১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়মী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভা করবেন। তা নানাভাবে চট্টগ্রাম শহরে প্রচার করা হয়।
আগের দিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘোষণা দেয়, লালদীঘির মাঠে কোনো জনসভা করতে দেওয়া হবে না। স্টেজ বানানোর সরঞ্জাম পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে।
পুলিশের এমন আদেশ জারির কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় শেখ হাসিনা পার্শ্ববর্তী জেলা পরিষদ মার্কেটের বারান্দা থেকে তাঁর বক্তব্য দেবেন । সকাল ১১টা নাগাদ তাঁকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানটি চট্টগ্রাম পৌঁছে। বিমান বন্দর থেকে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা একটি খোলা ট্রাকে তোলেন নেত্রীকে। পথে পথে তিনি একাধিক পথসভায় বক্তৃতা দেন। দুপুর ২টা নাগাদ তিনি লালদীঘির দুইশ’ গজ দূরে কোতোয়ালি থানার মোড়ে পৌঁছান। চারদিকে তখন নেতাকর্মীদের এরশাদবিরোধী স্লোগান। হঠাৎ কোনো উস্কানি ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড়ে দাঁড়ানো পুলিশ সদস্যরা শেখ হাসিনার ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়তে থাকেন। উদ্দেশ্য একটাই, শেখ হাসিনাকে হত্যা করা।
উপস্থিত নেতাকর্মী, সাধারণ জনতা পুলিশের ছোড়া গুলি আর টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ার কারণে পিছু হটে দিক্বিদিক ছুঁটতে থাকে। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য নেতাকর্মীরা তাঁর চারপাশে মানব প্রাচীর তৈরি করেন। ট্রাকে অবস্থানরত আইনজীবীরা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকটি নিয়ে পাশের রাস্তা দিয়ে আদালত পাহাড়ে ওঠে পড়েন। তখন চারদিকে গুলিবিদ্ধ অসংখ্য মানুষ কাতরাচ্ছে। অনেক লাশ পাশের বড় ড্রেন ও রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কর্মীরা তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাতে পুলিশ ২৪টি লাশ হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায়, যার মধ্যে সব ধর্মের মানুষই ছিল। সেই রাতেই জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব লাশকে অভয় মিত্র শ্মশানঘাটে পুড়িয়ে ফেলা হয়। দুইশতাধিক মানুষ আহত হয় তখন।
নিহত যাঁদের পুঁড়িয়ে ফেলা হয় তাঁরা হলেন, হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।
এদিকে একটু সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শেখ হাসিনাকে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সার্সন রোডের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন শহরে নেমে আসে এক ধরনের নিস্তব্ধতা, যেমনটি কারফিউর সময় দেখা যায়। পেশাজীবীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার মতবিনিময়ের অনুষ্ঠানটিও বাতিল করতে হয়। কারণ পুরো এলাকা পুলিশ ঘিরে ফেলেছিল।
দু’বছর পর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তের ভার পড়ে সিআইডির ওপর।
সিআইডি ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। আবারও আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুলিশের আট সদস্যকে আসামি করে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
প্রায় ৩২ বছর পর গত ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি মো. ইসমাইল হোসেন একটি হত্যাকাণ্ড, যাকে চট্টগ্রাম গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করা হয় তার রায় ঘোষণা করেছেন ঘটনার ৩২ বছর পর। মামলার বাদী আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। রায়ে আদালত পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে ২৪ জন মানুষ হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, গোপাল চন্দ্র (জেসি) মণ্ডল ও আব্দুল্লাহ। তারা প্রত্যেকেই পুলিশের সাবেক সদস্য। তাদের মধ্যে একমাত্র গোপাল চন্দ্র পলাতক, বাকিরা কারাগারে আছেন।খানসামায় প্রধানমন্ত্রী’র উপহার স্বপ্নের পাকা ঘর পেল ৪১০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার
এমডি এস সোহাগ,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের খানসামায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র উপহার ২শতাংশ জমিসহ স্বপ্নের পাকা ঘর পেল ৪১০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। শনিবার (২৩ জানুয়ারী) সকালে ভিডিও কনফারেন্সে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় খানসামা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স হলরুম প্রান্তে ইউএনও আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম এর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালী যুক্ত ছিলেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী,এমপি এবং আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হাতেম, ওসি শেখ কামাল হোসেন, পিআইও মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা শাহ ও সাধারণ সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভীন, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্বপ্নের পাকা ঘরের মালিকগণ।
জমির কাগজপত্র ও গৃহ প্রদানের সনদ পেয়ে আবেগাপ্লুত কন্ঠে সবার মুখেই ছিল শেখের বেটি হাসিনার প্রশংসা ও দোয়া। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,”আশ্রয়ণের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার” এই স্লোগানে এবং “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪১০ টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য খাস জমিতে গৃহ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
এতে প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান করে সেই জমির ওপর দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি গৃহের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্ধারিত নকশা