সম্পাদনায় : মেহজাব আহমেদ প্রবাল
সে অনেক অনেক বছর আগে এক দেশে এক সুন্দর রাজকন্যা বাস করত। তার ছিল খুব লম্বা আর লাল চুল। আর সে গোলাপ ফুল এত পছন্দ করত যে সবাই তাকে রাজকুমারী রোজ বলে ডাকত।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রাজকুমারী তার ঘরের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াত। এসময় সে হাততালি দিলেই একটা সোনালি পাখি এসে তার কাঁধের ওপর বসত। যখনই পাখিটা তার কাঁধে এসে বসত তক্ষনই রাজকুমারীর চুল লাল আলোয় আরো ঝলমল করে উঠত।
এরপর যখন পাখিটা অদ্ভুত সুরে গান গাইতে শুরু করত রাজকুমারীও তার সঙ্গে গলা মিলাত। তাদের গানের সুরে গোটা রাজ্যের সবাই ঘুমিয়ে পড়ত। তারপর সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখে পরদিন সকালে তাদের ঘুম ভাঙ্গত।
এভাবে অনেক বছর কেটে গেল। একদিন একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটল। এক হিংসুটে ডাইনি রাজকুমারী রোজের কথা জানতে পারে তার খুব হিংসা হল। তখন সে মন্ত্র পড়ে এমন অভিশাপ দিল যাতে রাজকুমারীর চুলের রঙ তাৎক্ষনিক ভাবে আলকাতরার মত কালো হয়ে যায়। ওইদিন সন্ধ্যায়ও রাজকুমারী আগের মত ব্যালকনিতে গিয়ে হাততালি দিল।
কিন্তু যখন সোনালি পাখি এসে তার কাঁধে বসল তার চুল আলকাতরার মত কাল হয়ে গেল। সোনালি পাখি আর রাজকুমারী আগের মতোই একসঙ্গে গান গাইল। রাজ্যের সবাই ঘুমিয়েও পড়ল। কিন্তু সারা রাত সবাই শুধু দুঃস্বপ্নই দেখল। পরদিন,অনেক কষ্টের সঙ্গে রাজকুমারী পাখির কাছে জানতে চাইল,সোনালি পাখি আমাকে বল, কীভাবে আমি আবার সবার স্বপ্ন সুন্দর করতে পারবো?
পাখি উত্তর দিল,তোমার চুলে গোলাপের পানি দাও। পাখির এ পরামর্শে রাজকুমারী অবাক হল। কিন্তু কিছু বলল না। এরপর রাজকুমারী একটা পাত্রে পানি ভরে তার মধ্যে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিল। তারপর সে তার চুল সেই পানিতে ভেজাল। অবাক ব্যাপার, তখনই তার চুল আবার লাল হয়ে গেল।
ওইদিন সন্ধ্যায় যখন পাখিটা এসে আবার তার কাঁধে বসল তার চুল আগের মত লাল আলোয় ঝলমল করে ওঠল। এরপর সোনালি পাখি আর তার গানের সুরে রাজ্যের সবাই ঘুমিয়ে আগের মতই সুন্দর সুন্দর সব স্বপ্ন দেখল।
দুষ্টু ডাইনি তার অভিশাপ এভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভীষন ভাবে রেগে গেল। সে আবারও রাজকন্যার চুল আলকাতরার মত কাল হয়ে যাবার অভিশাপ দিল। এবার ডাইনিটা রাজ্যের যত বাগানে গোলাপ ফুল ছিল সব ছিড়ে ফেলল।
ভীষন রাগের সঙ্গে সে বলল, দেখি, এবার কেমন করে আমার অভিশাপ তুমি কাটাতে পারো। আবারও রাজকুমারী দুঃখী হল। তাই সে আগের মতোই পাখির কাছে জানতে চাইল কিভাবে মানুষের স্বপ্ন সুন্দর উপায়। পাখিও আগের মত চুলে গোলাপের পানি দিতে বলল।
রাজকুমারী আরো দুঃখী হয়ে বলল,আমি কিভাবে এখন গোলাপ ফুল খুঁজে পাবো? সোনালি পাখি একই উত্তর দিয়ে উড়ে চলে গেল। রাজকুমারী কি করবে বুঝতে পারল না। কষ্টে তার দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। ঠিক ওই মুহূর্তে ব্যালকনির নিচ দিয়ে এক রাজকুমার যাচ্ছিল।
তার হাতে ছিল একটা ছোট বাক্স যাতে ছিল একটা ছোট লাল চুল। সে নিচু হয়ে বসে রাজকুমারীর চোখের পানি ধরে সেই লাল চুলে লাগাল। সঙ্গে সঙ্গে সেই লাল চুল লাল গোলাপে পরিণত হল। রাজকুমার ফুলটি তুলে রাজকন্যাকে দিল। রাজকন্যা সঙ্গে সঙ্গে কান্না থামাল।
এরপর আগের মতো একটা বড় পাত্রে গোলাপের পাপড়িতে চুল ভেজাল। সঙ্গে সঙ্গে ডাইনির অভিশাপ কেটে গেল। সবাই এই ঘটনায় অবাক হয়ে গেল। রাজকুমার কোথায় এই লাল চুল পেয়েছে তা জানতে চাইলেন। তখন রাজকুমার জানাল, ছোটবেলায় তারা বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ দু’জনের চুল, দু’জনের কাছে রেখেছিল।
রাজকুমারী জানাল, একথা সত্য। এরপর সেও দেখাল ছেলেবেলায় রাখা রাজকুমারের চুল। সবাই খুশী হল। এরপর রাজকন্যা আর রাজপুত্রে বিয়ে হল। ডাইনির সব অভিশাপ কেটে যাওয়ায় ডাইনি রাগে গোলাপগুলো টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিল।
এরপরই রাজ্যের সব বাগান গোলাপে গোলাপে ভরে গেল। তারপর রাজকন্যা আগের মতোই সোনালি পাখির সঙ্গে গান করতে লাগল। আর রাজ্যের সব মানুষ সকাল পর্যন্ত সুন্দর সব স্বপ্নে বিভোর হয়ে শান্তিতে ঘুমাতে লাগল।
এমনি করে সুখে শান্তিতে পুরো রাজ্যের দিন কাটতে লাগলো।