আশরাফুল ইসলাম
বিশ্বময় সমাজের সর্বগ্রাসী ব্যাধিগুলোর অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মাদক। মাদকের ঘূর্ণিঝড়ে প্রতিনিয়ত ঝড়ে যাচ্ছে কত অফুরন্ত সম্ভাবনাময় তরুণের জীবন, সমূলে বিনষ্ট হচ্ছে কত পরিবার!
মাদকের অশান্তি আর উম্মাদনায় পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট স্তরে নেমে যায় সৃষ্টির সর্বসম্মানিত জীব মানুষ।
আমাদের আধুনিক সমাজের অন্যতম ব্যর্থতা হলো, গোড়া বাদ দিয়ে ডালপালা নিয়ে আমরা চিন্তা করি। সমস্যার উৎস থেকে মুখ ফিরিয়ে নালা নিয়ে পড়ে থাকি।
অসৎ সঙ্গ, বেকারত্ব, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেও মাদকের নেশাময় জগতে পা দিচ্ছে অনেক বন্ধু।
পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৯০ ও ৯১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক মদ ও জুয়াসহ যাবতীয় নেশাকে শয়তানের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছেন।
রাসুল (সা.) একাধিক হাদীসে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম। তিনি আরও যোগ করেছেন, যা বেশি খেলে নেশা হয় তার সামান্য অংশও হারাম। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রিয়নবী (সা.) এ নীতিবাক্যের মাধ্যমে আদি ও আধুনিক যে কোনো ধরনের বস্তু চাই তা যে কোনো চটকদার নাম কিংবা বহুজাতিক কোম্পানির ব্র্যান্ড হোক, কাগজে মোড়ানো পোটলা গুড়া কিংবা রঙীন সুদৃশ্য বাক্সে ঢাকা হোক, ইনজেকশনের মাধ্যমে কিংবা ধোঁয়া উড়িয়ে অথবা যে কোনোভাবে তা গ্রহণ করা হোক- এর সবগুলোই হারাম।
(হযরত উমর (রা.) বলেছেন, যা খেলে বোধশক্তি ঢাকা পড়ে সেটিই মদ ও মাদক। ইমাম ইবনে হাজার বলেছেন, যে কোনো তরল কিংবা গুড়ো পদার্থ যা খেলে নেশা হয়- সবগুলো স্পষ্ট হারাম।)
বুখারী ও মুসলিমসহ সবগুলো হাদিসের গ্রন্থে মদ ও মাদক সম্পর্কিত অনেকগুলো স্পষ্ট ও সহীহ হাদিস রয়েছে, যেগুলোর মূল বক্তব্য হচ্ছে- কোনো অবস্থাতেই কোনো ধরনের মাদক গ্রহণ বৈধ হতে পারে না। এতে কোনো অস্পষ্টতা কিংবা ব্যাখ্যার অবকাশ নেই।
আরব জাহিলিয়াত যুগের মদ থেকে নিয়ে আধুনিক জগতের ইয়াবা, গাঁজা, শিশা পর্যন্ত সব নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যাপারে এই একটিই হুকুম।
চার মাযহাবের সম্মানিত সব ইমাম ও ফকীহ, হাদিস বিশারদ ও মুফাসসিরগণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত।
কারণ এসব তো নিছক কিছুক্ষণের জন্য বেহুশ হয়ে পড়ে থাকা নয়, বরং ধীরে ধীরে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পঁচন ধরায়, মানসিক শক্তিকে সমূলে বিনাশ করে দেয়, এতে জীবন হয়ে ওঠে দূর্বিষহ, পরিবার ও স্বজনকে তখন শত্রুর মত মনে হয়।
বুখারী শরিফের ২২৯৫
মুসলিম শরিফের ৮৬
নং হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) এর বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, মদখোর যখন তা সেবন করে তখন সে মুমিন থাকে না। অন্য হাদীসে ইবনে উমর (রা.) এর বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি মদপান করলো সে আখেরাতের জান্নাতী মদের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলো।
আবু দাঊদ শরীফের ৩১৮৯
নং হাদীসে রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পাকের লানত (অভিশাপ) ওই সব লোকের ওপর অনিবার্য, যারা মদপান করে কিংবা তা বহন করে অথবা তা বিক্রি করে এবং এভাবে তিনি মদ তৈরি থেকে নিয়ে পান করা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের ব্যক্তিদের জন্য অভিশাপ দিয়েছেন।
নাসাঈ শরীফের ৫৫৭০
হাদীসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মদপান করলো আল্লাহ পাক তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করবেন না। এ সবগুলো হাদীসকে আল্লামা আলবানীসহ অন্যান্য হাদীস গবেষকগণ সহীহ সাব্যস্ত করেছেন।
ইসলামী শরিয়তে এজন্য সামান্য পরিমাণ মাদক সেবনের দায়ে ক্ষেত্রভেদে চল্লিশ কিংবা আশিটি বেত্রাঘাতের কথা বলা হয়েছে। যাতে তারা বিরত থাকে এবং অন্যরাও সতর্ক হয়।
প্রকৃত শান্তি এবং অন্তরের প্রশান্তি মানুষের একান্ত চাওয়া। আর এসব আল্লাহ পাক রেখেছেন তার ইবাদত পালনের মধ্যে, বিত্ত বৈভবের জীবনে নয়। সামান্য গরিব মানুষও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ঠিকভাবে আদায় করে, হালালভাবে চললে মনের ভেতর যে আনন্দ ও প্রশান্তি পেতে পারে, সুরম্য দালানে বসে নেশার জগতে ডুবে থাকলে এর ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এ জীবনের মূল্য যে বোঝেনি সে হোক না যত বড় ব্যক্তিত্ব, কোথাও সে পরমানন্দ খুঁজে পাবে না।
এ সত্যটুকু ভুলে গিয়ে আজ মানুষ শান্তি ও স্বস্তির সন্ধানে ছুটছে মাদকের দিকে, এ যেন পশ্চিমের উদ্দেশে পূর্বদিকে রওয়ানা হওয়া উদভ্রান্ত পথিকের প্রতিচ্ছবি।
আসুন, আমরা নিজেদের পরিবারের ভেতর মায়া ও ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তুলি, সন্তান কিংবা ছোট ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে তাকে জীবনের মূল্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন করি, পাড়া মহল্লার অসৎ বন্ধুদের সঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে চলি, জীবনের যেটুকু অবসর সময় হাতে আসুক বসে না থেকে দেশ ও সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজে ব্যস্ত থাকি, আপনি তখন অনুভব করবেন জীবন সত্যিই আনন্দময়।
Everyone must come forward to save this generation from destructive drugs. It is important to follow your religion! Must be well-educated in the formation of a civilized nation by avoiding bad company! A real Muslim can never be addicted to drugs! Let people of other religions follow Muslims and see their ideals and civilization! Remember that Islam is a religion of peace!