শেখ হোসনা
আমি আজ আপনাদের আমার কলমে সুতার কিছু কথা বলবো। না এ সুতা কাপড় বুননের বা কোনো কিছু বন্ধনের সুতা নয়। এসুতা মানুষের সাথে সম্পর্ক বন্ধনের একজন সুতা।
সে একজন যথাযোগ্য রমনী,ঘরণী,এবং একজন জননী। যে আমার চোখে শুধুই৷ একজন অসহায়া নারী। যার বয়সের ব্যবধান আমার বয়সের সাথে একুশ বছরের। আমার সৌভাগ্য আমি প্রায় জন্ম লগ্ন থেকে এই সুতার সান্নিধ্য পেয়েছি।
সুতার বয়স আজ চল্লিশ উর্ধ্ব অথচ তার মাঝে এই লম্বা বয়সটি তেমন ভাবে পরিলক্ষিত হয় না।তার অতি চঞ্চলতা ও বাচ্চা সুলভ আচরণে। সুতা,সে স্পষ্ট ভাষী খুব প্রয়োজন বিহীন মিথ্যে বলা তার একদম অপছন্দ। সুতা নামটি তার জন্য যথার্থ।যেখানেই যায় মায়া- মমতা,স্নহ-ভালোবাসা বন্ধুত্বে জড়িয়ে যাওয়া তার কিছু সময়ের ব্যবধান মাত্র।
কিন্তু ওর বর তার যেনো এই ব্যপারটি তেমন একটা পছন্দ নয়। আমার ভালো মন্দ জ্ঞান হবার পর হতেই আমি যা বুঝেছি তাহলো সুতা সম্পুর্ণ অসুখী একজন মানুষ।কিন্তু অবাক হই মাঝে মাঝে তার মাঝে কখনোই কোনো সুখ, দুঃখ আঘাত উত্থান পতন কিছুরই বহিঃপ্রকাশ দেখিনি। দেখেছি যা তাহলো তার সর্ব সময়ের হাস্যজ্জল চেহারাটা।রাতের গভীরতা আসার আগ পর্যন্ত।
রাতের গভীরতা আসার আগ পর্যন্ত বলার কারণ হলো-দিন শুরুর দিকটায় প্রতিদিনই দেখতাম তার সারা রাত অশ্রু ঝরানো লালাভো নয়ন।সময় কিছুটা গড়াতে যা হারিয়ে যেতো তার স্বভাব এবং হাসির আড়ালে।
মাঝে মাঝে জানতে চাইতাম। কিন্তু সফল হইনি।তাই তার কষ্ট উপলব্ধি করে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না।
নিজেকে দেয়া অবহেলায় আজ তার শরীর ভীষণ অসুস্থ। ডাক্তারের বলা তার বেশিটাই মানসিক চাপ চেপে রাখা কারণ। আর পেরে উঠতে পারছিলনা তাই সিদ্ধান্ত নিলো দেশের বাহিরে যেয়ে ডাক্তার দেখাবে।সাথে উদ্দেশ্যো মন প্রশান্তি ও পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা।
সুতা অনেকটাই সৌখিন গোছের মেয়ে তবে চাহিদা অনেক নয়। খুব অল্পতেই তার খুশি। তাও জোটা মশকিল হতো স্বামীর আপত্তিতে।
তো কথা মতোই কাজ। সপ্তাহের জন্য নিয়ে আসা হলো দেশের বাহিরে।সাথে এলো সন্তান তূল্য দেবর।যেখানে আসার কথা তার বর বা সন্তান।ওহে সন্তান সেতো সম্ভব নয়, কারন ওর বড়ো সন্তান সে একজন শারীরিক অসুস্থ আর ছোটোটা বেশ ছোটই।
সেদিক খেয়াল করলে ওর বরেরই আসার কথা। কিন্তু নাহ তার তেমন একটা যোগ্যতাও নেই , ইচ্ছে ও নেই। তাই সন্তান তূল্য দেবরই নিয়ে এলো।দেবরকে সন্তান তূল্য বলা ঠিক নয় কারন সুতা কখনই নিজের দুটি বাচ্চা বলে না। কারণ বিয়ের প্রথম রাত থেকেই এই দেবর ওর সাথেই। কারন সুতার শ্বাশুড়ী ছিলেন না।
দেবরের বয়স ছিল ছয় মাস তাই বাসরটাও এই দেবরের সাক্ষীতেই।দেবরের কান্নার আবদারে সুতাই তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলো।তাই সুতা আর দেবরের মাঝে দেবর ভাবীর চেয়ে মা ছেলেই সম্পর্কটা বেশি।
যতই মা ছেলের মতো হোক তবুও দেবর বলে কথা। তাই দেবর প্রায়ই সুতার মনের কথা জানতে চাইতো।কারন সুতা যে ধরণের ওর বর সম্পুর্ণ তার উল্টো অর্থাৎ সুতার যা পছন্দ ওর বরের তা পছন্দ নয়। সুতা তাকে যেভাবে চলতে বলে সে ইচ্ছে করে হলে তা পাশ কাটাবে।
এককথায় একদম বেরসিক লোক।তার কাজ শুধু সংসারের চাহিদা মাফিক টাকা দেয়া আবার বিপদ আপদ তাতেও তার কোনো ভুমিকা নেই।সব যেনো সুতার দায়।এক কথায় A-z সব একা সুতার দায়ভার।
কিন্তু বরের পক্ষ থেকে তার জন্য কোনো বাহাবাও নেই কোনো দিন। এক কথায় সাংসারিক জীবন টা খেয়াল করলে সম্পুর্ণ একজন অসুখী এই সুতা।কিন্তু ওর কথা বার্তায় সেই ধারণা ও পাল্টে যায়।জীবন সম্পর্কে তার মুখ্যভাষ্য এমন”সুখ দুঃখ নিয়ে ভাবনার অতো কি আছে?সুখ বেশি হলেতো আর চিরকাল থেকে যাব না আর দুঃখ বেশি হলেওতো নিজের ইচ্ছেতে যেতে পারব না!!তাহলে এর প্রকাশ এতো জরালো করতে হবে কেনো?”
যাই বলি ওর কথায় কিন্তু গভীর দুঃখেরই প্রকাশ পায়।
আসার পর হতে একটির পর একটির টেষ্ট হচ্ছে। ওরা হোটেলে উঠেছে এখানে কোনো পরিচিত জন নেই বলে।তো ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছে।বাড়ীর সবার জন্য কেনা কাটা করছে। মোটামুটি দেবর ভাবীর ভালোই সময় কাটছে। যেহেতু এখানে পরিবারের কেউ নেই।
দেবরটি সে সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইল না।আজ হোটেলে ফিরে দেবর নিজেকে ফ্রেশ করে অন্যান্য দিনের মতো নিজের রুমে না গিয়ে ভাবীর রুমে হাজির। তাই সুতা অবাক তবে অতো নয়। স্বাভাবিক ভাবে””কিরে কিছু বলবি?ক্লান্ত লাগছে? মাথা ধরেছে?তোর কিছু বাকী পরে গেছে?
দেবর শান্ত ভাবে””এতো প্রশ্নের কারন জানতে পারি?
“বোকা, তোর রুমে না যেয়ে আমার রুমে, আবার সাথে আমতা আমতা ভাব তাই এতো- যাক কি বলবি বল।
দেবর ভাবগম্ভীর বাব নিয়ে”” আমার কিছু হয়নি তোমার সাথে গল্প করব।”
সুতা এবার ওর চিরাচরিত হাসি বিনিময়ে””ওমা!বোকা চেলে বলে কি?সারা দিন মা ছেলে একসাথে ঘুরলাম কতো গল্প করলাম,আরো গল্প বাকী?যা ঘুমাতে যা কাল শুনব।”
আবদারি কন্ঠে দেবর “” না,আজই করব””
“” কি ব্যাপার? আমার বাছাটা ভিন দেশে এসে কারো প্রেমে পরল নাতো?
দেবর এবার ভাব নিয়ে””ঠিক বলেছো,আজ প্রেমের গল্পই করব””
-চলবে-
আরো পড়ুন
সুতার বাধন প্রতি রাতের কান্না পর্ব-২