রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন “আল্লাহর দল” এর সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ কামাল হোসেন সহ দায়িত্বশীল চার নির্বাহীকে গ্রেফতার করেছেন এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিঃ তারিখ সন্ধা ১৮.০৫ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেইট তেজতুরী বাজারস্থ প্যাসিফিক হোমস টাওয়ার এর নিচতলা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন “আল্লাহর দল” এর ০২ (দুই) জন সদস্যকে আটক করে। আটককৃত সদস্যরা হলো- ১. শেখ কামাল হোসেন (৩৫) (সেকেন্ড ইন কমান্ড), পিতা- মোঃ শেখ আইয়ুব হোসেন, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম- দেবদুয়ার, থানা- পাইকগাছা, জেলা- খুলনা, ২. মোঃ সোহেল রানা (৪০) (‘আল্লাহর দল’এর নির্বাহী, মামলা ও কারা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত), পিতা- আজহার, গ্রাম- বরিয়ালী, থানা- আগৈলঝাড়া, জেলা- বরিশাল।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেয়া তথ্য মতে এটিইউ দলটি ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিঃ তারিখ ২০.১০ ঘটিকায় মোহাম্মদপুর থানাধীন কাটাসুর এলাকাস্থ শেরে বাংলা রোডে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর আরো ০৩ (তিন) সদস্যকে আটক করে। আটককৃত সদস্যরা হলো- ৩. রবি আহমেদ পাপ্পু (২৮) (‘আল্লাহর দল’এর বিভাগীয় নায়ক, গাজীপুর) পিতা- মোঃ কুতুবউদ্দিন, গ্রাম- গুনানী, থানা- সদর, জেলা- নাটোর, ৪. মোঃ খালেকুজ্জামান (৩৭) (‘আল্লাহর দল’এর দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান), পিতা- মরহুম শামসুর রশিদ, গ্রাম- আহম্মদপুর, থানা- আমিনপুর, জেলা- পাবনা, ৫. মনিরুজ্জামান @ মিলন (৪২) (‘আল্লাহর দল’এর নির্বাহী, মামলা ও কারা দপ্তরের সহযোগী), পিতা- আবু বক্কর, গ্রাম- ধনার পাড়া, থানা- ফুলছড়ি, জেলা- গাইবান্ধা। গ্রেফতারকালে তাদের নিকট থেকে ১২ (বার) টি মোবাইল ফোন, ভিসা কার্ড ও কারাবন্দিদের টাকা প্রদানের ¯িøপ ও ৩৭০৬২ টাকা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে শেখ কামাল হোসেন (৩৫), ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত কামাল আল্লাহর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড (সহ অধিনায়ক) দায়িত্ব পালন করে আসছিল। তিনি ২০০৪ সালে আল্লাহর দলের প্রধান মতিন মেহেদীর নিকট শপথ গ্রহণ করে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলায় এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত মোঃ খালেকুজ্জামান ২০০০ সালে মতিন মেহেদীর মাধ্যমে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলায়, ২০১৭ সাল থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত সে ঢাকা জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে তিনি কেন্দ্রের দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মনিরুজ্জামান @ মিলন আল্লাহর দল প্রধান মতিন মেহেদীর ভাগ্নে। ১৯৯৯ সাল থেকে সে মতিন মেহেদীর একান্ত সহযোগী হিসেবে আল্লাহর দলের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহেল রানা ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তারা আল্লাহর দলের গ্রেফতারকৃত আসামীদের আদালতে মামলা বিষয়াবলী দেখাশোনা, কারাবন্দি ও তাদের আত্বীয়দের সাথে যোগাযোগ পূর্বক সহযোগীতায় নিয়োজিত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত রবি আহাম্মেদ পাপ্পু ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে গাজীপুর জেলায় বিভাগীয় নায়েক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল।
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত সদস্যরা দেশের বর্তমান নির্বাচনী ও ভোটাধিকার ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে তারা শয়তানের দল বলে অভিহিত করে, তারা দেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদকে স্বীকার করে না। তারা নিজেরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে না এবং অন্যকেও ভোটাধিকার প্রদানে নিরুৎসাহিত করে। তারা নারী নেতৃত্বে বিশ্বাস করে না এবং প্রচলিত যাকাত ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে, তাদের মতাদর্শের সদস্যের নিকট থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা উত্তোলন করে দেশ ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তারা ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের আদর্শের অনুকুলে সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
উক্ত আসামীরা ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ^াসকে পুজি করে বিপথগামী করা, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত “আল্লাহর দল” সংগঠন এর ব্যানারে উপরোক্ত চক্রান্তমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানার মামলা নং-১৪, তারিখ-০৪/০২/২০২১খ্রিঃ, সস্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯(সংশোধনী/২০১৩) এর ৬(২)/৮/৯(৩)/১০/১১/১২ ধারা রুজু করা হয়েছে।