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হত। দায়িত্বগ্রহণের পর গভর্নররা জনতাকে প্রধান মসজিদে জড়ো করে তাদের সামনে নির্দেশনা পড়ে শোনাতেন।
কর্মকর্তাদের প্রতি উমরের সাধারণ নির্দেশনা ছিল :
স্মরণ রেখ, আমি তোমাকে জনগণের উপর নির্দেশদাতা ও স্বেচ্ছাচার হিসেবে নিয়োগ দিইনি। আমি তোমাকে একজন নেতা হিসেবে পাঠিয়েছি যাতে জনগণ তোমার উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে। মুসলিমদেরকে তাদের অধিকার প্রদান কর যাতে তারা অন্যায়ে পতিত না হয়। তাদের মুখের উপর নিজেদের দরজা বন্ধ কর না যাতে ক্ষমতাশালীরা দুর্বলদের ধ্বংস করতে না পারে।
এবং নিজেকে তাদের চেয়ে উচ্চ মনে হয় এমন কোনো আচরণ কর না যা তাদের প্রতি স্বৈরাচারী শাসকরা করে থাকে। এছাড়াও আরো কিছু বিধিনিষেধ গভর্নর ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উপর জারি করা হয়।
প্রধান কর্মকর্তাদেরকে হজ্জের সময় মক্কায় আসতে হত এবং এসময় জনগণ তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ তুলতে পারত। দুর্নীতি রোধ করার জন্য উমর তার কর্মকর্তাদের উচ্চ বেতন দিতেন। নিজ অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ প্রধান থাকাবস্থায় গণিমতের সম্পদ ছাড়াও গভর্নররা বার্ষিক পাঁচ থেকে সাতহাজার দিরহাম করে পেতেন।
উমরের অধীনে সাম্রাজ্যকে নিম্নোক্ত প্রদেশে বিভক্ত করা হয় :
আরবকে মক্কা ও মদিনা প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
ইরাককে বসরা ও কুফা প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর উচ্চ অংশে আল-জাজিরা প্রদেশ ছিল;
সিরিয়া ছিল একটি প্রদেশ;
ফিলিস্তিনকে ইলিয়া ও রামলাহ প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
মিশরকে উচ্চ মিশর ও নিম্ন মিশর প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
পারস্যকে খোরাসান, আজারবাইজান ও ফারস প্রদেশে বিভক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য উমর সর্বপ্রথম বিশেষ বিভাগ গঠন করেন। এই বিভাগ প্রশাসনিক আদালত হিসেবে কাজ করত এবং এর আইনি কর্মকাণ্ড উমর ব্যক্তিগতভাবে তদারক করতেন। এই বিভাগ মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার দায়িত্বে দেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে তিনি ঘটনাস্থল,অভিযোগ তদন্ত ও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে উমরের সহায়তা করতেন। কিছু ক্ষেত্রে অনুসদ্ধান কমিটির সাথে তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করা হত। ক্ষেত্রবিশেষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে মদিনায় তলব করে আদালতের সম্মুখীন করা হত। উমর তার গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনেন।
-চলবে-
আরো পড়ুন
হযরত উমর (রাঃ) এর জীবনী শেষপর্ব