যারা মনে করেন পড়া-লেখা করা মানেই দিনশেষে ভালো মানের একটা চাকুরি, এবং বিশাল অঙ্কের বেতন। এগুলা নেহাতই আপনার ব্যক্তি ভুল। পড়া-লেখা পান্ডিত্য অর্জনের জন্য,চাকুরির জন্য নয়। চাকুরি তো দিবে আপনার যোগ্যতার উপর, স্কিলের উপর। আর অনার্স-মাস্টার্স শেষ করলে যে আপনি যোগ্য হবেন, এমন টাও না। আপনি আপনাকে নিয়ে কতটুক আত্ববিশ্বাসী, কতটুক সচেতন আপনার যোগ্য পান্ডিত্যে। আর আপনার মন মানসিকতা কতটুক বহন করেতে পারে কোন কাজের চাপ, এসবই আসলে কিন্তু মূল বিষয়।
পড়া-শুনা করুন,সেটা জীবিকার জন্য নয়, মনুষ্যত্ব বোধের জন্য। পড়াশুনা আপনাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে সেটাও কিন্তু মিথ্যা নয়।করলে ভালোমানের পড়াশুনা করুন। চংবং করে অনার্স,মাস্টার্স শেষ করে আর বলে বেড়াবেন এ দেশে চাকুরি নাই,চাকুরি নাই, এই দেশ শিক্ষাকে মূল্যায়ন করেনা। আসল কথা হল এটা ভুল এবং চরম ভুল কারন আপনার কাজেই তো ছিল ভুল পথের নির্দেশনা।

ছোট বেলায় শুনতাম পড়াশুনা যে করে সে তার গ্রামের বা এলাকার আরো ৮/১০ জন মানুষের উন্নতি করে। এখন পর্যন্ত আপনি আমি কয়জনের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছি। কয়টা বেকার কে তার বেকারত্ব দূর করতে সাহায্য সহযোগিতা করেছি, পারবেন বলতে? তারপর তো বলবেন নিজেই তো বেকার, নাকি..!
একটাই সমস্যা হয়তো বিদেশ নয়তো ৫/১০ হাজারের চাকুরি। জীবনে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা যার মধ্যে নেই,সেই আর যেই হোক কখনো নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেনা। যে হাজার পঞ্চাশেক টাকা বিনিয়োগ করতে ভয় পায়,ভাবে যদি টাকাটা জলে ভেঁসে যায়।এসব চিন্তা করে নিজের মালিকানা স্থায়িত্ব করবেনা,সে সারা জীবন অন্যের অধীনে থেকে ১০/২০ হাজারের বিনিময়ে গোলামি করে বেড়াবে।আর কেউ কিছু করুক সেটাও কোনদিন দেখতে পারেনা।
এ জন্য চায়না-জাপানিরা এত উন্নত। তাদের জনসংখ্যা যেমন বেশি,জনসম্পদ ও তার থেকে বেশি শক্তিশালি।
তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি বা সম্ভাবনা আবিষ্কার করবে,প্রোডাক্ট তৈরি করে আমাদের মতো আয়েশি বাঙালিদের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার আয় করে নিতেছে। আইফোনের নির্মাতা নিজেই আইফোন ব্যবহার করেনা।
হুয়াইয়ের চেয়ারম্যান নিজেই হুয়াই ইউস করেনা। অথচ,আমরা ১০/২০হাজার টাকার চাকুরি করে আইফোন এর লেটেস্ট মডেলটি নিতে চাই, যেই করেই হোক। এটাই হল আমাদের দেশে সমস্যা। ‘থিংক এন্ড গ্রো রিচ’ বইয়ে নেপোলিয়ান লিখেছেন;ব্যবসায়িক মন মানসিকতার মানুষ সবসময় ব্যবসার দিকে অগ্রসর হয়,শখের দিকে না।
তারা ও অর্থ খরচ করে,তবে তাদের খরচ টা হয় বিনিয়োগের দিকে, যেন সেখান থেকে নতুন কিছু অাসে।
তারা সেই সকল কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করে, কোম্পানীর প্রোডাক্ট (মোবাইল) নয়। আপনি মোবাইল নিবেন খরচ কিন্তু আরো বাড়বে, আর একই অর্থ দিয়া যদি তাদের ১টি শেয়ার ও ক্রয় করে রাখতে পারেন,তাহলে দিন শেষে সেটি আপনার জন্য দ্বিগুন অর্থের যোগান দিবে।
একটা মানুষের আয় করার বয়স থাকে গড়ে কুড়ি বছর পর্যন্ত। হুম কুড়ি বছরই আপনার সোনালী বয়স টাকা উপার্জন করার। বর্তমানে আবার তরুন-রা বেশ সচেতন, তারা ১৭-১৮ বছর থেকে ইনকাম শুরু করে, সেটা যাই হোক। হোক টিউশানি,শো-রুমে, সেলসম্যান, লেখালেখি,কিংবা খুদে ব্যবসা। ভালো লাগে এসব। বাসায় বসে না থেকে মাসে ১০০০টাকা আয় করাটাও কিন্তু মন্দ না।
আহামরি লাভ না আসুক। অন্তত তাদের ভবিষ্যতের জন্য অভিজ্ঞতা তো হবে।
রিচড্যাড পুওর ড্যাড এর লেখক লিখেছেন, আমাদের পুওর মেন্টালিটির বাবারা সবসময় আমাদের শুধু কিছু করো,চাকুরি করো টাকা ইনকাম করো, এটাই চায়।

অপরদিকে,
রিচ মেন্টালিটির বাবারা সবসময় টাকা ইনকাম করতে বললেন না চাকুরির জন্য ও বললেন না,তারা শুধু এটা বলেন,তুমি এমন কিছু করো যেন তোমার কিছু হলেও অর্থ উপার্জন হয় যাতে তোমার তা বন্ধ না হয়।
কথাটি বুঝেছেন? ৭০-৮০% লোকই বুঝেন নাই। বুঝিয়ে বলছি, বলুন তো আপনাদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম কি? হয়তো চাকুরি,বা কোন প্রপেশনাল পেশা বা, আপনার পরিশ্রমের সময়টা। আচ্ছা যদি সেটা বন্ধ হয়ে যায়। মনে করুন আপনি একটা দূর্ঘটনায় একটা পা হারিয়েছেন,আগের মতো আর স্বশরিরে কাজ করতে পারেন না। আপনাকে দিয়ে তাদের কোম্পানী কোন উন্নতি দেখছেনা। আপনি এখন তাহলে কি করবেন। নিশ্চিত নিজের সব বিক্রি করে দিবেন। নয়তো মানুষের ধারে হাত পাতবেন। পেট তো চালাতে হবে নাকি?
আপনি এতদিন যেটা কররেছেন সেটা হলো এক্টিব ইনকাম। যতক্ষন এক্টিব থাকবেন,কর্মক্ষম থাকবেন ততক্ষন আপনার পরিশ্রমের পারিশ্রমিক চলবে। আবার পরিশ্রম না দিলে উপার্জন ও বন্ধ। আপনি যদি এক্টিবের পাশাপাশি কিছু প্যাসিভ ইনকাম ক্রিয়েট করতেন তাহলে আজকে আপনাকে এমন দূর্ভোগ পোহাতে হতোনা। প্যাসিভ মানে আপনি যখন নিস্ক্রিয় থাকেন, ঘুমালেন কিংবা স্বশরিরে কাজ না করেন,আপনার তখনই ইনকাম চলবে। অদ্ভুত না!
অবাকের কিছু নেই। আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন,মিউচাল ফ্রান্ডে বিনিয়োগ করেন। আপনার ইনকাম ডে টু ডে গ্রো হবে।
ভালো গান লিখেন? ইউটিউবে ভিডিও ছাড়েন, আপনার যত ভিউস হবে আপনার তত ইনকাম বাড়বে।
এই যে আমি লেখাটি লিখেছি এটাও কিন্তু যতজন দেখবে তত আমার আমার ইনকাম চলবে।
আপনি ভালো গান পারেন,শুনান রেকর্ড করে ইউটিউবে ছাড়েন। ভালো কবিতা পারেন,লিখেন পড়ে শুনান নিজের চ্যানেলে আপলোড করুন। ভালো আর্টিকেল লিখেন? ভালো-ভালো সাইট আছে আপনি সেখানে লিখেন। ফাইবারে লিখুন, কিংবা এরকম পেপার-পত্রিকায় প্রকাশ করুন। আপনার ইনকাম ও দিন-দিন গ্রো হবে। সবাই চিনবে। মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু পরিচিতদের লেখা বা বই একটু বেশিই পড়ি।
সবশেষে একটি কথাই বলবো, আপনি কোথায় আছেন,কি অবস্থায় আছেন, পকেট খালি না ভরপুর এসব কিচ্ছু না। দিনশেষে আপনার কাজ করার ক্ষমতা পরিশ্রম বিচক্ষন যোগ্যতা এবং প্রোডাক্টিভিটি চিন্তাভাবনাই আপনাকে সাফল্যের দিকে অগ্রসর করবে এবং রিচ ম্যানদের কাতারে নিয়ে যাবে।
কাউসার হামিদ শ্রাবণ
কবি ও লেখক,বিবিএ,,ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।