ইমরান খান রাজ
এক গ্রামে বাস করতো খুব বৃদ্ধা এক মহিলা। তার দিন কুলে কেউ ছিলনা বলে একাই বাস করতো সে৷
বাড়ির উঠোনেই কিছু মুরগি পালন করতো। আর মুরগির ডিম বিক্রি করে সে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কিন্তু হঠাৎ একদিন সকালে বুড়ি দেখতে পেলেন তার মুরগির খোপে ২টা মুরগি নেই৷
সে সারাদিন মুরগির জন্য অপেক্ষা করে সন্ধ্যা গড়ালেও মুরগি ঘরে ফেরে না।
পরে সে চিন্তা করে বুঝতে পারে যে তার মুরগি দুটো পাশের জঙ্গলের এক দুষ্টু শেয়াল চুরি করেছে।
মুরগি হারানোর কষ্টে বুড়ি কাঁদতে থাকে এবং একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই মুরগির খোপের দরজা খোলা হয় বুড়ি দেখতে পায় তাঁর মুরগি সংখ্যা মাত্র ছয়টি।
অথচ গতকাল রাতে হারানো দুটি মুরগি ছাড়াই তাঁর মুরগি সংখ্যা ছিলো আটটি। বুড়ি এবার খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।
আর সেইসাথে শেয়াল চোরের উপর খুব বিরক্ত হয় ও রেগে যায়। সে ভাবতে থাকে এভাবে প্রতিদিন দুষ্টু শেয়াল তাঁর মুরগি চুরি করলে একসময় তাঁর আর কোন মুরগি অবশিষ্ট থাকবে না।
তাই বুড়ি এবার শেয়াল চোরকে উচিৎ শিক্ষা দিতে চায়।
পরদিন রাতে বুড়ি না ঘুমিয়ে তাঁর মুরগির খোপ পাহারা দেয়। যাতে এবার দুষ্টু শেয়াল তাঁর মুরগি চুরি করতে না পারে।
বসে বসে পাহারা দিতে দিতে গভীর রাতে বুড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। আর সেই সুযোগে শেয়াল চোর আবার এসে বুড়ির আরো দুটি মুরগি চুরি করে চলে যায়।
সকালে ঘুম ভাঙার পর বুড়ি দেখে তার আরো দুটি মুরগি চুরি হয়ে গেছে। মোট দশটি মুরগি থেকে এখন আর মাত্র চারটি রয়েছে।
শখের মুরগিগুলো চুরি হওয়ায় বুড়ি খুব কষ্ট পায়। এবার বুড়ি খাওয়াদাওয়া ছেড়ে সারাদিন ভাবতে থাকে কিভাবে শেয়াল চোরকে জব্দ করা যায়।
আর কিভাবে শেয়াল চোরের হাত থেকে মুরগিগুলো রক্ষা করা যায়। অনেক ভাবার পর বুড়ির মাথায় নতুন এক বুদ্ধি আসে৷
সে ভাবে মুরগির খোপের ঠিক সামনেই একটা ফাঁদ তৈরি করবে। আর সেই ফাঁদের ভেতর একটা মুরগি রেখে দিবে৷
আর তাতেই শেয়াল চোরকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যাবে।
যেই ভাবনা সেই কাজ। বুড়ি তাঁর মুরগির খোপের সামনে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে একটি ঘরের মতো ফাঁদ তৈরি করে এবং তাঁর ভেতর টোপ হিসেবে একটি মুরগি রেখে দিয়ে ফাঁদের মুখটা খোলা রেখে আড়ালে বসে থাকে।
তারপর রাত যখন গভীর হয় তখন ঝোপের আড়াল থেকে নিঃশব্দে বের হয়ে মুরগির খোপের দিকে এগুতে থাকে শেয়াল চোর।
হঠাৎ চোখের সামনে একটা মুরগি দেখে সেটাকে ধরার জন্য নিজের অজান্তে ফাঁদের ভেতর ঢুকে পড়ে।
পাশে লুকিয়ে থাকা বুড়ি সেই সুযোগে ফাঁদের দরজা আটকে ফেলে। পরদিন সকালে শেয়াল চোরকে হাত-পা বেঁধে উত্তম-মধ্যম দিয়ে অনেক দূরের এক ঘন জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসে বুড়ি৷
সেই জঙ্গল থেকে আর ফিরে আসতে পারেনা শেয়াল চোর। অন্যদিকে বুড়ি তাঁর মুরগিগুলো নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে৷
শিক্ষা:- এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, দশদিন চুরি করলে একদিন ধরা খেতে হয়। আর সেই একদিনই হয় চোরের শেষ দিন।
তাই আমরা কেউ অন্যায় কাজ করবো না আর কাউনে অন্যায় কিছু করতেও দেবো না।
-সমাপ্ত-