প্রতিটা আদম সন্তান দ্বীন ইসলামের উপর জন্মগ্রহন করেন এবং পরবর্তিতে পারিবারিক, সামাজিক ও অন্যান্য নানাবিধ কারনে অন্য যে কোন ধর্মে অনুসারি হয়ে পড়ে।
কিন্তু যে মানুষের সঠিক বোধ আছে সে অবশ্যই সত্য আর সঠিক পথের সন্ধান করে, আর কেউ মুসলমান ঘরে জন্ম হলেই প্রকৃত মুসলিম হয় না,যতক্ষন না সে নিজেকে প্রকৃত ভাবে ইসলামের ভেতর প্রবেশ করাতে না পারে।
তাই আমাদের জানা উচিত একজন মানুষ জীবন যাপনের জন্য কেমন হবে তার ব্যবস্থাপনা, আজ আমরা আপনাদের সামনে আলোচনা করব ইসলামে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে এবং আশা করি প্রিয় ঈমানদার মুসলমান ভাইদের কিছু হলেও পথের পাথেয় হিসাবে কাজ করবে আজকের আলোচনাটি।
এটা ঠিক যে, সৈয়দ হওয়ার জন্য সৈয়দ বংশে জন্ম নেওয়া (এবং বাঙ্গালী হওয়ার জন্য বাংলা ভাষায় কথা বলাই) যথেষ্ট। কিন্তু কেউ যদি দাবী করে, আমি অমুক ভাষায় কথা বলি, অমুক বংশে জন্ম আমার, সুতরাং আমি মুসলমান, মুসলমান হওয়ার জন্য আমাকে এর বেশি কিছু করতে হবে না; তবে তার এ-দাবী আপনিও মেনে নেবেন না।
কারণ আপনি জানেন, ইসলাম ভাষা ভিত্তিক জাতি কিংবা বংশীয় কোনো জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর নাম নয়, ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের নাম, যা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে বিশ্ববাসীর কল্যাণে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য এসেছে এবং তা কোরআন ও হাদীসে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
অতএব যে কোনো ভাষার যে কোনো গোত্রের এবং যে কোনো অঞ্চলের যে কেউ দ্বীন শিখবে এবং তদনুযায়ী জীবন যাপন করবে, সে-ই প্রকৃত মুসলমান রূপে পরিগণিত হবে। আর যে এই দ্বীন শিখবে না, দ্বীনের উপর আমল করবে না,সে প্রকৃত মুসলমান হিসাবে গণ্য হবে না। তাহলে বুঝা গেল, প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য দুটি বিষয় জরুরি:
১/ ইসলামী জীবন যাপনের জ্ঞান অর্জন করা, অন্তত এর মৌলিক ও বুনিয়াদি বিষয়গুলো শিখে নেয়া।
২/ ব্যবহারিক জীবনে সে বিষয়গুলো মেনে চলা। ইসলাম গ্রহণ করা এবং মুসলমান হওয়ার এটাই প্রকৃত অর্থ।
সুতরাং দ্বীনের জরুরি বিষয়ের ইলম হাসিল করা মুসলমান হওয়ার প্রথম শর্ত। হাদীস শরীফে এসেছে…
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ. (قَالَ الْمزي: هَذَا الحَدِيث روى من طَرق تبلغ رُتْبَة الْحسن. كما في مصباح الزجاجة للسيوطي)
ইলম অর্জনের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।… সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৪
এক্ষেত্রে মনে রাখার বিষয় হলো, সমস্ত ফরজ বিষয় ইবাদত তূল্য। সুতরাং দ্বীনের ফরজ বিষয়গুলো শিক্ষা এবং শিক্ষার চেষ্টা করাও একটি ইবাদত। আল্লাহ তাআলার দরবারে এর অনেক মূল্য। নবীজী এ বিষয়ে বহু ফজীলতের কথা বর্ননা করেছেন। এক হাদীসে এসেছে,
مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى يَرْجِعَ.
যে ব্যক্তি দ্বীন শেখার জন্য ঘর ছেড়ে বের হবে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকবে।… সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং ২৬৪৭
অন্য এক হাদীসে এসেছে,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا، سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে ব্যক্তি দ্বীন শেখার জন্য কোনো রাস্তায় চলবে আল্লাহ তাআলা এর উসিলায় তার জন্য জান্নাত-মুখী একটি পথ সহজ করে দেবেন।… সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯
আরেক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
مَنْ طَلَبَ العِلْمَ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى (هَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفُ الإِسْنَادِ)
যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাআলা তার পিছনের গুনাহগুলো মাফ করে দিবেন।… সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং ২৬৪৮
মোটকথা দ্বীন শিক্ষা ইসলামের জরুরি বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জন করা নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, শিক্ষিত-মূর্খ, জোয়ান-বৃদ্ধ সকলের উপর সমান ফরজ। আর উল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারি, ইলম শিক্ষার পেছনে মেহনত ও সময় ব্যয় করার বিনিময়ে আল্লাহ পাকের দরবারে আমরা বিরাট নেকি ও সওয়াব লাভ করবো ইনশাআল্লাহ। সুতরাং দ্বীনের জরুরি বিষয়গুলোর ইলম হাসিলের সংকল্প করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
বয়স ও ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ছাত্র হয়ে যাদের দ্বীন শিক্ষার সুযোগ নেই, শিক্ষিত হয়ে থাকলে তাদের জন্য সহজ উপায় হলো, কোনো হক্কানী আলেমের পরামর্শ নিয়ে বইপত্র পাঠ করা, আর অক্ষরজ্ঞান না থাকলে অন্যের মাধ্যমে পড়িয়ে শোনার ব্যবস্থা করা। মসজিদে, বাসা-বাড়িতে দ্বীনি বই পড়ার এবং শোনার রেওয়াজ চালু করা। তাহলে সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে ইসলামের ধর্মীয় জ্ঞান ব্যাপকতা লাভ করবে।
সর্বপরি আমরা নিজেরা দ্বীনের কথা শিখি, অপরকে শেখাই। দ্বীনী কথার প্রচার ও প্রসারকে জীবনের লক্ষ্য বানাই। হাদীস শরীফে এসেছে,
مَنْ جَاءَهُ الْمَوْتُ وَهُوَ يَطْلُبُ الْعِلْمَ لِيُحْيِيَ بِهِ الْإِسْلَامَ فَبَيْنَهُ وَبَيْنَ الْأَنْبِيَاءِ فِي الْجَنَّةِ دَرَجَةٌ وَاحِدَةٌ. وَفِي إِسْنَادِهِ اضْطِرَابٌ …وَالْفَضَائِلُ تُرْوَى عَنْ كُلِّ أَحَدٍ، وَالْحُجَّةُ مِنْ جِهَةِ الْإِسْنَادِ إِنَّمَا تُتَقَصَّى فِي الْأَحْكَامِ وَفِي الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ :جامع بيان العلم وفضله.
যে ব্যক্তি দ্বীন যিন্দা করার নিয়তে (অর্থাৎ অন্যের মাঝে দ্বীন ছড়ানো এবং অন্যকে আমল করানোর উদ্দেশ্যে) ইলম শিখবে, আর এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, জান্নাতে সে নবীগণের এত নিকটে থাকবে যে, তার ও নবীগণের মাঝে একটি মাত্র স্তরের পার্থক্য থাকবে।… জামিউ বায়ানিল ইলম, ১/২০৭
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা গ্রহন করা অপরকে শিক্ষা দেয়া এবং নিজে দ্বীনের উপর চলে অপরকে সঠিক পথ বাতলে দেওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
নিয়মিত ইসলামি আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের জন্য চোখ রাখুন বাতায়ন24 ভিজিট করুন এবং আপনজনদের জানতে শেয়ার করুন।