দেবী (ভারত)
ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে ভাইব্রেট করে যাচ্ছে এক নাগারে।
একটা সময় কল আসা বন্ধ হয়ে গেল। কোয়েনা ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
ফোনটা অন করে দেখলো ১১টা মিসডকল। কল ব্যাক করল কোয়েনা।
–কোথায় ছিলিলে বাঁড়া… ফোন তুলতে এত টাইম নিস কেন? শালি তোর জন্য কোন শালা এত ওয়েট করে থাকবে রে?’
—আমি পাইনি বাথরুমে ছিলাম..
— সে শুনবে কি করে শালি সারাদিন জানোয়ারদের সাথে বেশ্যাগিরি করলে শুনতে পাবি কি করে?শোন ভালো কথা বলছি কাল দুপুর তিনটার সময় সুপরিয়া পাড়ায় নতুন ফ্লাটের সামনে চলে আসবি।
নগদ ১০ হাজার টাকা আনতে ভুলবি না শালি নয় তো নিজে প্রিপেয়ার্ড হয়ে আসবি। আগের বারের মত এবারে কিন্তু পালাতে পারবি না আর পালানোর চেষ্টা করলেনা লিংক সহ ছবি, ভিডিও শেয়ার করে দেব বুজলি শালি।
— আমি তোমাকে ভালবেসেই ছবিগুলো দিয়েছিলাম। সেদিন দু’জনের ইচ্ছাতেই তোমার সাথে ছিলাম আর এখন তুমি কিনা তার ফায়দা তুলছো।
তুমি ঐসবের লাইভ ভিডিও করে লিংক শেয়ার করে দেবার ভয় দেখিয়ে বহুবার টাকাও নিয়েছ অনেক আমার থেকে।
আর কত টাকা নেবে? আর কতবার এসবের ভয় দেখিয়ে আমাকে ভোগ করবে?
— আমি তো ভালোবেসে ছিলাম তাই না।
— ফোট মাগী,তোর ভালোবাসা তোর কাছে রাখ।তোর মতো বেশ্যামাগিকে কে ভালবাসবে রে শালী।
যা বলছি শালী চুপচাপ টাকা নিয়ে কাল চলে আসবি আর যদি কাউকে জানিয়েছিস তো ওই দিনই মনে করিস তোর শেষ দিন মনে রাখবি। তোর বাড়ির লোক, পুলিশ কিংবা মিডিয়া কেউ যেন জানতে না পারে।
শালী তোর এই নাকি কান্না থামা। কেঁদে কি হবে শালী তোর জন্মেরই তো কোন ঠিক নেই।
— চুপ করো প্লিজ চুপ করো। আমার ব্যাংকে আর বেশি টাকা নেই যা আছে তাই দিয়ে আসবো।
প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও এরকম করো না আমার সাথে।
এইসব ভিডিও শেয়ার করে দিলে আমি আর বাঁচতে পারব না প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে।
আজকের মেয়েটার গোঙানি সেদিনের কান্নাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।নির্জন দুপুরে ফাঁকা গলির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটাকে হঠাৎ কয়েকটা ছেলে মুখে রুমাল চেপে ধরে ফ্ল্যাটের এক কোনায় নিয়ে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। কংক্রিটের মেঝের উপর আছড়ে পরতেই মাথার পিছন থেকে কেউ সজোরে আঘাত করল। অন্ধকারে তাদের একজনেরও মুখ সে দেখতে পাচ্ছে না।
শুধু কয়েকটা পাশবিক হাত তার উন্মুক্ত শরীরে থাবা বসিয়ে তাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে। সে কিছুতেই চিৎকার করতে পারছে না। কেউ যেন তার মুখ চেপে তার হাত পা বেঁধে রেখেছে।নিজেকে মুক্ত করার জন্য হাত পা ছুড়তে ছুড়তে একটা সময় সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল।
আচমকা উঠে বসলো কোয়েনা।
সেই দুপুরটা কিছুতেই তার পিছু ছাড়তে চাইছে না।প্রত্যেকটা রাত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে সেই অন্ধকারে থাকা পশুগুলো।
প্রত্যেকটা মুহূর্তে কোন এক অদৃশ্য ছায়ামানুষ তাকে অনুসরণ করে চলেছে। বেশ কয়েকবার রিং হয়েই ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল।
সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার ।
সে জীবনের শেষ শক্তিটুকু নিয়ে খুব যত্ন করে সাজানো টেবিলটার দিকে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
দুর্বল হাতটা এগিয়ে গেল টেবিলে থাকা ওষুধ গুলোর দিকে যা খেয়েই তো ও শান্তিতে ঘুমাতে চেয়েছিল…এইতো ঘুমের ওষুধ,হাই প্রেসারের ওষুধ, পেইনকিলার আরও কত রকমের ওষুধ… যাতে চিরঘুমে যুক্ত থাকে একটা ভবিষ্যৎ।