পৃথিবীতে মানুষের জীবন একটি ঘুমাচ্ছন্ন রহস্যময় স্বপ্ন মাত্র, যার শুরু কিংবা শেষ মেলানোই ভার।
সকল ক্ষমতা যখন সৃষ্টিকর্তার উপর তাহলে কিসের জন্যে এই ক্ষণিকের আত্ম-অহংকার? কেন এতো বৈরিতা!!
যেখানে বিজ্ঞানের কোন শক্তি কোন কাজে আসতে পারছে না।
বিশ্ব পরাশক্তি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারও আজ জনশূন্য ।
বাদ যায়নি গবেষনা সংস্থা নাসা, পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা শক্তিও আজ পরাভূত। আত্ম সমর্পণ করে স্বেচ্ছায় যেন কারাবন্দি ।
লন্ডন ব্রিজ, ফ্লোরিডার কিওয়েস্ট, প্রশ্বস্ত ব্রডওয়ে, মহাসাগরের তীর সানফ্রান্সিসকো, বিখ্যাত হাইডপার্ক আর বাকিংহাম প্যালেস এর দিকে তাকালে নীরবতা সুস্পষ্ট।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের চুড়ায় রক্ষিত বড় ঘড়ি বিগবেন আজ মানব দৃষ্টির অন্তরালে।
অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি ওয়ালস, ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ড কিংবা মেলবোর্নের ভিক্টোরিয়া পার্কের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখার জন্য কেউ নেই।
জনশূন্য হয়ে নীরবতা পালন করছে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত। সব যেন ঘরের ভেতর প্রার্থনারত। শুধুই কি তাই, সিসিলি পিসার হেলানো মিনার কিংবা ভ্যাটিকান নগরীতে এখন শুধু খোলা আকাশে উড়ছে কবুতর।
সমস্ত ইতালির সব নগরী আজ ভুতূরে রাজ্যে পর্যবসিত। সমস্ত মানুষ শহরকে নীরব করে দিয়ে নতমস্তকে অবরুদ্ধ।
বার্তা বিহীন করোনা ঝড়ে আজ যেন মানব চঞ্চল রোম ও মিলান নগরীর সমস্ত কিছু স্থবির হয়ে স্রষ্টার নিকট প্রার্থনারত।
ভালোবাসা আর মানবতার অগ্র-পথিক কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্বস্ত্রীক আজ গৃহবন্দী।
শান্তি প্রিয় মানুষ আর সবকিছু যেন উৎকণ্ঠা নিয়ে উপরওয়ালার দিকে তাকিয়ে আছে পরিত্রান পাবার আশায়।
নরওয়ের ট্রমসো পাহাড় আর বিশাল হ্রদ, মেক্সিকোর ভেনিসের কেউ আর নামছে না একটুখানি জলের অবগাহন নিতে।
কি অদ্ভুত,পবিত্র মক্কা নগরীর কাবা ঘরের চারপাশে নেই কোন লোকের সমাগম।
ইরানের উল্লেখযোগ্য শহরগুলোর যেদিকে তাকাবেন মনে হবে জনশুন্য কোন এক অপরিচিত শহর রাত পোহালেই শুধু টিভির পর্দায় মৃত্যু সংবাদ।
জার্মানির বিখ্যাত শহর বার্লিন এ শিশুদের জন্য পার্ক ও যাদুঘর কবে মুক্তি পাবে বন্দী-দশা থেকে তা বলা অনিশ্চিত।
স্পেনের বার্সেলোনায় তারকাদের নেই কোন আনাগোনা , পায়ে হেঁটে হেঁটে নগরীর লীলাভূমি আর সৌন্দর্য দেখার মতো বান্ধব যেন কেউ নেই।
চীনের উহানে উত্থান হয়ে আজ চৌদ্দটি রাজ্য তালাবদ্ধ। নেই কোন গাড়ির শব্দ, নেই কোন কলকারখানার উৎপাদন।
সব ধরণের যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বন্ধ, চার কোটি মানুষ আজ গৃহবন্দি, এ যেন ভুতূরে শহর ।
চীনের পর ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ইরান ও ইতালিতে প্রতিদিন কোন না কোন আত্মীয় স্বজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে।
মৃত মানুষের অবস্থান কখন কোথায় কিভাবে হচ্ছে কেউ জানতে পারছেনা। ডাক্তার নার্স নির্ঘুম ব্যস্ত সময় পার করছে।
ইউরোপ কাঁদিয়ে এখন এশিয়ার দারিদ্রতার মধ্যে ও হানা। দুবাইয়ের সুউচ্চ প্রাসাদ, সিংগাপুরের আলোকিত নগরী ও জনশুন্য হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
ক্রমান্বয়ে স্থবির হয়ে আসছে পাকিস্তানের নাঙা পর্বত, লাহোর ফ্রন্ট, কুন্দমালির রাসলেক ও আত্তাবাদ লেক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো।
ভারতের আজমীর, মুম্বাই, শান্তিনিকেতন, চেরাপুঞ্জি, দার্জিলিং কিংবা সিমলা ভুতুরে নগরীতে পরিণত হচ্ছে।
এ যেন নিয়তির ইচ্ছার কাছে নিরুপায় আত্মসমর্পণ। বাদ যায়নি ইন্দোনেশিয়ার বালি, নেপাল,ভুটান ও, যেসব জায়গার সৌন্দর্য দেখার মতো আজ কেউ নেই।
সব যেন আপন খেয়ালে বাধ্য হয়ে ঘর বন্দী হচ্ছে ক্রমাগত।
কিছু মানুষের ভুল আর অব্যবস্থাপনা তার সাথে নিয়ম না মানার প্রবণতা আজ আমার প্রিয় বাংলাদেশকে ও করেছে সংক্রমিত।
স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যটক এলাকা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ দাবি করলেও মানব উন্নয়ন কতখানি হয়েছে তা প্রতিনিয়ত প্রশ্নের সম্মুখীন।
সচেতনতা ও নিয়ম-কানুন মেনে না চলার রীতি আমাদের গ্রাস করে আছে। যেখানে সারা বিশ্বের যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ হয়ে আসছে।
বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী দেশগুলো আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইউরোপ আমেরিকা ও এশিয়ার আকাশে বিমানের শব্দে আতকে ওঠেনা ছোট্র শিশু।
পায়ে শিকল বেঁধে পড়ে আছে ইউরোপ টানেলের ভিতর চলা আন্তর্জাতিক ট্রেন। নৌ চ্যানেলে নেই কোন জাহাজের ভেঁপু বাজানোর শব্দ। সমস্ত বানিজ্যিক বন্দর গুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসা ও অর্থনীতি স্থবির হবার পথে।
এমতাবস্থায় আমাদের সকলকে সঠিক পথের যাত্রী হবার মানসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে তওবা করতে হবে মহান আল্লাহর দরবারে। স্রষ্টার উপর বিশ্বাস আর প্রার্থনায় মুক্তি মিলতে পারে এই সমরাস্ত্র বিহীন তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে।
শুধু বেঁচে থাকার জন্য নিয়মের মধ্যদিয়ে মাথা নত করো এক স্রষ্টায়।
মানবজাতির সমস্ত শক্তি, ক্ষমতা ও দম্ভকে ম্লান করে দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দিলো “ALLAH IS GREAT” সমস্ত ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তাআলা রাব্বুল আলামীন।
কে এ বিপ্লব।
লেখক ও মানবাধিকার কর্মী।
ঢাকা বাংলাদেশ।