অহনা, রুমিলার ছোটবেলা থেকে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে ওরা প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি ছাড়িয়ে, হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিল।
অহনার দাদা চাকুরিজীবী, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্বাভাবিক ভাবেই, ওদের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো। দাদার লাডলী, অহনা যখন যা চায়, তাই পায়। কারণ ছোটবেলাতেই অহনার বাবা-মা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। তাই অহনার দাদা, বোনের কোনো আবদার কখনো ফেলতে পারেন না।
রুমলির বাবা দিন-মজুর, রোজ লোকেদের বাড়ীতে কাজ করতে না গেলে, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা হয় ওদের। তাছাড়া বাড়ীতে ভাই-বোনও আছে। তাই রুমলি কখনো সখের ধার ধারেনি। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে আর পরিবারের ন্যুনতম সুখ-স্বাছ্যন্দ যাতে বজায় থাকে, সর্বদা তার চেষ্টা করে।
তবুও আর্থিক অসামঞ্জস্যতার জন্য ওদের বন্ধুত্বে কখনো চিড় ধরেনি। দু’একদিন অহনাদের বাড়ীতে রুমলি গিয়েছে। ওদের ঝা-চকচকে মোজাইক পাথরের বাড়ী, রুমলিদের মাটির বাড়ীর চেয়ে অনেক ভাল।
অহনা, রুমিলাকে যতটা সম্ভব সাহায্যও করত। যখন দু’জনে কলেজে উঠল, একই সাবজেক্ট নিয়েছিল। বাংলা অনার্স। দু’জনের দিনগুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিল।
আরো পড়ুন
সেকেন্ড-ইয়ারে, ক্লাশমেট সমীকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল। সমীক মধ্যবিত্ত বাড়ীর ছেলে। আচার-আচরণে খুব ভদ্র। দাঁতে সুপুরিটুকু কাটারও অভ্যেস নেই। তাই কিছুদিনের মধ্যেই অহনার, সমীককে মনে ধরেছিল। রুমিলাও যে সমীককে পছন্দ করত না, এমন নয়। কিন্তু নিজেদের পরিবারের অবস্থার কথা ভেবে, কিছু বলতে পারত না।
সুন্দরী হলেও, ছোটবেলা থেকেই আর্থিক অহংকারে অহনা একটু দুষ্টু স্বভাবের, বরঞ্চ রুমলি খুব শান্ত, মিষ্টি। তাই রুমলিকে সবাই পছন্দও করত। সমীকেরও রুমলিকেই পছন্দ হয়েছিল। তা জানতে পেরে, রাগে, অহনা, রুমলির সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। দাদাকে সব কথা খুলে বলেছিল।
সব শুনে, অহনার দাদা, রুমলিকে একদিন রাস্তায় খুব ধমক দিয়েছিল, গায়ে হাতও তুলেছিল। তারপর থেকে রুমলি আর সমীকের সঙ্গে দেখাও করত না, কথাও বলত না। সমীর কথা বলবার চেষ্টা করলে, এড়িয়ে যেত।
রুমলির সঙ্গে দূরত্বের কারণে, সমীকও ধীরে ধীরে অহনাকে মেনে নিয়েছিল। কখনও সে আসল সত্যি কথাটা জানবার চেষ্টাও করেনি। এভাবেই দিন কাটতে লাগল।
থার্ড-ইয়ার কমপ্লিট করবার পর, রুমলি পড়া বন্ধ করে, চাকুরির খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। একটা ছোটখাট সরকারী চাকুরিও ভাগ্যে জুটে গেল।
সমীকের সঙ্গে বিয়ে হবে, তাই একদিন অহনা, ওর দাদার সঙ্গে, বিয়ের কার্ড নিয়ে, রুমলিদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করতে এসেছিল।
অহনার দাদা, রুমলির কাছে ক্ষমা স্বীকার করে, নিজেই রুমলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সকলের সামনে রুমলি নির্ভিকভাবে সাফ জবাব দিয়েছিল, ‘’সে, সমীককেই ভালবাসে, তাছাড়া অযাচিতভাবে কেউ যদি কারও গায়ে হাত দেয়, সে কখনও ভালো মানুষ হতে পারে না। জীবনসঙ্গী হওয়া তো অনেক দূরের কথা।’’
রুমলির বাবার মুখে সব কথা শুনে, সমীক থ মেরে গেল। ভাবতে লাগল, ‘’সে এখন কী করবে?’’