আমরা সবাই হয়তো চা বানাতে পারি। আমরা চা বানানো টা যতটা সহজ মনে করি, চা বানানো কিন্তু ততটা সহজ না। আপনি হয়তো জানেন চা কীভাবে বানাতে হয় বা দুধ চা বানানোর সঠিক পদ্ধতি। তবে আসল চা কীভাবে বানাতে হয়- এটা আপনি জানেন না।
গরম পানিভর্তি কাপে টি-ব্যাগ ভিজিয়ে দেওয়া কিংবা পাত্রের ভেতর চা দিয়ে তাতে গরম পানি ঢেলে দেওয়া- এটা কে-না জানে। কিন্তু এতে আসল চা হয় না।আসল চা বানানো মানে চলন্ত গাড়িতে বসে দ্রুত আসনে ঠেস দিয়ে বসা নয়। অবশ্য কফির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু চা বানাতে হয় ধীরে, অর্থপূর্ণভাবে তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মোহাবিষ্ট করতে হয়। চা বানানো সহজ কাজ নয়। এ মত কয়েক প্রজন্ম ধরে চা তৈরিতে পারদর্শী বিশেষজ্ঞদের।তারা বলেন, “চায়ের রং, এর শরীর ও গন্ধ- এ তিনটি উপাদান চিনতে পারাটাই আসল বিষয় নয়। চলুন তাহলে আজকে জেনে নেই কিভাবে বানাবেন সঠিক দুধ চা।
দুধ চা বানানোর সঠিক পদ্ধতি :

প্রনালী ও উপকরনঃ
একঃ যে কোন পাত্রে চা রান্না করা উচিত নয়। চা রান্নার জন্য প্রায় প্রতিটা পরিবারেই আলাদা হাড়ি বা পাতিল বা পাত্র থাকে, সেটাই ব্যবহার করা উচিত। যে কয় কাপ চা রান্না করতে হবে, সেই কয়েক কাপ দুধ নিয়ে আরো হাফ কাপ বেশি নিতে হবে মানে সব সময়ে কিছু বেশি কারন আগুনের তাপে পানি উড়ে যায় বলে শেষে কম পড়ে যেতে পারে। যদি পাউডারের দুধ দিয়ে চা বানাতে হয়ে তবে সে কয়েক কাপ চা হবে সে কয়েক কাপ পানি নিতে হবে এবং কিছু বেশী। প্রতি কাপের জন্য এক চা চামচ (উচু উচু) পাউডারের দুধ নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে এই মিশ্রন না হবে বেশি ঘন না হবে বেশি পাতলা। আর যদি ঘরে গাভীর তরল দুধ থাকে এবং তা আগে থেকে জ্বাল দেয়া এবং ঘন হলে তাতে পানি মিশিয়ে মাঝারি তরলে পরিনত করতে হবে।
দুইঃ আগুনের তাপ মাঝারি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আগুনের তাপ বেশি হলে, চোখের পলকেই আপনাকে বোকা বানিয়ে দুধ পাত্র উপচে পড়ে যাবে, ফলাফল চা কমে যাবে এবং অনুমান আর ঠিক থাকবে না! কাজেই চুলার কাছেই থাকতে হবে, দুধ উপচে উঠার আগেই আগুন কমিয়ে দিতে হবে। (বাসায় চা রান্না করতে গিয়ে এমন দুধ উপচে ফেলা নূতন কিছু নয়, অনেকেরই হয়ে থাকে, আমারও হত, এখন আর হয় না।)
* দুধ চা বানাতে আমার একটা হালকা টিপস, দুধে কয়েকটা এলাচি ফাটিয়ে দিয়ে দিন। আনুমান, প্রতি দুই কাপের জন্য একটা হলেই ভাল।
* ভাল করে জ্বাল দেয়ার পর এবার চা পাতা দিন। পরিমান, এক কাপের জন্য গায়ে গায়ে এক টেবিল চামচ। তবে আপনি কেমন চা পাতা কিনলেন তার উপর নির্ভর করে। দামী চা পাতা হলে কম লাগবে। কারন দামী চা পাতা ভাল থাকে, রং এবং ঘ্রান বেশী বের হয়।
* চা পাতা দিয়ে ফাঁকে চায়ের কাপ সাজিয়ে ফেলুন। চাকুনী নিতে ভুলবেন না।
* মাধ্যম আগুনের আঁচ চলবে।রং টা মনের মত হল কি না দেখে নিন। মাধ্যম আঁচ চলবে। (যদি সবাই নরমাল চিনি পছন্দ করেন তবে এই সময়েও চিনি দিয়ে দেয়া যেতে পারে, চিনির পরিমান, এক কাপে গায়ে গায়ে এক চা চামচ হতে পারে। তবে কম দিয়েই স্বাদ দেখে লাগলে আরো দেয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন, চিনি বেশি হলেই কিন্তু চা আর চা থাকে না, শরবত হয়ে যায়। সুতারাং ভেবে এবং দেখে। এখন পরিবারে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন যারা নরমাল চিনি খান না তাই তাদের জন্য চিনি ছাড়া চা রান্না করতে হয়। নিজেরা প্রয়োজন মত তাদের চিনি নিয়ে থাকেন।
* এবার চা কাপে ঢেলে নিন।পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
চা বানানোর নিয়ম-কানুন:
চা বানানোর নিয়ম-কানুন চা বানানো— এ আর এমন কী। এমনটি ভাবাই স্বাভাবিক। আসলে বিষয়টি হলো এমন যে, আপনি হয়তো জানেন চা কীভাবে বানাতে হয়। তবে চা বানানোর সঠিক পদ্ধতিটি কী সেটি আপনার কাছে সুস্পষ্ট নাও থাকতে পারে। গরম পানিভর্তি কাপে টি-ব্যাগ ভিজিয়ে দেওয়া কিংবা পাত্রের ভেতর চা দিয়ে তাতে গরম পানি ঢেলে দেওয়া— এটা কে-না জানে। কিন্তু এতে আসল চা হয় না।
তাহলে চলুন জেনে নেই কীভাবে লাল চা বানাতে হয়?
** প্রথম কথা হচ্ছে, আপনাকে অবশ্যই ভারতীয় অথবা শ্রীলঙ্কার চা ব্যবহার করতে হবে। স্বীকার করি, চীনা চায়ের এমন কিছু গুণ আছে যেগুলো এযুগে অপছন্দ করার জো নেই – খরচ বাঁচায় তো বটেই, সাথে আবার দুধ ছাড়াও খেতে পারা যায় চাইলে – কিন্তু তেমন উদ্দীপনা জাগে না আসলে খেয়ে। আপনার নিজেকে আগের চাইতে জ্ঞানী, সাহসী কিংবা আশাবাদীও মনে হবে না এটা খাওয়ার পর। ‘চমৎকার এক কাপ চা’ স্বস্তি-জাগানিয়া এই কথাটা কেউ যদি কখনো উচ্চারণ করে, আপনি নিশ্চিন্তে ধরে নিতে পারেন যে সে ভারতীয় চায়ের কথা বলছে।
**দ্বিতীয়ত, চা সবসময়েই অল্প করে বানাতে হয় – পটে আর কি! হাঁড়িতে চা বানালে মোটেও স্বাদ পাবেন না আপনি; আর ইয়া বড় ডেকচিতে যে চা বানায় মিলিটারিরা, ওটা খেতে গেলে চুনকাম আর তেলচর্বির মত লাগে। পট হতে হবে মাটি কিংবা চীনামাটির তৈরি। রূপো কিংবা ব্রিটানিয়ার পটে চা একেবারে বিশ্রী হয় খেতে, এনামেলের পট তো আরো বাজে। তবে কেন যেন দস্তার পটে চা বেশ ভাল হয়, ইদানিং তেমন পাওয়াই যায় না যদিও!
**তিন নম্বর কথা, পটটাকে আগে থেকেই তাতিয়ে নেবেন আগুনে। এমনিতে যেমন গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়, সেটা না করে উনুনের ওপর রাখলেই ভাল কাজে দেয়
**চতুর্থত, চা-টা কড়া হতে হবে। সোয়া গ্যালনের পট কানায় কানায় ভরতে চাইলে উঁচু উঁচু করে ছয় চা-চামচ চাপাতা দেবেন। টানাটানির এই সময়ে অবশ্য সপ্তাহের প্রতিদিনই এই নিয়মে চলতে পারবেন না আপনি; তবে আমার বিশ্বাস, বিশ কাপ পানসে চায়ের চেয়ে এক কাপ কড়া চা অনেক ভাল। যে কোন সত্যিকারের চাপ্রেমীই যে কেবল কড়া চা পছন্দ করেন তাই নয়, বরং একেকটা বছর গড়ানোর সাথে তারা আরো বেশি কড়া চা পছন্দ করেন – বুড়ো পেনশনারদেরকে যে কেন অতিরিক্ত রেশন দেওয়া হয় সে তো বুঝতেই পারছেন এইবার!
**পাঁচ নম্বরে বলছি, চা সরাসরি পটে দিয়ে দেবেন। ওটাকে অবশ্যই ছাঁকনি, মসলিনের ব্যাগ কিংবা এরকম কোন জেলে পুরবেন না। চাপাতা নাকি ক্ষতিকর – এমনটা ভেবে কোন কোন দেশে পটের নলের ভেতরে ছোট্ট ছাঁকনি ঝুলিয়ে দেয় সেগুলো আটকানোর জন্য। আসল কথা হচ্ছে, আপনি কোনরকম সমস্যা ছাড়াই ইচ্ছেমত চাপাতা গিলে ফেলতে পারেন, আর পটে চা ছেড়ে না দিলে এটা কক্ষণোই ঠিকমত মিশবে না।
**ষষ্ঠত, পটটাকে কেতলির কাছে নিয়ে যেতে হবে, উল্টোটা করা যাবে না কোনভাবেই। আঘাত হানার সময় পানিটাকে ফুটতে হবে, যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে পানি ঢালার সময় একে আগুনের ওপর রাখতে হবে। কেউ কেউ বলে, ফোটানোর জন্য টাটকা পানি ব্যবহার না করলে হয় না, তবে আমি কখনো এর মধ্যে আলাদা কোন বিশেষত্ব দেখি নি।
**সাত, চা বানানোর পর একে নাড়বেন, আরো ভাল হয় যদি জোর একটা ঝাঁকুনি দিতে পারেন। তারপর পাতাগুলোকে থিতানোর সময় দিতে হবে।
**আট নম্বর নিয়ম হচ্ছে, ভাল একটা ব্রেকফাস্ট কাপ থেকে চা খেতে হবে আপনাকে – মানে বেলনাকৃতির যেগুলো সেগুলো; চ্যাপ্টা আর চিকন কাপগুলো না। ব্রেকফাস্ট কাপে চা ধরে বেশি, আর অন্যটায় ভালমত খেতে শুরু করার আগেই দেখবেন চা অর্ধেক ঠাণ্ডা হয়ে বসে আছে।
শেষ কথা হল, চায়ে চিনি দেওয়া যাবে না – যদি না আপনি রাশানদের ঢঙে চা খান। জানি, খুব ভালভাবেই জানি যে এই ব্যাপারে আমি সংখ্যালঘু। কিন্তু তাতে কী? চিনি দিয়ে চায়ের মজা যদি নষ্টই করে ফেললেন তবে কোন্ মুখে নিজেকে সত্যিকারের চাপ্রেমী দাবি করেন আপনি? চায়ে মরিচ কিংবা লবণ দিতে চাওয়াটাও একইরকম বোকামি। বিয়ারের যেমন তেতো হওয়ার কথা, চায়েরও ঠিক তাই। চিনি দিচ্ছেন – এর অর্থ আপনি চা নয়, বরং চিনির স্বাদ পরখ করছেন। তার চেয়ে বরং গরম পানিতে চিনি গুলিয়ে খেলেই হয়!
কিছু লোক বলে যে তাদের নাকি চা ভাল লাগে না, কেবল উষ্ণ আর সতেজ থাকার জন্যই নাকি তারা চা খান – তাই চায়ের স্বাদ তাড়াতে চিনি দেন। এই সব বিভ্রান্ত মানুষদেরকে বলে রাখছি: অন্তত দুটো সপ্তাহ চিনি ছাড়া চা খেয়ে দেখুন, আর কোনদিনও চায়ে মিষ্টি দিতে চাইবেন – এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
ওপরের কথাগুলো যে কেবল চা বানানো নিয়ে বিতর্কিত ব্যাপারগুলোই তুলে এনেছে এমন নয়, পুরো কাজটা যে কেমন কৌশলী হয়ে উঠছে দিনকে দিন – সেটাও বোঝা যাচ্ছে এখান থেকে। চায়ের পট নিয়ে এক রহস্যময় সামাজিক রীতি গড়ে উঠেছে (যেমন, পিরিচ থেকে চা খাওয়াটা এত বাজেভাবে দেখা হয় কেন বলতে পারেন?), শুধু তাই নয় – ভবিষ্যদ্বাণী, মেহমানদের আসার খবর আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া, খরগোসকে খাওয়ানো, পোড়া ক্ষতের পরিচর্যা আর কার্পেট ঝাড়ু দিতে চাপাতার ব্যবহার নিয়েও যথেষ্ট লেখা যায় চাইলে। আপনার রেশন থেকে ঐ বিশ কাপ ভাল, কড়া, যত্ন নিয়ে বানানো জিনিসগুলোকে মুচড়ে বের করে আনতে চাইলে পট গরম করে নেওয়া কিংবা ফুটন্ত পানি ব্যবহার করার মত ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে নজর না দিলেই নয়!
হোটেলের “মালাই চা” :
আমরা সবাই কম বেশি চা পান করে থাকি। বাংলাদেশে জন্মেছেন অথচ চায়ে চুমুক দেননি, সেটা মোটামুটি অসম্ভব একটা ব্যাপার। যতই বিদেশী পানীয়ের রমরমা বাজার থাকুক না কেন, বাংলাদেশে আজও চা প্রয়োজন নিত্যদিনের জীবনে।
সকালে নাশতার টেবিল হতে শুরু করে তুমুল আড্ডার ঝড়ে… এক কাপ চা না হলে কি চলে নাকি? আর অথিতি আপ্যায়নের জন্য চা অবশ্যই প্রয়োজন। নানান দেশে নানান ভাবে চা পান হয়। চাইনিজ জাপানিজরা পছন্দ করে থাকে কেবল চায়ের লিকার… বাহারি রঙ আর খুশবু দিয়ে ঠাসা লিকার মানেই আনন্দ তাদের। অন্যদিকে ব্রিটিশরা পছন্দ করে হাল্কা লিকারের চা। আবার ভারতে ভীষণ জনপ্রিয় মশলা সহযোগে তৈরি করা মাসালা চায়ে। কিন্তু আমাদের দেশে? বাংলাদেশে চায়ের অর্থটা এদের সবার চাইতে একটু ভিন্ন। বাংলাদেশে এক কাপ ভালো চা হবে কড়া লিকারের, সাথে থাকবে ঘন দুধ। আর বাড়তি খানিকটা মালাই হলে তো কথাই নেই… মালাই দেয়া কড়া লিকারের ঘন এক কাপ চা কোন চা-প্রেমী বাঙালি ভালবাসবে না? তাই তো ভালো চা বানাতে জানা হোটেল গুলোর এতখানি কদর বাঙালির রসনা বিলাসে। ভাবছেন, চায়ের আবার রেসিপি কি? চা পাতা জ্বাল দিয়ে দুধ মিশিয়ে নিলেই তো হয়ে গেলো, তাই না? … ভুল, একদমই ভুল। কেবল চা পাতা জ্বাল দিতে জানলেই হবে না, এক কাপ “পারফেক্ট” চা বানাতে হলে আপনাকে জানতে হবে সঠিক পরিমাপ আর নিখুঁত রেসিপি। কেবল তাতেই আপনি উপভোগ করতে পারবেন চায়ের স্বাদ, গন্ধ পুরোপুরি। আসুন, আজ আপনাদের জানাই একটা গোপন রেসিপি। অনেকেই অভিযোগ করেন যে ঘরের চা কখনও হোটেলের মতন হয় না। রেসিপি জেনে নিন, আজ থেকে আপনার ঘরের চাও হবে ঠিক হোটেলের মতন। এবং অবশ্যই নেই কোনও বাড়তি যন্ত্রণা
উপকরণ :
দুধ- ৩ কাপ চা পাতা- ৪ টেবিল চামচ কিংবা ৪টা টি ব্যাগ চিনি- স্বাদমত ডিমের কুসুম- ১টি কুসুমের অর্ধেক (নিরামিষাশীরা দিবেন না) এলাচ- ১ টি (ঐচ্ছিক) জাফরানের দানা- এক চিমটি (ঐচ্ছিক) দুধের সর বা মালাই- ইচ্ছামত এলাচ আর জাফরান দানা ঐচ্ছিক হলেও কখনও ব্যবহার করে দেখবেন। অন্যরকম একটি স্বাদ তৈরি হবে। যারা ডিমের কুসুম দিতে চান না, তারা খুব ভালো কোনও বাটার বিস্কুটের গুঁড়া ব্যবহার করবেন। বিস্কুট যেন একদম টাটকা হয়।
প্রণালী :
দুধের মাঝে ডিমের কুসুম বা বিস্কুটের গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে দিন। তারপর চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিন। দুধ যেন উথলে না ওঠে, বা উপচে না পড়ে। দুধ ফুটে উঠলে এলাচ দানা দিয়ে দিয়ে দিবেন, জাফরান দানা দিতে চাইলে ছড়িয়ে দিবেন সেটাও। এবার দিয়ে দিন চা পাতা, এবং জ্বাল হতে দিন। জাফরান দানার কারণে সুন্দর একটা গভীর কমলা- বাদামী রঙ আসবে। জাফরান না দিলেও সমস্যা নেই, আপনার চা পাতাটি ভালো হলে সুন্দর রঙ আপনা থেকেই আসবে। পছন্দ মতন রঙ ধরা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, চা যত কড়া খেতে চান তত বেশি সময় জ্বাল দিবেন। অনেকেই ভাবেন যে চায় ঢালার পর মালাই ছড়িয়ে দেয়া উচিত। এটা একেবারে ভুল ধারনা। চা ঢালার আগেই প্রতিটি কাপে অল্প অল্প করে মালাই দিয়ে দিন। এবার চা ঢালুন। তবে একবারে ঝপাস করে অনেকখানি নয়। চায়ের কাপে ফেনা তুলবার পদ্ধতি নির্ভর করবে আপনার ঢালবার কৌশলের উপরে। ছাঁকনিটা একটু ওপরে ধরুন, তারপর সরু ধারায় চা ঢালুন। সরু ধারায় চা গিয়ে যখন কাপের মালাইয়ের ওপরে পড়বে, আস্তে আস্তে আপনার কাপ ভরে উঠবে কেবল চায়ে নয়… সাথে সুন্দর শুভ্র ফেনায়। ঠিক হোটেলের মতই!! সুতরাং, ভুলে যান হোটেলের চায়ের কথা। বাড়িতে বানান নিজেই।
সাত রঙের চা তৈরি :

শ্রীমঙ্গলের সেই বিখ্যাত সাত রঙের চা এর কথা শুনেন নি এমন মানুষ খুব কমই আছেন, কেউ বা খেয়েছেন ও। কিন্তু কেউ কি বাড়িতে বানিয়েছেন? আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সাত রঙ এর চায়ের রেসিপি। দেরি না করে এক্ষুনি চলুন দেখে নেই কীভাবে সাত রঙের চা তৈরি করতে হয়। তারপর ঘরেই বানিয়ে ফেলুন সাত রঙের চা।
আসুন জেনে নেই আরো কয়েকটি রেসিপি
উপকরণঃ
চা পাতা
চিনি
কনডেন্স মিল্কের
প্রণালি :
প্রথমে ১ টেবিল চামচ চিনির সাথে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে সিরা করে নিতে হবে। পরিমাণ মতো পানি এবং চা পাতা চুলায় জ্বাল দিয়ে লিকার তৈরী করে নিন। টেবিল চামচ লিকার ও ১ চামচ সিরা মিশিয়ে রাখুন। তারপর ২ টেবিল চামচ কনডেন্স মিল্কের সাথে ১ টেবিল চামচ লিকার মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর একটা কাপে প্রথমে প্লেইন সিরা ঢেলে নিয়ে ২০ সেকেন্ড পরে সিরা মেলানো লিকার টা দিতে হবে। এর ৩০ সেকেন্ড পরে কনডেন্স মিল্কের মিশ্রন দিতে হবে। তার ১ মিনিট পর বাকি লিকারটুকু গরম করে একদম কাপের ধার ঘেষে আস্তে আস্তে ঢালতে হবে। এভাবে ঢেলে ঢেলে ৭টি লেয়ার তৈরি করুন।
আধা ও লেবুর চা :
আধা লেবুর চা খুবই উপকারি। সাধারণ জ্বরসর্দি অথবা গলা ব্যাথায় এই চা ম্যাজিকের মত কাজ করে। যারা ডায়াবেটেসে ভুগছেন এটি তাদের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর। আর ঝকঝকে পরিস্কার ত্বক পেতে প্রতিদিন খেতে পারেন এই চা এক কাপ করে।
আদা হজমপ্রক্রিয়া কে তরান্বিত করে। বিশেষ উপকারি এই চা মধু অথবা চিনি দুটো দিয়েই উপভোগ করতে পারেন।
এখন মৌসুম বদলের সময়। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ঠাণ্ডা কাশিতে। অসহনীয় গলা ব্যাথা থেকে ঝটপট আরাম পেতে খেতে পারেন এক কাপ আদা লেবুর চা।
উপকরণ :
দুই কাপের বেশি পানি। ২ ইঞ্চি খোসাসহ আদা। লেবুর রস ১ টেবিল-চামচ। চা পাতা আধা চা-চামচ। স্বাদমতো মধু বা চিনি (ইচ্ছে হলে নাও দিতে পারেন)।
পদ্ধতি :
পানি ভালোমতো ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে আদা থেতলিয়ে দিয়ে দিন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট পর চা পাতা ও চিনি দিন। ভালোমতো ফুটিয়ে চুলা বন্ধ করে লেবুর রস দিন।
যাদের ডায়াবেটিস আছে চিনি বাদ দিয়ে করুন।
চায়ের বিভিন্ন স্বাদ :
চা আমাদের সবারই দৈনন্দিন জীবনের নিত্যসঙ্গী। আগে চা বলতে শুধু সাধারণ চা পাতাকে বোঝাতো। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যায়। এই বিভিন্ন চায়ের স্বাদ ও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নানা স্বাদের এই চা যেমন আমাদের নানা স্বাদে মাতিয়ে তোলে তেমনি এর আছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুন। আপনি ইচ্ছে করলে গুড়া দুধ, চিনি, চা পাতা, লেবুর পাতা, আধা, এলাচের খোসা, দারচিনি দিয়ে তৈরি করতে পারেন মশলা চা।
ব্ল্যাক টি :
সাধারণ চা পাতা থেকে এটি তৈরি করা হয়। নাম কালো চা হলেও এটির রঙ হয় লাল। লাল চা আর কালো চায়ের মধ্যে পার্থক্য এতটুকুই লাল চা স্বাদে কিছুটা ধোঁয়াটে গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
গ্রিন টি :
এটিও বেশ জনপ্রিয়। বাজারে গ্রিন টি অত্যন্ত সহজলভ্য। গ্রিন টি আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি সুন্দর স্বাস্থ্য গঠনেও সাহায্য করে।
লেবু চা :
লেবু চা ওজন কমাতে অসাধারণ কার্যকরী। কালো চা বা লিকার চায়ের তুলনায় পুষ্টিগুণে এটি বেশি উপকারী। এর রেসিপিতে আপনাকে লিকার চা তৈরি করে পরিবেশনের সময় পরিমাণমত লেবুর রস মিলিয়ে দিলেই হবে।
আদা চা :
সাধারণ সর্দি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথায় আদা চায়ের উপকারিতা আমরা প্রায় সবাই জানি। গরম এক কাপ চা জাদুর মত মাথা ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। এর রেসিপিতে আপনাকে পানি গরম করার সময় আদা টুকরা করে দিয়ে কিছুক্ষন জ্বাল দিতে হবে। এরপর চা পাতা ও চিনি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এছাড়া চা বানিয়ে তাতেও আদার কিছুটা রস মিশিয়ে চা পান করা যায়।
তুলসি চা :
অসাধারণ উপকারী এই তুলসি চা সর্দিজনিত মাথা ব্যাথা, কাশি, সর্দি জ্বর ও ঠান্ডা লাগা দূর করে।এটি দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পেতেও সাহায্য করে। ২ থেকে ৩ কাপ পানিতে ৫/৬ টি তুলসি পাতা ফুটতে দিন। পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণ হয়ে এলে তা নামিয়ে গরম গরম পান করুন যন্ত্রণার উপশম হবে। এটি অ্যাসিডিটি নিরাময়ে অনেক জনপ্রিয়। তুলসি চা প্যাকেটে বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়।
পুদিনা চা :
পুদিনা চা পেটের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা চা বানাতে তাজা অথবা শুকনো দু’রকম পাতাই ব্যবহার করা যায়। ২ কাপ পানি, দেড় কাপ তাজা পাতা অথবা ১ চা চামচ শুকনো পাতা, স্বাদের জন্য চিনি, মধু ও লেবু দেয়া যেতে পারে। পানি ফুটিয়ে পান করার ২-৩ মিনিট আগে গরম পানিতে পাতা দিয়ে রেখে দিতে হবে নির্যাস বের হবার জন্য।
মশলা চায়ের রেসিপি :
নানা স্বাদের চা যেমন আমাদের নানা স্বাদে মাতিয়ে তোলে তেমনি এর রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুন। আপনি ইচ্ছে করলে গুড়া দুধ, চিনি, চা পাতা, লেবুর পাতা, আধা, এলাচের খোসা, দারচিনি দিয়ে তৈরি করতে পারেন মশলা চা। তাহলে চলুন দেখে নেই মশলা চা এর রেসিপি।
উপকরণ :
পানি ৪ কাপ
গুঁড়া দুধ –১২ চা চামচ
চা পাতা –৪ চা চামচ
চিনি -৪ চা চামচ (সাধ্যমত)
আদা -৩ চা চামচ আদা কুচি
এলাচের খোসা –৬ টা
দারচিনি- ২ টুকরা
প্রণালী :
চায়ের ডেকচিতে পানি, দুধ, চিনি, এলাচের খোসা, আদা, দারচিনি মিশিয়ে ভাল করে জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল হলে চা পাতা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে ছেঁকে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার মশলা চা।