সজনীর জীবনে একটাই দুঃখমাত্র, সকলে তাকে আড়ালে আবডালে হাতি, মোটি বলে ডাকে। কলেজ জীবনে, তার স্বাস্থ্য কিন্তু এমনটা ছিল না। ডাক-সাইটে ত্বন্বী, সুন্দরী ছিল সে। তার রূপের মোহে পড়ে, অমর, তার প্রেমে পড়েছিল।
এখন তো সজনীর দো’তলাতে উঠতেও খুব কষ্ট হয়। বুকটা ধড়ফড়িয়ে ওঠে। ব্লাড-প্রেশারটা আবার বেড়েছে, সঙ্গে রক্তে সুগারের মাত্রাটাও উর্ধ্বগামী। শরীরের স্থূলত্বও বেড়েছে খানিকটা। এভাবে চলতে থাকলে, কয়েক মাসের মধ্যে হার্ট-অ্যাটাক বা ডায়াবেটিস মাস্ট হবে। ল্যাবের রিপোর্টগুলো দেখে, ডাক্তারবাবুও এই কথাই বোলেছেন।
কিছুদিন হল, সজনীর ব্যবহারে, অমরও বেশ খানিকটা বিরক্ত। তাকে বেশ কয়েকবার বকাবকি করেছে, বোলেছে ”চিপস, জাঙ্ক ফুড আর কোল্ড ড্রিংকগুলো এইবার ছাড়ো তো, ওগুলো খাওয়ার জন্য কতো আর বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের মতো ন্যাকামি কোরবে। ওগুলোর জন্যই তো শরীরে, এই সব রোগজ্বালা বাঁধিয়ে বোসেছো। ওগুলো না খেলে কী, একদমও নয়? কেন শুধু শুধু নিজের বিপদ, নিজে ডেকে আনছো বলোতো?”
সজনী যে এসব ছাড়ার চেষ্টা করেনি, এমনটা নয়, বহুবার চেষ্টা করে দেখেছে। কিন্তু পারেনি, আসলে সেই কোন ছোটোবেলাকার অভ্যেস। পাছে, দেখে কেউ কিছু বলে, তাই অমর অফিস চলে গেলে, বেডরুমে লুকিয়ে লুকিয়ে খেত ওগুলো। শ্বশুরবাড়ীর কাজের মেয়ে রূপসা ব্যাগে করে, লুকিয়ে লুকিয়ে পৌঁছে দিয়ে যেত। তখনও সজনীর শাশুড়ী-মা বেঁচে ছিলেন। শ্বশুরমশাই তো বিয়ের অনেক আগেই গত হয়েছেন। শাশুড়ী মারা যাওয়ার পর, রূপসাকে আর ওসব লুকোচুরি করে আনতে হতো না।
অমর অবশ্য সবকিছুটাই জানত। কারণ ওদের প্রেম করে বিয়ে, তাই সজনীর ভালো-মন্দ’র সবটাই অমর জানে।
সজনীর বাবা একজন রিটায়ার্ড সরকারী পদস্থ আমলা। ছোটোবেলা থেকে ওর কোনো অভাবই রাখেননি। কলেজে ওঠবার পর তো আর কোনো বাঁধ বাধেনি। বাবা’র একলা মেয়ে হওয়ার সুবাদে, ও যথেষ্ট হাত-খরচ পেত। তাতেই চলতো ওই সব চটকদার, মশলাদার, খাবারের ফোয়ারা।
কলেজেই অমরের সঙ্গে আলাপ, তারপর প্রেম। সজনীর বাবা পোড় খাওয়া, বিচক্ষণ ব্যাক্তি। দরিদ্র অথচ মেধাবী অমরকে বুঝতে, তিনি বিন্দুমাত্র ভুল করেন নি। কলেজ পাশ করবার পরই, তড়িঘড়ি দু’জনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর একটা বড়-সড় কোম্পানী বানিয়ে, তার এম.ডি. বানিয়ে দিয়েছিলেন।
প্রায় সাত বছর পর সুখবরটা এল, সজনীর পেটে বাচ্চা এসেছে। সবাই খুব খুশি।
সজনীর দিনগুলো ভালোই কাটছিল। সাবধানতা নিয়ে, প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ কোরছিল সে।
সেদিন রূপসা কাজে আসেনি। ফোন করে অমরকে তা জানিয়ে, স্নানের ভেজা জামা-কাপড়গুলো রোদে মিলতে, সে দো’তলাতে গিয়েছিল। সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময়, হঠাৎ মাথা ঘুরে, গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে, অজ্ঞান হয়ে গেল। তবুও ভাগ্য ভালো যে, সেদিন অমর, রূপসা আসেনি শুনে, অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ীতে ফিরেছিল।
আই.সি.ইউ.তে শুয়ে, সজনী, অমরকে বোলল ”পটাটো-চিপসের চেয়ে বাবু’র চুমুটা খেতে খুব মিষ্টি হবে। কী বলো?”
অমর মুচকি মুচকি হাসছিল, ভাবছিল ”মাতৃত্বের ভালোবাসার কাছে, পৃথিবীর আর সব মায়া-মমতা, লালসা তুচ্ছ, নগণ্য।”