কোন এক জঙ্গলে বাস করত একটি বাঘ, বাঘটি ছিল যেমন বদমেজাজি, নিষ্ঠুর ও তেমনি ছিল অত্যাচারী। কারণে অকারনে জঙ্গলের অন্যান্য নিরীহ পশুদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলতো, সব সময় তাই পশুরা অত্যাচারী বাঘটির ভয়ে একবারে ভীত সন্তস্থ হয়ে থাকতো।
অত্যাচারী বাঘটির অত্যাচারে সকল পশুরা একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল।
কি করা যায় বনের অন্য সব পশুরা উপায় খুঁজতে লাগলো, বাঘটির হাত থেকে কিভাবে নিজেদেরকে বাঁচানো যায়।
একদিন সকল পশুরা মিলে শিয়াল পন্ডিতের বাড়িতে গেল, খুলে বলল সব কথা, শিয়াল পন্ডিত সব কথা শুনে খরগোশকে ডেকে বলল ভাইয়া তুমি এক দৌড়ে একটু দেখে এসো যে অত্যাচারী বাঘটি এখন কোথায় আছে, খরগোশ শিয়াল পন্ডিতের কথা শোনা মাত্র ছোট্ট প্রাণী খরগোশ একবার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দুরুদুরু বুকে বাঘের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল।
একটু দূর থেকে খরগোশ দেখতে পেল, অত্যাচারী বাঘটি তার ঘরের মধ্যে শুয়ে কাতরাচ্ছে আর অঝোরে দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
চালাক খরগোশ আর দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে এ খবর পৌঁছে দিলো শিয়াল পন্ডিতের কাছে। শিয়াল পন্ডিত তখন সবাইকে বলল আপনার সবাই বসেন। আমি এক্ষুনি আসছি বলে শিয়াল পন্ডিত গেল অত্যাচারী ,নিষ্ঠুর ,বদমেজাজি অসুস্থ বাঘটিকে দেখতে।
বাঘটি তার কঠিন এই বিপদের দিনে ভাগনে শিয়াল পন্ডিতকে দেখে কেঁদে কেঁদে কেঁদে একবার অস্থির হয়ে পড়ল।
শিয়াল পন্ডিত অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে নরম মেজাজ বলল, মামা কাঁদবেন না কি হয়েছে বলেন।
বাঘটি বলল ভাগ্নে আমি খুব বিপদে আছি, আজ এক সপ্তাহ হল চোখের অসুখে ভুগছি, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না কোথাও যেতে পারছি না, শিকার ও ধরতে পারছি না, বেশ কিছুদিন না খেয়ে ঘরে পড়ে আছি, তুমি এসেছ ভালোই হলো, কেউ আমার খোঁজ নেয় না, একটু দেখতেও আসে না ভাগ্নে, তুমি আমার ভাগ্নে একমাত্র আপনজন, এই বিপদের দিনে তুমি আমার একমাত্র ভরসা কিছু একটা ব্যবস্থা তুমি করো ভাগ্নে।
অত্যাচারী অসুস্থ বাঘ মামার মুখে সব কথা শুনে, চালাক ভাগ্নে শিয়াল পন্ডিত মনে মনে একটা ফন্দি আটলো, সুযোগ বুঝে মনে মনে শিয়াল পন্ডিত ভাবল, মামার চোখের জন্য এমন ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে মামার চোখ তো অন্ধ হবেই, অন্যদিকে না খেয়ে ধীরে ধীরে মামাও একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
এবার চালাক শিয়াল পন্ডিত তার মামাকে বলল মামা তুমি কোন চিন্তা করো না, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বলে শিয়াল পন্ডিত ফিরে এসে সব ঘটনা খুলে বলল পশুদেরকে এবং বলল তোমরা যেখান থেকে পারো কিছু মধু ও কিছু চুন জোগাড় করে আনে।
শিয়াল পন্ডিতের কথা মত পশুরা চুন ও মধু নিয়ে এলো,শিয়াল পন্ডিত মধু ও চুন একসঙ্গে মিশিয়ে একটি কাগজে ভালো করে বেঁধে নিয়ে, বাঘ মামার বাড়িতে হাজির।
বাঘ মামাতো ভাগ্নে শিয়াল পন্ডিতের ওষুধ টা পেয়ে মহা খুশি হলো, ওষুধের প্যাকেটটা বাঘ মামার হাতে ধরিয়ে দিয়ে। শিয়াল পন্ডিত বলল মামা ওষুধটা একটু কষ্ট করে রাত্রে দু’চোখছ ভালো করে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন, একথা বলেই শিয়াল পন্ডিত বিদায় নিয়ে চলে গেল।
শিয়াল পন্ডিতের ধারণা ছিল মধু আর চুন মিশালে বিষ হয়, এবং তা বাঘ মামা চোখে দিলেই তার চোখ নষ্ট হয়ে যাবে, এদিকে শিয়াল পন্ডিতের মুখে এসব কথা শুনে সকল পশুরা খুব খুশি হল।
শিয়াল পন্ডিত ও সব পশুরা ভেবেছিল চুন আর মধু একসঙ্গে বাঘের চোখে লাগালে বাঘের চোখ একেবারে অন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু না তা হলো না। হলো তার বিপরীত ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি, হিতে বিপরীত হলো, বাঘটি ভাগ্নে শিয়াল পন্ডিতের কথায় বিশ্বাস করে তার কথামতো ওষুধ দু’চোখে ভালো করে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আশ্চর্যের বিষয় কিছুদিন পরে বাঘের দু ‘চোখ ভালো হয়ে গেল, বিষয়টি সকল পশুদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেল।
তখন শিয়াল পন্ডিত তার এমন কাজের জন্য, অন্যান্য পশুদের নিকট তার এমন কাজের জন্য বেশ লজ্জিত হলো, কারণ “বিষে বিষক্ষয় হয়” শিয়াল পন্ডিতের তা জানা ছিল না তাছাড়া “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর”।