চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ।
এ রিপোর্ট তৈরির সময় পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নগরীর পাহাড়তলী ও ঝাউতলা এলাকায় সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগেছে।
ভোটের দিন বুধবার সকাল ৮ ঘটিকার দিকে নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী সালাউদ্দিন কামরুলের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তারই ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের কর্মী নিজামউদ্দীন।
এছাড়া নগরীর ঝাউতলায় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আলাউদ্দিন নামে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত আলাউদ্দিন পেশায় রাজমিস্ত্রী এবং তিনি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থীর সদস্য। এখন পর্যন্ত সেখানে থেমে সংঘর্ষ চলছে এতে প্রায় ১৫ জনের আহত হওয়ার খবর মিলেছে। ৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে প্রকাশ।
এদিকে নগরীর লালখানবাজারে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার পর লালখান বাজার শহিদনগর স্কুলের ভোট কেন্দ্রের পাশে সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী এফ কবির মানিকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ উঠেছে, মানিকের পক্ষ নিয়ে লালখানবাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারীরা আবুল হাসনাত বেলালের নির্বাচী অফিস ভাঙচুর করতে যায়।
তখন বেলালের অনুসারীরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রথমে তারা হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। পরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেলালের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায়।
বেলালের অভিযোগ, ভোটার স্লিপ দেয়ার কাজে যুক্ত তার এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। তাদের ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে দুই পক্ষে প্রায় ১৫ মিনিট ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি গিয়ে দুই পক্ষকে ধাওয়া নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ সময় মাসুমের অনুসারীরা মতিঝর্ণার দিতে সরে যান এবং বেলালের অনুসারীরা চলে যান লালখানবাজারের দিকে।
বর্তমানে র্যাব-পুলিশ দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থানে নিয়েছে। ভোটগ্রহণ আবার শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে এপর্যন্ত ২০ জনের আহত হওয়ার খবর জানাগেছে।
এদিকে আসাদগঞ্জে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আসাদগনজ ছোবাহানীয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এতে পাঁচ জনের মত আহত হয়েছে। এ সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।
তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি সকাল থেকে ভালো। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও দেখছি।’
তাছাড়া সকালে পুলিশ লাইন কেন্দ্রে সংঘর্ষ এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম সহ আরও পাঁচজন সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রায় ১০ জন এর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবারই প্রথমবার সবকটি কেন্দ্রে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন।
প্রসঙ্গত, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবু আছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। কেননা ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছে।