অনেক অনেক দিন আগের কথা, কোন এক জঙ্গলে বাস করতো এক সিংহ, সিংহটি যেমন ছিল বদমেজাজির তেমনি ছিল অত্যাচারী, বোনের সব নিরীহ পশুদের কে কারণে-অকারণে ধরে ধরে খেত।
কাল ক্রমে অত্যাচারী সিংহটি একদিন বয়সের ভারে ন্যূয়ে পড়ল, আগের মত তার গায়ে শক্তি নেই। সুতরাং বোনের অন্য সব পশুরা আগের মতো সিংহটিকে ভয় পায় না, এমনকি সিংহটি তার ধারের কাছে অনেক শিকার পেয়েও যথেষ্ট শক্তির সমার্থক না থাকার কারণে ঐসব পশুদেরকে সিংহটি আর শিকার করতে না পেরে, তাকে প্রায় অর্দ্ধহারে অনাহারে থাকতে হতো।
এমনিভাবে অর্ধহারে অনাহারে থাকতে থাকতে থাকতে অত্যাচারী সিংহটি আরো দুর্বল হয়ে পড়ল, হঠাৎ চৈত্র মাসের প্রচন্ড খরতাপে একদিন দুপুরে সিংহটি তীব্র ক্ষুধার তাড়না আর জল পিপাসায় জঙ্গলের মধ্যে কোথাও জল ও খাদ্য না পেয়ে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটি বড় গাছের নিচে হা করে ঘুমিয়ে পড়ল।
এদিকে ঐ গাছটির একটি গর্তে বাস করত একটি বিষধর অজগর, প্রচন্ড চৈত্রের দবাদহে অজগরটি শীতল জায়গার সন্ধানে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সিংহটি গাছের সেই গর্ত ঘেঁষে ঘুমানোর কারণে অজগরটি বেরোতে পারছিল না।
অজগরটি অনেক চেষ্টা করে সুকৌশলে বেরিয়ে সিংহটির পিঠের উপর দিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে সিংহটির জিব্বায় অজগরটি শরীর স্পর্শ করবার সঙ্গে সঙ্গে শীতল অনুভব করায় অজগরটি সিংহের মুখের মধ্যে ঢুকে গোল হয়ে জিব্বার পরে ফণা তুলে মনের সুখে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো, সিংহটি তখন তার জিব্বার পরেভারী কোন কিছুর অনুভব করতেই তার ঘুম ভেঙে গেল, সাথে সাথে সাপের ফোঁস ফোঁস শব্দের সিংহটি ভয় পেয়ে গেল, সিংহটি এবার বুঝতে পারলো তা জিব্বার উপরে বিষধর একটি সাপ মনের আনন্দে বসে আছে। ভয়ে সিংহটি কোনরকম নড়াচড়া না করে কিছুক্ষণ ঘুমানোর ভান করে পড়ে রইল।
এর কিছুক্ষণ পরে ঐ পথে যাচ্ছিল একটি খরগোশ, সিংহটি তখন কৌশলে ইশারা দিয়ে খরগোশ কে তার কাছে ডাকলো এবং তার বিপদ হতে উদ্ধার করার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করলো। সঙ্গে সঙ্গে খরগোশটি বনের সকল পশুদের খবর দিল, বনের রাজা সিংহটিকে বিপদমুক্ত করতে ছুটে এলো বনের সকল পশুরা, কিন্তু কোন বুদ্ধি খুঁজে পেল না তারা, চালাক খরগোশের মাথায় তখন একটা বুদ্ধি এলো, খরগোশ সকল পশুদের ডেকে তার বুদ্ধির কথা জানালো, এবার পশুরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। পশুরা সবাই একযোগে বলল ভাই খরগোশ তুমি তোমার বুদ্ধিমত কাজ কর, খরগোশ বললো হ্যাঁ ভাই তাই করবো, তবে আমার একটা শর্ত আছে, তোমার আবার কি শর্ত,হা আছে একটা শর্ত আছে?
শর্তটা হলো আমার বৃদ্ধ বাবা আজও বেঁচে আছে, তার বয়স ১১০ বছর, হাঁটতে চলতে পারেনা গায়ে কোন লোম নেই মৃত প্রায়! তার আছে অনেক অনেক বুদ্ধি আমার বাবাকে আমি অত্যাচারীর সিংহটির ভয়ে গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটি গর্তে লুকিয়ে রেখেছি, তোমরা যদি কথা দাও অত্যাচারী সিংহটি কখনো আমার পরিবারের কাউকে এমনকি আমার বাবাকে আক্রমণ করবে না কখনো, তাহলে আমি এক্ষুনি আমার বাবাকে এনে সিংহটির বিপদমুক্ত করে দেব।
যে কাজ সেই কথা বনের সব পশুরা খরগোশকে কথা দিল, সঙ্গে সঙ্গে খরগোশ তার বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এলো সেখানে, বৃদ্ধ খরগোশ বিড়াল ও বানরকে ডেকে আনতে বলল, এবং বিড়ালকে একটি ইঁদুর ধরে আনতে বলল বিড়াল সঙ্গে সঙ্গে একটি ইঁদুর ধরে নিয়ে এলো, বৃদ্ধ খরগোশ ইঁদুরটি নিয়ে বানরের কাছে গিয়ে বলল তুমি ইঁদুরটি নিয়ে গাছের মগডালে উঠবে, বানরটি এক লাফে ইঁদুরটি নিয়ে গাছের মগডালে উঠে পড়ল, বৃদ্ধ খরগোশটি বলল ইঁদুরটি সিংহটির মাথা বরাবর লক্ষ্য করে ছেড়ে দেবে, বানরটি বৃদ্ধ খরগোশের কথামতো তাই করল, ইঁদুরটি ফেলে দিতেই বিষধর অজগরটি ইঁদুর দেখে আস্তে আস্তে সিংহের মুখ থেকে বেরিয়ে ইঁদুরটি শিকার করেই বিষধর অজগরটি আবার সেই গাছের গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল।।
অত্যাচারী সিংহ ও জঙ্গলের সব পশুরা বৃদ্ধ খরগোশকে প্রশংসা করতে করতে ফিরে গেল যার যার গন্তব্যে।।
সারকথাঃ দুর্বলকে যেমন অত্যাচার করা ঠিক নয় ,তেমনি ক্ষুদ্র বলে কাউকে অবহেলা করাও ঠিক নয়।