তাপস কুমার বর
খোকা তোর পরিবার থাক সুখে,
তোর বৃদ্ধা মা -বাবা আজ কোথায় যাবে?
রক্ত ঘামের সেই পরিশ্রমে,
কত স্বপ্ন দেখেছি তোকে নিয়ে।
আজ স্বপ্ন সব চোরা বালির মতো ধূলিষাৎ হয়ে;
চুরমার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
ক্ষেপা তেষ্টার খিদের জ্বালায় মরুভূমির বালুতটে।
নিথর দুপুরে খিদের জ্বালায় পেট কাঁদে,
তোদের পাতে উঠছে হয়তো,
ভালো কত খাবার ওখানে।
আমরা ছিলাম যে অবাঞ্ছিত বস্তু হয়ে,
কত ঝড় চলেছে তোদের মধ্যে,
শুধু দুটো অবাঞ্ছিত এই প্রাণীকে নিয়ে।
আজ আমাদের শেষ ঠিকানা ঠেকেছে খোকা,
অজানা এক বৃদ্ধাশ্রমে!
চোখের ধারা কেন বৃষ্টি ঝরার মতো ঝড়ে পড়ে?
নয়ন তুমি কি আমাকে বোঝাবে?
কত পরিশ্রমের সেই রক্তঝরা কালোঘামে,
ছেলে আজ বড়ো অফিসার কত বড়ো আপিসে;
কত অঢেল প্রাচুর্যের ছোঁয়া তাদের,
শুধু এই দুটো অবাঞ্ছিত প্রাণীর জন্য খরচ করতে;
গায়ে তাদের বড়োই ব্যথা লাগে।
আমাদের ব্যথা চোখের জলে ভাসা বৃদ্ধাশ্রমে,
মন তবু পড়ে থাকে,
সেই ছোট্ট খোকার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে।
আজ বড়ো হয়ে তারা মূল্যের দাম ভুলে গেছে?
নিজের সুখে দাঁড়িপাল্লায় মাপা,
নিজের বৃদ্ধা বাবা- মাকে বাড়ি ছাড়া করে।
আজ বৃদ্ধাশ্রমের কত স্মৃতি গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে;
স্বপ্ন ছিল অনেক,
শুধু শেষ জীবনে একটু ভালোবাসার স্পর্শ পাবে!
নিজের ছেলে আজ পরিচয় দিতে লজ্জা করে;
বাবা মায়ের সেই পরিচয়ে আজ বাঁচতে?
ওরা অর্থের লালসায় ললায়িত হয়ে ওঠে,
বৃদ্ধা বাবা- মা বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে শুধু কাঁদে।
তবু দেয়না অভিশাপ বৃদ্ধা বাবা- মা তাদের,
দু-হাত তুলে বারে বারে আশীর্বাদ করে।
যদি দেখতো তাদের কত দুঃখ ব্যথার সে যন্ত্রণা;
কত বেদনা সহে তারা আজ বৃদ্ধাশ্রমে থাকে।
আজ অশ্রু নয়নে কাঁদছে কত-
বৃদ্ধা বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমে!
হে নিষ্ঠুর তোমারা কি জানো?
মন্দিরের ভগবান আজ কাঁদছে,
অজানা এক বৃদ্ধাশ্রমে !