আশরাফুল ইসলাম
রাস্তায় হাটছি হঠাৎ রিং বেজে উঠলো! কল রিসিভ না করে কেটে দিলাম। ডাটা অন করে মেসেঞ্জারে আসতে একটু সময় লাগছে।
মেসেঞ্জার অন হতেই দেখি চৈতালী লিখেছে..
ব্যস্ত আছো?
বেশ কথা সেরে নাও
আমি পরে আসছি!
আমি কিছু বলার আগেই তার সবুজ আলো নিভে গেল! তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাটছি..
হঠাৎ একটা রিক্সার হুডে লেগে গেঞ্জির হাতাটা ছিড়ে গেল!
ঐ মিয়া রাস্তার উপরেও ফেসবুক চালাইতে হয়? কিছু একটা হইলেই তো রিক্সাওয়ালা গো দোষ!
এল্লাইগাই শিক্ষিত লোকের চাইতে আমাগো লাহান মূর্খই ভালা!
রিক্সা চালক বকবক করতে করতে সামনের দিকে চলে গেল।
কোনমতে ছেড়া গেঞ্জি হাত দিয়ে ঢেকে অফিসে এলাম।
সন্ধ্যায় আবার চৈতালীর ফোন এলো! তারাতারি ডাটা অন করলাম! সাথে সাথে মেসেঞ্জারে কল!
চৈতালী খিল খিল করে হাসছে!
বাবু শুনবি আজ কি হয়েছে?
শশাঙ্ক আমাকে গাড়িতে করে বেড়াতে নিয়ে গেল লালবাগে! স্টিয়ারিং এ হাত রাখতেই ওর হাত আমার হাতের স্পর্শ পেল! ও তখন মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালো!
খানিক বাদে আমার মাথা টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেল! পিঠে হাত বুলিয়ে দিল!
আমার শরীরে যেন শিহরণ জেগে উঠলো!
মনে হলো মিউ মিউ করে ডাকি।
মিউ মিউ করে ডাকার কি হলো?

ঐ যে বিড়াল যেমন আদর পেলে চোখ বন্ধ করে মিউ মিউ করে ডাকে আমার ঠিক সেরকম ঠেকছিল তখন।
বাবু দাড়া দেখি সুভাষ দা মেসেজ করছেন
দেখি তিনি কি লিখেছেন।
ব্যাস!১৭ ঘন্টা চৈতালীর কোন খবর নেই।
পরদিন দুপুরে হঠাৎ চৈতালী ফোন করে বললো
কি রে হতচ্ছাড়া কি করছিস?
চ্যাটিং করছিস বুঝি?
সুন্দরী মেয়ে পেলি?
পটা! ভাল করে পটা!
আমি বললাম আমার সে যোগ্যতা নেই।
এই মিথ্যা বলবিনা খবরদার!
কে বললো তুই মেয়ে পটাতে পারিস না?
আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে?
আমি কিছু বুঝিনা? জোচ্চোর!
তোমাকে তো পটাতে পারিনি বলো?
হুমম আমি জানি তুই অভিনয় করতে জানিস না!
জানিস বাবু! গত পরশু রাতে স্বপ্ন দেখলাম!
স্কয়ার ফিল্ডে তুই আর আমি দুজন হাত ধরে হাটছি! দারুণ কুয়াশা চারিদিকে! দূরের মানুষকে দেখা যাচ্ছে না! হাটছি আর হাটছি!
তারপর?
তারপর আবার কিরে শয়তান?
তোকে নিয়ে শোবার স্বপ্ন দেখবো ভাবছিস?
না না তা হবে কেন?
এটুকুই দেখেছি স্বপ্ন, না ভাঙলে হয়ত চুমু টুমু খেতে পারতি।
তোর তো সে মুরোদ ও নেই পোড়া কপাল,
তুই জলে ডুবে মর গা।
শশাঙ্ক আমাকে কত ভালবাসে! বুকে জড়িয়ে রাখে অনেক্ষণ,চোখের জল মুছে দেয় রুমাল দিয়ে।
বেশ ভাল লাগলো তুমি সুখী হয়েছো।
এই বদমাশ, তুই কি মনে করিস তোর জন্যে পথে বসে থাকবো? আমি এতই সস্তা?
আমার মত মেয়ে তুই ত্রিভূবনে খুঁজে পাবি না।
চৈতালী এখনও মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে।
কল লিস্টে ওর নাম দেখলেই বুকে সুঁই ফোটে।
কি যেন হারানোর নিদারুণ অনুভূতি বুকে বিধে।
ইদানিং ইংরেজি কবিতা লেখা শুরু করেছে।
খোস মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিকে ওদিক,
নানা গল্প করে।
রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ওর মুখটা ভেসে ওঠে,জানালা দিয়ে আকাশ ভরা জোছনার দিকে তাকিয়ে এক নিমিষে ১৬ মাসের স্মৃতিগুলো রিভিউ করি। চাপা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলি..
আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
তুমি সুখে থেকো চৈতালী।
-সমাপ্ত-