সাবরিনা ইসরাত জুই
শীত মানে শরির ও ত্বকেকে বাড়তি যত্ন,তাই তো শীত কথাটি আসলেই আগে মনে হয় শুষ্কতা আর রুক্ষতা। শীতের এই শুষ্কতা ছোট বড় সকলেই সমস্যা।
আর কিভাবে শীতের সময় ত্বকের শুষ্কতা দূর করা যায়,এই ভাবনাতে আমরা সবসময় চিন্তিত থাকি। কারন শুষ্কতা ত্বক নিয়ে তো বাইরে চলাচল করা যায় না, এটা অনেকটা লজ্জাজনক। তাই তো সজাগ খেয়াল রাখতে হয় যাতে বাইরে যাওয়ার সময় কোন অবস্থাই চেহারায় শুষ্কতা ও রুক্ষতা ফুটে না থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল ভাব দেখায় । সুতরাং আমাদের এমন কিছু ব্যবহার করতে হয় যা দেওয়ার ফলে ত্বকে কোন শুষ্কতা প্রকাশ না পায়। কিন্তু আমরা যে সব প্রসাধনী ব্যবহার করি সেটার সাধারন অবস্থায় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তার জন্যেও টেনশন করতে হয়।
তাহলে এমন কিছু প্রয়োজন যা ত্বকে ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তেমন টেনশন থাকবে না, আবার শীতে ত্বক থাকবে মসৃন, উজ্জ্বল ও সুন্দর।
আমাদের আজকের সৌন্দর্য্য কথনে তেমনি কিছু সম্পর্কে আলোচনা করব তাহলে চলুন যেনে নেই সে সকল উপাদানের কথা যে সকল উপাদান ঘরে পাওয়া যায়।
যা ব্যবহারে ত্বকে শুষ্কতা দূর হবে এবং ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই ত্বকের যত্নে ঘরে তৈরি ফেইস প্যাক বা মাস্ক।
★ শীতে ত্বকের যত্নে হলুদের মাস্ক
হলুদ তো আমাদের সকলের কাছে সুপরিচিত। আর হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু এই হলুদ শুধু যে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার হয় তা কিন্তু নয়। এই হলুদ ত্বকের যত্নে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি উপাদান। ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে, অসম গায়ের রং স্বাভাবিক করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে হলুদের কোন তুলনা হয় না। এখন দেখে নিবো হলুদের মাস্ক কিভাবে বানাতে হবে।
হলুদের মাস্ক তৈরি :-
তিন টেবিল-চামচ লেবুর রসের
এক টেবিল-চামচ হলুদগুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে।
এরপর এই মিশ্রণ ত্বকে মেখে ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে আলতো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

★ শীতে ত্বকের যত্নে টমেটো ও লেবুর মাস্ক
আমাদের দেশে শীত মৌসুমে খুবই সহজলভ্য একটি সবজি টমেটো। আর ত্বকের পোড়াদাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলতে টমেটো খুবই কার্যকরি ও উপকারী।
টমেটো ও লেবুর মাস্ক বানাতে একটি টমেটো নিয়ে ভালোভাবে থেঁতলে নিতে হবে এবার এর সাথে দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি গলায় এবং মুখে মেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। কিছুটা শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
লেবু প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। যা ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই মাস্ক ব্যবহারে রোদে পোড়া ভাব দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলবে।
★ শীতে ত্বকের যত্নে কলা ও দইয়ের প্যাক
কলা পছন্দ করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর আর কলার অনেক গুনের কথা বহুবিধ।
আর রূপচর্চায় তো কলার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। কলা ও দইয়ের প্যাক তৈরিতে প্রথমে একটি পাকা কলা চটকে তার সাথে দুই টেবিল-চামচ টক দই এবং এক টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিটি উপাদান খুব ভালোভাবে মিশে যায়।
প্যাক তৈরি হয়ে গেলে মুখ এবং গলায় পুরু করে মিশ্রণটি মেখে অপেক্ষা করতে হবে। কিছুটা শুকিয়ে গেলে ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। কোমল ত্বকের জন্য সপ্তাহে দুবার এই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আশা করি এই প্যাকে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন।

★ শীতে ত্বকের যত্নে কাঠবাদামের মাস্ক
বাদামের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ থাকে। আর কাঠবাদামের উপকারিতা তো অনেক বেশি। বাদাম ত্বকের ক্ষেত্রে খুব উপকারি।
কাঠবাদামের মাস্ক তৈরি করতে হলে চার,পাঁচটি কাঠবাদাম সারা রাত দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে কাঠ বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দুধ এবং বাদামের পেস্ট তৈরি করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে ওই পেস্ট মুখে লাগিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
এই বাদামের মাস্ক আপনার ভালো নাইট ক্রিম হিসেবে কাজ করবে, যার ফলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে বাইরের উজ্জ্বলতা ভাব ফুটিয়ে তুলবে। তাছাড়া শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
★ শীতে ত্বকের যত্নে ওটমিল মাস্ক
ত্বকে জমে থাকা ময়লা এবং মৃত কোষের ভাজ তুলতে নিয়ম করে এই মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। স্ক্রাবারের সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করতে এই মাস্ক অনেক সাহায্য করে থাকে। এতে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং ত্বকে বলিরেখা পড়ার সম্ভাবনাও কম হয়।
ওটমিল মাস্ক তৈরি করতে প্রথমে চার টেবিল-চামচ ওটমিলের সাথে চারটি কাঠবাদাম গুঁড়া করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সামাণ্য দুধ এবং এক টেবিল-চামচ মধু দিয়ে ওটমিল ও কাঠবাদামের মিশ্রণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। মুখের ত্বকে এই মিশ্রণ লাগিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে আলতো হাতে মালিশ করতে হবে। এই মাস্ক ব্যবহারে ত্বকে জমে থাকা ময়লা এবং মৃতকোষ পরিষ্কার হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
অনাধি কাল থেকে সকল নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষেরই সুন্দর ত্বক কাম্য। সুতরাং এই ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি। আর তাই প্রতিদিন বা সপ্তাহে নিয়ম করে ত্বকের যত্নে কিছুটা সময় রাখা উচিত। আর এই শীতের মৌসুমে মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই যে কোনো প্যাক ব্যবহার বা ভালো মানের প্রসাধনী পরিমান মত ত্বকে লাগাতে হবে। না হলে ত্বক শুষ্ক, মলিন ও রুক্ষ হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে ত্বকের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যাবে।
তাহলে আজ এই পর্যন্ত আমাদের পরবর্তি সৌন্দর্য্য কথনে চোখ রাখুন সাহিত্য পত্রিকা বাতায়ন24