তমা মজুমদার
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে মৈত্রী, শহরে বেশ নাম ডাক তার পরিবারের|
তার বাবা বড়ো সাধ করে মৈত্রীর বিয়ে দিয়েছিলো উচ্চশিক্ষিত পরিবারের একমাত্র ডাক্তার ছেলের সাথে|
বংশ মর্যাদা বলে কথা !! কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি মৈত্রীর কলেজ পড়ুয়া সাধারণ ছেলের সাথে প্রেমটাকে|
মৈত্রীকে ও হারমানতে হলো বাবার মান সম্মান রক্ষার খাতিরে | নব্বই শতাংশ মেয়েদের ই যা করতে হয়|
আসলে পরিবারের সম্মানটিকিয়ে রাখা যে মেয়েদের ই দায়, ছেলেদের সেই ব্যাপারে তেমনটা দায় নেই|
বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলে আকাশ বুঝতে পেরেছিলো মৈত্রীর অসহায়তা,কারণ চারটা টিউশনীর উপরে সংসার চালিয়ে সে জীবনের বাস্তবতাকে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে শিখেছে,ব্যংক ম্যানেজার মৃন্ময় চৌধুরীর মেয়েকে যে দুবেলা ভালো করে আহার ও জোটাতে পারবেনা সেটা আকাশের ভালো করে জানা ছিলো|
তাই মৈত্রীকে একবারও বিয়ের জন্য জোর করেনি সে|
বরং বলেছিলো – “বিয়েটাই জীবনের শেষ কথা নয় মৌ.. হাজার বিয়ে দেখেছি এই জীবনে,দেখেছি তাঁদের ভাঙ্গন ও ,আসলে অনেক সময় দুটো মানুষ বিয়ে করে কাছা কাছি থাকে ঠিকই কিন্তু তাঁদের ভালোবাসাটা আর থাকেনা, তুমি আমি একসাথে থাকবোনা তাতে কি? কিন্তু ভালোবাসায় থাকবো আজন্ম “|
নিজের প্রেমের মৃত্যু ঘটিয়ে সে দিন মৈত্রী সাতপাকে বাঁধা পড়েছিল পরকীয়ায় আসক্ত ডাক্তার বরের সাথে|
নিজের কপাল ভাঙ্গনের অনুভূতিটা হতে বেশিদিন সময় লাগেনি মৈত্রীর, তবুও অদৃষ্টের লেখন ভেবে বেশ কিছু দিন ধৈর্য রেখে চলেছিল সে|
কিন্তু যখন অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়ায়, তখন একদিন বলেছিলো তার মাকে ” আমি আর পারছিনা সহ্য করতে, আমাকে বাঁচাও মা…. ” কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সে, __ ” তুই বড্ড অধৈর্যে মেয়েরে, বিয়ের পর মেয়েদের অনেক বিষয় মানিয়ে নিতে হয়, মেনেনিলেই একদিন সুখি হবি |
সব ঠিক হয়ে যাবে মেয়েদের একটু সহনশীল হতে হয়… আমাকে দেখে ও তুই শিখলিনা মৌ |মেয়েদের হাতেই দুটো পরিবারের সম্নান জড়িয়ে থাকে, সমাজে তোর বাবার একটা মান সম্মান আছে|
পাড়ার পাঁচজনের সামনে কোন মুখ নিয়ে আমরা দাঁড়াবো বলতো??
অথচ, মেয়ের সাথে কি ঘটে চলছিল সেটা একবার ও জিজ্ঞাসা না করেই মেয়েকে বুঝিয়ে ছিলো মা|
অভিমানে গায়ের আগুনের ছেঁকা গুলো দেখাতে পারেনি মৈত্রী|
চলে এসেছিলো চিরদিনের মতো বাবার ঘর থেকে মুখ ফিরিয়ে, আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল – ” মানিয়ে নেবো ঠিক মানিয়ে নেবো “|
কিন্তু সেই কথা বেশিদিন রাখতে পারেনি মৈত্রী দুই বছরের মাথায় সাদা চাদরে নিজের নিথর দেহটা নিয়ে ফেরৎ চলে এসেছিলো সে|
বাবার সম্মান রক্ষা করেছে নিজের শেষ নিঃশাসটুকু দিয়ে | মৈত্রীর পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা তার বাবার হাতে তুলে দিয়ে ছিলো কনস্টেবল আকাশ দত্ত|
সেই পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি যেন চিৎকার করে বলছে __ “আমি মানিয়ে নিয়েছি মা, মানিয়ে নিয়ে দেখ কেমন সুখে ঘুমাচ্ছি “||