প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ডাকনাম রাণী। মাস্টার দা’ সূর্য সেনের বিপ্লবী দলে তাঁর ছদ্মনাম ছিলো ধ্রুবতারা।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে চিরকাল জ্বলজ্বল করে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন এই ধ্রুবতারা।
১৯২৭ সালে চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২৯ সালে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়, ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে গ্রাজুয়েশন করেন। গ্রাজুয়েশনের করার পর চট্টগ্রামের নন্দনকানন অপর্ণাচরণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন।
এ সময়, কেবল মাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই বৃটিশদের তাড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব, এমন মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তিনি যোগ দেন মাস্টার দা’ সূর্য সেন এর দলে। বেশ কটি গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব পালন ও যুদ্ধ করেন তিনি। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনে প্রীতিলতার ভূমিকা ছিলো অপরিসীম।
চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাবে লেখা ছিল, “কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ”। ১৯৩২ সালের, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে, ১৫ সদস্যের একটি দল নিয়ে, মহান বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আক্রমন করেন সেই ক্লাব। আক্রমণ শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় একজন অফিসারের গুলিতে প্রীতিলতা আহত হন। আহত হয়েও নিজ দলের প্রত্যেক সদস্যকে নিরাপদে সরে যেতে বলেন। নিজে রিভলভার দিয়ে ঠেকিয়ে রাখেন প্রতিপক্ষকে। বিপ্লবী কালীকিংকর যাননি। তাকে নিরাপদে সরে যেতে বলে, নিজের রিভলভারটি দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গুলি করতে থাকেন প্রীতিলতা। পাশাপাশি হাতে নেন পটাশিয়াম সায়ানাইড। বৃটিশদের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মহনন শ্রেয় মনে করেন মাত্র ২১ বছর বয়সী এই বিপ্লবী। ততক্ষনে ২৩ তারিখ রাত শেষ হয়ে এসেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর, এই দেশকে বৃটিশ মুক্ত করার জন্য আত্মহুতি দেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। (যদিও বেশির ভাগ নিবন্ধ ও গবেষণা পত্রে তাঁর মৃত্যুর তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর লেখা রয়েছে)। স্বশ্রদ্ধ অঞ্জলি এই বীর নারীকে।
চট্রগ্রামে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারেরে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা ইউরোপিয়ান ক্লাবে। তার স্মরণে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ধলঘাট এলাকার পুকুরপাড়ে তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ।