অনেকেই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করে থাকেন বা অভিযোগ দায়ের করেন।
এরকম ক্ষেত্রে যেসকল আইনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আজ আলোচনা করা হলো-
১/ ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা অভিযোগের শাস্তির বিধান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।
২/ দণ্ডবিধির ২০৯ ধারামতে, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
৩/ দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রয়েছে।
৪/দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪- এই আইনের ধারা ২৮ গ (১) এ বলা হয়েছে মিথ্যা জেনে বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন ব্যক্তি ভিত্তিহীন কোন তথ্য প্রদান করে এবং যে তথ্যের বিত্তিতে কোন তদন্ত বা বিচার কার্য পরিচালনার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন বলে গণ্য হবে। উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ (দুই) বছর বা অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৫/ শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারা- কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন মামলার কার্যক্রমে কোন আদালতে কোন শিশুর সম্পর্কে যদি এমন কোন তথ্য প্রকাশ করেন যা মিথ্যা, বিরক্তিকর বা তুচ্ছ প্রকৃতির তাহলে আদালত প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং কারন দর্শানো সাপেক্ষে কারণ লিপিবদ্ধ করে যার বিপক্ষে উক্ত তথ্য প্রদান করা হয়েছে তাকে ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোন পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করার জন্য মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীর প্রতি নির্দেশ প্রদান করতে এবং অনাদায়ে অনধিক ৬ (ছয়) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবে।
৬/ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এই আইনের ১৭ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অথবা করান, তাহলে অভিযোগকারী অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
৭/ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২,ধারা ৬।
৮/পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সালের ১৩ (১) ধারা: সর্বোচ্চ ২(দুই) বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।
৯/এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২, ধারা ৮: সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড
১০/ পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, ধারা ৩২: অনধিক ১ (এক) বছর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড।
১১/ যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮, ধারা ৬: অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।
লেখক :
অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগ্যান,
ঢাকা।