দেবী
(ভারত)
মৌমিতা ওরফে রুনি অফিস যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল। ওর মা ওরফে বন্দনাদেবী খাবারটা টেবিলের ওপর রেখে মেয়েকে বলল-
-কিরে বয়স তো অনেক হলো বিয়েটা কবে করবি? দেখতে দেখতে তো তুই ২৮ পেরিয়ে গেলি।
এবার তো একটু বিয়ের কথা ভাব। কোন ছেলেকে কি কি তোর মনে ধরে না ? ভালোবাসা টালোবাসা করেছিস বলে তো মনে হয় না!
- মা তুমি কি বিয়ে ছাড়া আর কোন কিছু নিয়ে কথা বলতে পারো না।
আমার বিয়ে নিয়ে তোমাদের এত মাথাব্যথা কিসের?
-তার মানে কি তুই আমাদের একটা কথাও শুনবি না? তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোকে বিয়ে না দিয়ে এইভাবে যদি ঘরে বসিয়ে রাখি , তাহলে লোকে কি বলবে? তোর মতো বয়সে আমার বাচ্চা হয়ে গিয়েছিল মানে তুই হাটতেও শিখে গিয়েছিলি আর তুই তো একটা ছেলেকেও পটাতে পারলিনা! আমি কি কোনদিন শাশুড়ি হতে পারব না ?হব না শাশুড়ি আমি..
- সঠিক সময় হলেই বিয়েটাও করে নেব। তুমি এত বেকার চিন্তা কেন করো বলতো ।
সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করবে না একদম বলে দিলাম।
-জানিস তো আমি এখন থেকে ভেবে রেখেছি তোর যখন বিয়ে দেবো আমি আমার জামাইকে শিয়ালডাঙ্গার মোড় থেকে ঘোড়ায় করে নিয়ে আসবো! তারপর বাড়ির সামনে নগদ বসাবো !আরো কত কিছু ভেবে রেখেছি..
- বাঃ খুব ভালো.. আর কি কি ভেবে রেখেছো..

-এই যেমন পাশের বাড়ির বৌদি তার জামাইকে ঘরজামাই করে রেখেছে তেমনি তোরাও থাকবি আমার বাড়িতে…তোরা তোদের মত করে সংসার করবি..
-(কথা থামিয়ে দিয়ে) কি কি কি বললে তুমি? তুমি ঘরজামাই আনার মতলব করছ তাও আবার পাশের বাড়ির জামাইবাবুর মতো! ঐ রকম মেরুদন্ডহীন ছেলেকে না আমি বিয়েই করবো না !
-এইভাবে কেন বলছিস তুই ।নিজের শ্বাশুড়ীকে কত যত্ন করে জানিস।
শাশুড়ি গালাগালি দিলেও এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দেয়, শাশুড়ির হাত পা টিপে দেয় , শাশুড়ির কাপড় কেচে দেয় , শাশুড়ি যা বলে তাই করে দেয়…
-উফ! তুমি এবার থামবে ,অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করছি।আমি এই বলে দিলাম, ঐরকম কোমরভাঙ্গা, মেরুদণ্ডহীন ছেলেকে আমি কোনদিনও বিয়ে করব না। যে আমার বাবার পয়সা দেখে ,আমার চাকরি দেখে আমাকে বিয়ে করতে আসবে তাকে আমি প্রথমেই রিজেক্ট করে। দেব।
-না ওরকম বলতে নেই আমি তোর জন্য ভালো ছেলে খুঁজে আনবো। বেশ আমার বাড়িতে থাকবে , তোর বাবাকে আর আমাকে বুড়ো বয়সে দেখবে। দুটো নাতি-নাতনি হবে, আমি তাদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো…
-মা তুমি অতিরিক্ত ভাবছো আমাকে নিয়ে এবার একটু ভাবাটা বন্ধ করবে। আমি চললাম অফিসে।
অফিসে যাবার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে ফোন লাগালো আকাশকে…
- বলুন ম্যাডাম, কি খবর আজ সকাল সকাল ফোন?
-মর্নিং, তোর সাথে কথা আছে?আমি আর মাকে সামলাতে পারছিনা।বিয়ে করবি কি করবি না বল?
-করব করব, তোকেই বিয়ে করব। দরকার হলে তোকে তোর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করব!
-এই একই ডায়ালগ অনেকবার শুনেছি আমি। ভালো কথা বলছি তাড়াতাড়ি বিয়েটা কর। যখন মা ঘরজামাই নিয়ে আসবে তখন কিছুই করতে পারবি না!
-এবার বিয়েটা সত্যি সত্যি করে নেব রে আর কিছুদিন সময় দে।
-দশটা বছর তো তোকেই দিয়ে দিলাম। সামনের দশ দিনের মধ্যে বিয়ে না করলে আমি কিন্তু ধর্নায় বসবো আমার দশ বছর ফিরিয়ে দিতে হবে !
-আমি যা চাকরি করছি তাতে তোকে ভালো রাখতে কোন অসুবিধা হবে না।
তবে এইভাবে আমার স্বপ্নটাকে মরতে দেব না।তুই দেখে নিস আমি একদিন সিনেমা বানাবোই বানাবো। স্ক্রিপ্ট রেডি আছে কিন্তু..
-আরে ঠিক আছে ।আমরা দুজনে মিলে সব সামলে নেব কিন্তু আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। ছেলেদেরকেই যে মেয়েদের দায়িত্ব নিতে হবে তেমন কথা কোথায় লেখা আছে দেখা তো আমাকে ।
-তাহলে চল
“এই শূন্যে ঘর বাঁধি
মুক্ত হৃদয়ে থাকুক ভালোবাসা।”