সামিমা হুসাইন সানি
আজ সকালে শীতটা একটু বেশি করছে তাই তাই কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। মা এসে দুইবার ঢেকে গেল সেই দিকে কোন খেয়াল নেই, ছোট ভাই এসে জানালাটা খুলে দিল, জানালার ফাঁক দিয়ে কিছু আলো চোখে পরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালাম, ভোরের মিষ্টি আলোয় তার মাঝে দক্ষিনা বাতাস এসে আমার খোলা চুলে খেলা করে যায়, ভোরের দক্ষিনা বাতাসে আমার মোনটা সতেজ ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। দূরে অদূরে জানালার ফাঁক দিয়ে একটু তাকালাম। দক্ষিনা বাতাসে আমার চুলেল সাথে প্রতিযোগিতায় ধানের পাতা গুলোও যেন দোল খাচ্ছে। হঠাৎ বাতাসের সাথে শিউলি ফুলের মো মো গন্ধে আমি মাতাল হয়ে গেলাম। চাদর গায়ে এক দৌড়ে ছুটে বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে। দেখতে পেলাম এই শিতের ভোরে শাল গায়ে একটি মেয়ে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছে, আমি পাশে গিয়ে ফুল কুড়ানোর সঙ্গী হলাম। কিছু ফুল কুড়িয়ে নিয়ে ডাইরির পাতার ভিতরে রাখলাম।
আজ শনিবার কলেজে যাবোনা ভাবছি। তাও আনমনে কি যেন ভেবে বই হাতে বেরিয়ে পরলাম কলেজের উদ্দেশ্য। মা পিছন থেকে খানা খেয়ে যাওয়ার জন্য পিছন থেকে ডেকে যাচ্ছেন। আমি পিছন ফিরে খাবোনা বলে চলে গেলাম।
সে আমাকে পেট দেখাচ্ছে তাই ভাবলাম হয়তো পেট ভরা তাই খেতে চায়নি।
গাড়ি থেকে নেমে দুই প্যাকেট এ্যানার্জি বিস্কুট কিনলাম, আমার আমার একটা অভ্যাস বাজে বলুন আর ভালোই বলুন কোন খাবার একটা কিনিনা দুইটা কিনি, কারন খাওয়ার সময় কোন। অনাহারি আমার দিকে তাকালে না দিয়ে খেতে পারিনা, কেউ এসে হাত পাতলে ফিরিয়ে দিতে পারিনা। বিস্কুট এর প্যাকেট ব্যাগে ভরে কলেজে যাওয়ার জন্য পলাশি হলের রাস্তা দিয়ে হাটছি আর একটু একটু করে মাঝে মধ্যে ডাইরি থেকে ফুলের সুভাষ নিচ্ছি। হাতির বাগানের কাছে এসে মোর ঘুরতেই বেখেয়ালি ভাবে আমার হাত থেকে ডাইরিটা মাটিতে পরে গেল। ডাইরি তুলতেই চোখ পরলো ধুলো বালু কনায় লুটানো বিবর্ষ বস্ত্রে একটি মহিলা আধোশোয়া অবস্থায় পরে আছে।
একবার ভাবছি যাবো আরেকবার ভাবছি যাবোনা, কারন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের কাছে যেতে তো একটু ভয় করবেই। তাও সাহস সঞ্চয় করে মৃদু্ হেটে তার সামনে দাড়ালাম। তাকে বললাম খাবে কিছু? সে মাথা ঝাকিয়ে না করে, আমাকে কি যেন বারবার বুঝাতে চাচ্ছে, আমি তার কথাগুলো বুজতে পারছিনা, তাও বার বার বুজার চেষ্টা করছি। সে আমাকে পেট দেখাচ্ছে তাই ভাবলাম হয়তো পেট ভরা তাই খেতে চায়নি। তাও আমি বিস্কুটের প্যাকেট তার হাতে দিলাম। আর বললাম যখন খুদা পাবে খেয়ে নিও। সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কলেজের টাইম বেশি হওয়াতে তার সাথে আর সময় কাটাতে পারলামনা। আমি চলে আসার সময় তার করুন চাহনি আমাকে বার বার বাধা দিচ্ছিল, তাও চলে আসলাম। আসার পরে একটু খারাপ লেগেছিল, বন্ধুদের পাল্লায় পরে সবটা ভুলে গেলাম। আর খোজ করা হয়নি তাকে। এটাই তো আমাদের সমাজ, সামনে থাকবে দুঃখ প্রকাশ করবো, যখন আড়াল হবো সবটা ভুলে যাবো। যাই হোক অস্বাভাবিক মানুষ তাই হয়তো তাকে আর খোজ করিনি।

মঙ্গলবার ভোরে কলেজ যাওয়ার পথে অনেকের মুখে মুখে একি বুলি শুনতে পাচ্ছি। এই শিতে হাতির বাগানের বালুর মাঠে এক পাগল বাচ্চা প্রসব করেছে, কেউ বলে বলে হাসাহাসি করছে। কয়জন ভোগ করছে কার বাচ্চা কে জানে, কেউ বলছে জারজ সন্তার কেউবা অবৈধ সন্তান। কিন্তু কেউ ওর কষ্ট অনুভব করে দেখছেনা। আমরা স্বাভাবিক মানুষ বাচ্চা প্রসব করার সময় আমাদের আপন মানুষ কাছের মানুষ গুলো পাশে থেকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে, আর ওর কি অবস্থা তা কেউ ভেবেই দেখেনা। আসলে ও তো বোবা কষ্টে একটা জীবনকে পৃথিবীতে এনেছে। আর এসব নিচু নিকৃষ্ট মাইন্ডের লোকেরা মানুষিক ভারসাম্যহীন মানুষটাকে কলঙ্ক লটাচ্ছে। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল যারা এসব বলে বেরাচ্ছে তারাই বড় কলঙ্কিত।
গিয়ে শুনতে পেলাম হঠাৎ ভোরবেলায় অভি নামের একটি ছেলে বালুর মাঠ একটি বাচ্চার কান্না শুনতে পায় ও একটু ভয় পায় তাও বার বার কান্নার শব্দ পাওয়ার পর মানুষ জন ডেকে আনে, তারা ওখান থেকে বাচ্চাটাকে তুলে আনে। খুব সুন্দর একটি ফুটফুটে মেয়ে বাচ্চা প্রসব করে। দেখলাম আমার বিস্কুটের খোলা প্যাকেটটা তার পাশেই পরে আছে।
উপজেলার গন্ন মান্ন ব্যক্তিরাও সেখানে উপস্থিত হয়। এখন সবাই ভাবছে কে ওর দায়িত্ব নিবে কেউ রাজি হলেও আবার তেমন ভাবে সাহস পাচ্ছেনা কারন একে তো পাগলের মেয়ে তাও জালত অবৈধ। আমাদের কৃষি অফিসে কর্মরত। তার বাড়ি আমাদের জেলার বাইরে। খোজ নিয়ে জানা গেল সে নিঃসন্তান, তাই তো তাদের হাতে চুক্তিনামা সই করে বাচ্চাটিকে তুলে দিলেন। সেও টিসি নিয়ে চলে গেল অন্য যায়গায় মেয়েটির সুন্দর ভবিষ্যত এর জন্য। আমি তাকে আমার সম্মান জানাই, তার মতো এমন সুন্দর মোন মানসিকতার মানুষ খুব কমেই হয় এই সমাজে।
যাই হোক যে সমাজে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলেই রক্ষা পায়না ধর্ষিত হওয়ার হাত থেকে…সেখানে তনু, নুসরাত আমরা ধর্ষন হওয়া আমার কাছে এটাকে স্বাভাবিকেই মনে হয়।