শেখ হোসনা
ধারাবাহিক
শুভ্রা অত্যন্ত চঞ্চল একটি মেয়ে।সাহসি কিন্তু কিছুটা রাগী।কোনো কিছুতে ভয় পায় বলে মনে হয় না।
সে সাহসি কারন তার দু’টি ভাই আছে। সাধারনত,ভাই আছে যার সেই বোনরা একটু কমই ভয় পায়। তাছাড়া ভাইগুলি যদি আবার উঠবস ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা করে। সে সূত্রেই হয়তো শুভ্রা সাহসি।
শুভ্রা সবে এস.এস.সি তে একটা ভালো রেজাল্ট করে বাবা মায়ের সাথে কিছুটা সংগ্রাম করে কলেজ মুখি হয়েছে।
শুরু হলো নতুন জীবন।ও চ্ঞ্চল তবে এখনো আট দশটি মেয়ের মতোএকা চলা ফেরা শিখেনি।শিখেনি ঠিক নয়,একা চলাফেরার অনুমতি পরিবার থেকে এখনো দেয়া হয়নি। তাই কলেজের শুরুতে বাসার কেউ না কেউ দিয়ে আসতো।
শুরু হলো পড়া শোনা, ভালো একটা রেজাল্ট করতে হবে। বাড়িতে যুদ্ধ করা তাছাড়া শুভ্রা অতো পচা ছাত্রী নয়।
যাক, এগিয়ে এলো কলেজের পড়ন্ত বেলা,অর্থাৎ সামনে পরীক্ষা বেশ মন পড়াশোনায়।এর মাঝে অবশ্য ওর জীবনে টুকটাক ভালোলাগা, ভালোবাসা আসা যাওয়া করেছে বয়স অনুযায়ী।শুভ্রা তাদের ধরা হয়নি।তার নিজস্ব একজন ভালো লাগার ছিলো।অবশ্য তখনো দু’জনেই জানি জানি বলেও অজানা।যাক, সে কথা আরেক দিন বলব।
আজ ওর জীবনের বিশেষ কিছু বলি।
যা অনেক শুভ্রদের সাথেই মিলে যায়।
সকালে ঘুম থেকে জেগেই মনটা খারাপ।আকাশ কিছুটা মেঘলা।আজ একটা জরুরী ক্লাশ মিস করা ঠিক হবে না।তার উপর মেঘলা আকাশে মায়ের বারণ।
মাকে বুঝিয়ে বের হলো।গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে। ছাতা সেটাও সঙ্গি হলো না। অবশ্য এবয়সটায় কেউ ছাতাটাতা নিতেও চায় না। শুভ্রাও তাই। বেশ কিছুদুর যেতেই মেঘকন্যা তার কাজ দ্রুত করল।শুভ্রা ও দ্রুত পা চালাল।সে অবশ্য এদিক সেদিক তাকিয়ে রিক্সা খোঁজ করছিলো।এদিক সেদিক করতে করতে অবশ্য কাছাকাছি চলে এসছে।কারন ওর বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব মাত্র ৫-৬ মিনিটের পথ। যেতে লম্বা আকারের দুটি পথ পেরুলেই কলেজ।

প্রথমটি পেরিয়ে দ্বিতীয়টির মাঝ পথে এসে থমকে দাড়াল কারন রাস্তাটির মাঝ থেকে শেষ অবধি জায়গায় জায়গায় ভাঙ্গা একটুতেই পানি জমে চলাফেরার অযোগ্য হয়ে যায়।শুকনোতেও ভিজা ভিজা থাকে আর আজ তো মেঘের ছোঁয়া। তাছাড়া ওর কলেজের ঘেরা দেয়ালটি এই রাস্তা ঘেষা।যার উচ্চতা ৫-৫.৫ হবে।ওর চেহারাটা শুকিয়ে গেলো আরেকটি কারন— ঐ দেয়ালের এ পাশ থেকে প্রতিদিন একজন যুবক ঠিক যুবক বলা চলে না। কিছুটা পুরুষ ছুঁইছুঁই। দেখতে কিছুটা অস্বাভাবিক। সে শুধু তার মাথাটি প্রতিদিন ঐ দেয়ালের উপর দিয়ে কলেজের মেয়েদের দেখতে থাকে বেশ সময় নিয়ে। যা সত্যি একটা বিশ্রি ব্যাপার ও ভয়ের কারন।তাই শুভ্রা ভাবনায় একা একাই বিরক্তি নিয়ে”উফ কি যে করি,বৃষ্টির জন্য কেউ নেই। “
এর পর খুব জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে”দাড়া বেটা রোজ রোজ মেয়েদের দেখা আজকের পর আর দেখবি না।” বলেই
ওহে শুভ্রার একটি ধারণা বন্ধু মহলে পায় বলে”শোন, কেউ যদি কোনো কিছু অনেক আগ্রহ নিয়ে চায়, আর তা যদি ইচ্ছে না থাকা সত্তেও পুরোটা না হোক অল্পও দেয়া হয়। দেখবি তার চাওয়ার আগ্রহ কমে আসবে না হয় আর চাইবে না।”
ব্যস,ওর ভাবনাটাই হয়তো আজ কাজে লাগাবে,হলোও তাই। খুব শান্ত স্বরে যা ওর স্বভাব বিরোধী তবুও বলল”ভাইয়া সামনে কি অনেক পানি জমেছে? আমি যেতে পারব?”
শুভ্রার কথায় লোকটি হচকচিয়ে এমন একটা হাসি দিলো যেনো অমাবস্যার চাঁদ পূর্ণিমায় রুপ নিলো দিন ক্ষন পুরো হবার আগেই।
শুভ্রা ভয়ে ভয়ে ঠোটে আলতো হাসি এনে”যাওয়া যাবে ভাইয়া”?
লোকটি এবার তার দূর ভাবনা থেকে ফিরত এসে দ্রুত জবাব”হ্যা..হ্যা ভাইয়া যেতে পারবে”
স্বস্তির নিঃশ্বাসে শুভ্রা “”ধন্যবাদ ভাইয়া,আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম;আসি হিম?”
লোকটি লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে”আচ্ছা,ওহে আমি আগিয়ে দিবে?
শুভ্রা চোখ দুটি বড় বড় করে দ্রুত””না,না,আমিই পারব,আসি।”” লোকটি হাসির রেশ রেখেই”সাবধানে যেও সাদা পোশাক বলে কথা। “
কলেজে যেয়েই ঘাম ঘাম চেহারাটা রুমালে জড়িয়ে নিলো এর পর ক্লাশে টিচার আসার আগ পর্যন্ত সেই লোকটিকে নিয় বন্ধুরা একেক জন একেক ব্যঙ্গ,রঙ্গো উক্তিতে মনে আনন্দের আনয়ন করল।
বৃষ্টিতে ভিজার কারনে গা সামান্য গরম।তাই দু’দিন কলেজ যাওয়া হয়নি।কিন্তু বাড়ীর বাহির হয়েছে এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিল বেশ সময়ও থেকেছে। যা মায়ের কিছুটা অপছন্দ সে বন্ধুর বাসায় যাওয়া আসা।
তৃতীয় দিন,কলেজে হাজির হতেই আবার হাসির রোল সূত্র সেই লোক।তাই শুভ্রারও যেনো মনে হলো “কিরে,” তাকে তো আজ দেখলাম না।
শুভ্রার কথায় পিংকি দুষ্ট হাসিতে”বেচারা আজ আসেনি।হয়তো তোর ভাবনায় বৃষ্টির ছোঁয়ায় কাতর হয়েছে।
বন্ধু রোমা আফসোসি স্বরে””আহারে শুভ্রা মনির শুভ্র চুপসে গেলো কিনা জানতে ইচ্ছে করছে।
শুভ্রা এবার একটু বিরক্তি নিয়ে”””তোদের। মাথায় এই প্রেম ট্রেম ছাড়স কিছুই নাই দেখছি। অবশ্য এজন্যই তোমরা এতো ভালো রেজাল্ট করো।কই আমি ভাবছি আমার থিউরিটা কাজ করল কিনা?আর তোরা ভাল লাগার পর্ব শেষ না করে –প্রেমেই চলে গেলি।পারিসও তোরা।চল ক্লাশে নোট ভালোভাবে তুলবি পরিক্ষার হলে আমার পিটকে স্ক্যাচ আর কলমকে তুলি করবি না হয়।”
সমস্বরে অভিমানে তিনজন””দিলিতো সুযোগে আমাদের বোবা করে।””
শুভ্রা লজ্জা নিয়ে “ওকে সরি, চল।
০———–০
ক্লাশ শেষে তন্নি”এই চল আজ সবাই শুভ্রাদের বাসায় যাই”
শুভ্রা “কারন?
পিংকি”ভোজন।
রোমা”সাথে রোমিওকে দেখা।
শুভ্রা একটু রাগ মুডে”বাসায় যাবি ভোজনে।কিন্তু রোমিওকে আগে ভাগে খবর দিয়ে —
তন্নি শুভ্রাকে থামিয়ে”রোমিওকে খবর দিবে তাও আবার দেবির সামনে? এটা দুঃসাহস না?
শুভ্রা গম্ভীর ভাব নিয়ে ওসব অপছন্দ করা মানেই দেবী নয়।”
পিংকি পরিবেশ শান্ত করে”আরে বোকা আমরা তো সাদা পোশাক বলে কথার কথা বলছিলা।”
শুভ্রা “সেটাই বা এতো দিন গড়াতে হবে কেনো?
রোমা “ওকে সরি।
আজো মাঝ পথ ছাড়িয়ে আসতেই দেখা দিলো আরেক বিপত্তি।
-চলবে-
আরোও পড়ুন