বাতায়ন24.কম
রবিবার, জুন 4, 2023
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
বাতায়ন24.কম
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
মূলপাতা মূলপাতা সাহিত্য সম্ভার ছোট গল্প

খড়ি

সুমিত মুখার্জী

batayan24 দ্বারা batayan24
মে 18, 2023
ভিতরে ছোট গল্প
0 0
0
0
শেয়ার
3
অবলোকন
ফেসবুকে ভাগ করুনটুইটারে শেয়ার করুন
শেয়র করুন

অগ্রহায়নের শেষের দিক শীতের আগমনি বার্তা দিচ্ছে রাত এগারোটার উপরে বাজে এতক্ষন জানালা খোলাই ছিল কিন্তু আর খোলা রাখা যাচ্ছে না বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা  বাতাস দিচ্ছে। গায়ের চাদরও এই বাতাসের কাছে হার মানছে তাই জানালাটা বন্ধই করে দিলাম,বাহিরে চাঁদের আলো ছিল,সম্ভবত আজকে পূর্নিমার রাত্রি।দিনলিপি টা  খুলে বিছানায় শুয়ে  খড়ির কথা লিখতে বসেছি কিন্তু লিখতে পারছি না কিছুতেই খড়ির কথা মনে পড়লেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, চশমার গ্লাসটা কিছুক্ষন পর পর পরিষ্কার করতে হয়,এখন আমি গ্লাস ছাড়া ভালো দেখতে পাই না।খড়ি হ্যাঁ আজ আপনাদের আমার খড়ির গল্প বলবো আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখনকার কথা।আমি  তখন  চন্দননগর  ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেনট অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চান্স পেয়েছি, ছোটবেলা থেকেই আমার কম্পিউটার প্রোগামিং এ ঝোঁক ছিল।দিদির হাত ধরে প্রোগ্রামিং শেখা তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বড় হয়ে প্রোগ্রামার হবো ছোটবেলা থেকেই আমি খুব শান্ত-শিষ্ট কারো সাথে খুব একটা মেলামেশা করি না একা একা থাকতেই পছন্দ করি।যাক সেসব কথা, চন্দননগর আমার জন্য সম্পূর্ন নতুন একটা শহর এর আগে আমি এখানে কখনো আসি নি হোস্টেলেও সিট মেলেনি।

দিদির এক পরিচিত বান্ধবী  ছিল তিনিই আমার জন্য  একটা বাড়ি জোগাড়  করে দিলেন,ওনার ছোটভাই ও আমাদের কলেজে তে চান্স পেয়েছে নাম ঋদ্ধি আমরা দুজন একটাই ঘরে উঠলাম।ক্লাসের প্রথম দিন যখন  স্যার সকলের পরিচয় জিজ্ঞাসা করছিলেন  তখন একে একে সকলেই নিজেদের পরিচয় দিচ্ছিল,পেছন থেকে এক মেয়ের কন্ঠ স্বর শুনতে পেলাম  মেয়েটি তার পরিচয় দিল খড়ি ভট্টাচার্য , আদি কালীবাজার,কন্ঠতে কেমন যেন জাদু রয়েছে ।আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম  তার চুলগুলো পাখার বাতাসে মৃদু উড়ছে,কিছুক্ষণ  পরে লক্ষ্য করলাম মেয়েটিও আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে  তাকিয়ে রয়েছে। আমি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম ,এতো মিষ্টি চেহারার মেয়ের দৃষ্টি  এত বিচ্ছিরি হওয়া উচিৎ নয়,আমি মৃদুভাষী ছিলাম বলে কোন মেয়ের সাথেই ঘনিষ্টতা হয়নি,মেয়েদের সাথে কথা বলতেই আমার ভয় হয়,তাই আমার কোন মেয়ে বন্ধু ও হয়নি,ক্লাস শেষে আমি আর ঋদ্ধি  কলেজের লাইব্রেরিতে বসে গল্প  করছিলাম এমন সময় খড়ি এসে উপস্থিত । আমি বেশ কয়েকবার চোখের পাতা ফেললাম  সে ঋদ্ধির  দিকে তাকিয়ে বলল

.. এক্সকিউজমি আমি কি ওর সাথে একটু একা কথা বলতে পারি?

খড়ির কন্ঠস্বর স্বাভাবিক ঋদ্ধি  উঠে গেল।আমিও মনে মনে একটু সাহস পেলাম সে আমার সামনের চেয়ারে এসে বসল।

 তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

.. এই যে মিস্টার,কি যেন নাম বলছিলেন আপনার?

.. সুমিত ।সুমিত মুখার্জী

.. সুমিত ! তা জীবনে কি কখনো মেয়ে দেখেননি?মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে?

.. আমি কখন আপনার দিকে তাকালাম?

.. ওহ্ তাই কখন তাকালাম! এতো ন্যাকামি  করছেন কেন? কি মনে করেছেন আমি দেখিনি?

.. আপনি দেখেছেন?

.. অবশ্যই দেখেছি আপনি আমার দিকে তাকিয়েছিলেন।

.. তাহলে তো আপনিও আমার দিকে তাকিয়েছেন(আমি মুচকি হেসে বললাম)

.. ওরে বাবা কি বুদ্ধিমান ছেলে রে!সাবধান আর কোনদিন তাকিয়েছেন তো চোখ উপড়ে ফেলব।

.. আমি কারো দিকে তাকাই না।

খড়ি আর কিছু বলল না,আমার সামনে দিয়ে উঠে চলে গেল,আমি খড়িকে  কিছুক্ষন দেখে  ঋদ্ধির দিকে তাকালাম, ঋদ্ধি দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছিল,তার হাসির কারন বুঝতে পারছিলাম না,কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো

.. কিরে প্রপোজ ট্রপোজ করে ফেললো নাকি?

.. আমাকে কেন প্রপোজ করতে যাবে?

.. নাহ্! তুই দেখতে তো খুব একটা খারাপ না।তোকে দেখে তো ভদ্র বলেই মনে হয়।

.. কি সব যে বলছিস  ! চল ক্লাসে চল

এভাবেই দুই মাস কেটে গেল, দুই মাস পরেই বুঝতে পারলাম খড়ি ঠিক আমার উল্টোটা।আমি যতটা শান্ত ও ঠিক ততোটাই চঞ্চল।

পূরো ক্লাস ওই মাতিয়ে রাখে,আমার বন্ধু হাতে গোনা কয়েকজন আর ওর বন্ধু ক্লাসের সকলেই আমাকে বাদে।

এভাবেই আমাদের প্রথম সেমিষ্টার শেষ হয়ে গেল,ছোটবেলা থেকেই আমি ভালো ছাত্র ছিলাম,লেখাপড়ায় মনোযোগ ছিল ভালো।রেজাল্টের দিন দেখা গেল আমি প্রথম হয়েছি।সকলেই আমাকে অভিবাদন জানালো,আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন সকলের সাথে নতুন করে পরিচিত হচ্ছি,কয়েকদিন পর যখন আমি লাইব্রেরিতে বসে নোট করছিলাম।খড়ি আমার সামনে এসে বসল আমি মাথা তুলে তাকালাম ,এই মেয়েটা আমার সামনে এর আগে কয়েকবার পড়েছিল,যখনই আমার চোখে চোখ পড়তো আমি চোখ ফিরিয়ে নিতাম,বরাবরের মতো এবারও তাই করলাম,আমি নোট করায় মনোযোগ দিলাম।

আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি খড়িকে আমি   যতবারই  দেখি ততবারই আমার বুক ধুকপুক করতে থাকে,এরকমটা কেন হয়  আমি বুঝিনা।খড়ি মৃদু স্বরে একটা কাশি দিল যেন আমার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছে,আমি তাকালাম না।এবার আমার নাম ধরে ডাকলো,সুমিত আমি খড়র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কিছু বলবে? খড়ি বলল

.. তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল,একটু আমার সঙ্গে বাহিরে যেতে পারবে?

আমি খড়ির  সাথে বাহিরে গেলাম প্রথম

কিছুক্ষন আমরা কেউই কথা বললাম না,আমিই প্রথমে নীরবতা ভাঙলাম,কি হলো ডাকলে কেন? খড়ি আমার দিকে তাকাল কিন্তু এবারও কিছু বলল না,তার চাহনি করুন,আমি লক্ষ্য করলাম ওর চোখের কোনে ক্ষুদ্র পানির কনা জমেছে।আমি ওকে অভয়ের স্বরে বললাম কিছু বলবে? ও হঠাৎই আমাকে জড়িয়ে ধরল,জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করলো,আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম,কি হচ্ছে বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো।ওর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলাম না,একটা সময় ওই আমাকে ছেড়ে দিল,তারপর বলতে শুরু করল আমি তখন ছোট ছিলাম, দশম শ্রেনিতে পড়ি, তখন ভালোবাসার আবেগগুলো সবেমাত্র কাজ করতে শুরু করেছে,আমার এক প্রাইভেট টিউটর ছিল নাম শিশির মাইতি, দাদা তখন   ইংরেজিতে অনার্স করতো, খুবই ভালো পড়াতো,ওনার কথা বলার স্টাইল, পড়ানোর স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করতো।উনি তোমার মতোই খুবই শান্ত-শিষ্ট ছিল।প্রয়োজনের বাইরে  কোন কথাই বলতো না।ওনার ব্যবহারের কারনে খুব অল্পদিনের মধ্যেই উনি আমাদের পরিবারের সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠে,ধীরে ধীরে উনাকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে,আমি উনাকে প্রায়ই কিছু না কিছু গিফট দিতাম,এভাবে অনেকগুলো মাস কেটে যায়,একদিন আমি শিশির দাদা কে প্রপোজ করে ফেলি।

উনি আমাকে বুঝাতে থাকেন যে তোমার বয়স অল্প যৌবনে পদার্পন করেছো,এরকম কিছু হতেই পারে,এসব ভূলে যাও,একটা সময় দেখবে এসবের কারনে তুমি মনে মনে হাসবে,ভাববে কি বোকা টাই না ছিলাম আমি।

কিন্তু উনার কোন কথাই আমার কান দিয়ে যাচ্ছিল না,আমি তখন উনার ঘোরে বিভোর ছিলাম।

একটা সময় আমার আবেগগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় চলে যায়,উনি সেটা বুঝতে পারেন।এরপর হঠাৎই উনি আমাকে পড়াতে আসা বন্ধ করে দেন,উনার নাম্বার ও সুইচ অফ ছিলো।ওনার বাড়ির ঠিকানা জানতাম  না,তাই উনার সাথে যোগাযোগ করার সকল মাধ্যমই বন্ধ হয়ে যায়।কয়েকদিন আমার খুব কষ্ট হয়েছিল,রুমের ভেতর গোপনে একা একা চোখের জল ফেলতাম, তারপর সবকিছুই স্বাভাবিক হতে শুরু করলো।

আমিও ধীরে ধীরে আমার আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখে গেলাম।

ভালোই চলছিল সবকিছু,কিন্তু ক্লাসের প্রথমদিন তোমাকে দেখে সবকিছু এলোমেলো  হয়ে গেল।আমার মনে হচ্ছিল সৃষ্টিকর্তা তোমার মধ্যে শিশির দাদা র কিছু প্রতিরুপ দিয়েছেন।তোমার আর শিশিরদা র চেহারাও অনেকটা কাছাকাছি শিশির দা ও তোমার মতো চশমার ব্যবহার করতো ,কিন্তু আমি এবার আর আগেরবারের মতো ভূল করতে চাচ্ছিলাম না।তাই তোমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছিলাম।এই চেষ্টা করাটা ছিল আমার জন্য যন্ত্রনাদায়ক।আমার এই গল্পটা আমি কারো সাথে শেয়ার করিনি,আমার কোন ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথেও না।

শিশির দা ছিল প্রথম ব্যক্তি যিনি আমার আবেগ গুলোর কথা জানতে পারেন,আর তুমি হলে দ্বিতীয় ব্যক্তি যে সমস্ত ঘটনাটাই জানতে পারলে।

আমি কখনো কথা চেপে রাখতে পারিনা,কিন্তু এই কথাটা অনেকদিন চেপে রেখেছিলাম,মন বলছিল তোমাকে কথাগুলো বলি তাই বলে ফেললাম।

এগুলো বলার জন্যই তোমাকে ডেকেছিলাম,ভালো থেকো, বাই দ্যা ওয়ে কনগ্রেচুলেশন ফর ইউর ব্রিলিয়্যান্ট সাকসেস।

কথাগুলো বলেই খড়ি হাঁটাতে লাগলো,আমি খড়ির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম,আমার নিজেরই স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগলো।

আমি সবগুলো ঘটনা মনে মনে পুনরাবৃত্তি করলাম,নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম আমাকে কথাগুলো বলার কারন কি ছিল,তাহলে কি ও আমাকে পছন্দ করে? ধুর আমি কি সব ভাবছি।তা কি কখনো হয় নাকি? আমি আবার নোট করতে গেলাম কিন্তু নোট আর করা হলোনা।ক্লাস শেষে বাড়িতে ফিরে গেলাম, ঋদ্ধি আজকে ঘরে নেই সে নিজের বাড়িতে গেছে,বারবার খড়ির কথাই মনে পড়েছে ,রাতে পড়তে বসেছি কিন্তু পড়ায় মন বসেছিল না কিছুই।

ফেসবুকে ঢুকলাম,খড়ি আমার বন্ধু লিস্ট রয়েছে  কিন্তু কখনোই নক করা হয়নি,আজকে প্রথম নক করলাম হ্যালো! কেমন আছো? সে অনলাইনে নেই,মন ছটফট করছিলো খড়ির সাথে কথা বলার জন্য  কিন্তু ওর মোবাইল নাম্বার আমার কাছে নেই যে কল করতে পারবো না ।

কি হচ্ছে আমার এসব! আমি কি হয়ে যাচ্ছি!

খড়ির জন্য আমি এতো অস্থির হয়ে যাচ্ছি কেনো? তাহলে কি আমি ওকে পছন্দ করি? ধুর! ধুর! আমি কি সব ছাইপাস ভাবছি।

রাতে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম।দুইদিন কলেজ ছুটি ।

তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু হয়ে গেল।ঘুম থেকে উঠে অনলাইনে ঢুকলাম,নাহ্ খড়ির সাড়া নেই,সে অনলাইনে আসেনি।

দুইদিন তাহলে খড়ির সাথে কথা হবেনা! দেখা হবেনা! আমি ঋদ্ধিকে ফোন করলাম প্রথমবারে ফোন ধরেনি দ্বিতীয়বারে ফোন ধরল ,ঘুম ঘুম চোখে বলল হ্যালো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম ঘুমুচ্ছিস?

.. হুম ঘুমুচ্ছিলাম তো,তুই তো ঘুমটা নষ্ট করে

দিলে ।এতো সকালে কেও ফোন দেয়?

.. একটা কাজে ফোন দিয়েছিলাম তোকে।

.. এতো সকালে কি আর কেউ আড্ডা দিতে ফোন দেয়? কি কাজ বল?

.. একটু খড়ির নাম্বারটা জোগাড় করে দিতে পারবি?

.. ব্যাপার কি রে তুই হঠাৎ খড়ির নাম্বার চাচ্ছিস।প্রেমে-টেমে পড়ে গেলি নাকি?

.. আরে নাহ্।তুই যে কি বলিস।

এমনি ওর সঙ্গে  একটু কাজ ছিল।

.. তা কি কাজ আমাকে বলনা,আমি দেখি কিছু করতে পারি কি না।

.. তুই কি নাম্বারটা যোগাড় করে দিতে পারবি নাকি পারবি না এটা বল?

.. আরে বাবা রাগ করছিস কেন? ওয়েট কর আমি তোকে মেসেজ করে পাঠাচ্ছি।

ঋদ্ধির মেসেজ পাওয়ার পর আমি খড়িকে কল করলাম।

প্রথম কলটা ধরলোনা,দ্বিতীয়বার আবার কল দিলাম।এবার ফোনের ওপাশ  থেকে পরিচিত কন্ঠটা  ভেসে এলো।

হ্যালো…..হ্যালো…..কে বলছেন?

আমার বুকের ভেতরে ধুকধুপ শুরু হয়ে গেল।এবার কি বলবো,ঝোকের বশে তো কল দিয়ে দিয়েছি কিন্তু কথা কি বলতে পারবো! আমার গলা তো এখনই শুকিয়ে আসছে,আমি জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করলাম কেমন আছো?

ওপাশ থেকে খড়ি বলল আমি ভালো।

কিন্তু আপনি কে বলছেন?

আমি সুমিত ।

ওহ্ আচ্ছা তুমি! তা এরকম তোতলাচ্ছো কেন? তুমি কি ফোনে তুতলিয়ে কথা বলো?

নাহ্।প্রথমবার তো তাই এরকম হচ্ছে।

প্রথমবার মানে!

তোমার সাথে ফোনে কথা বলা প্রথমবার তো তাই এমন হচ্ছে।

ওহ্ আচ্ছা তা হঠাৎ আমাকে ফোন করার কারণ কি ! সেদিনের কথায় আবার আমার প্রেমে পরে গেলে নাতো?

এই কথা শুনার পর আমার হার্টবিট আরো বেড়ে গেল,মনে হচ্ছিল আমার হৃদপিন্ডটা লাফাতে লাফাতে বেড়িয়ে আসবে;ভয় হচ্ছে এই আওয়াজটা আবার খড়ি শুনে ফেললো নাতো!

আবার ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো।

কি হলো কিছু বলছো না যে?

নাহ্ এমিতেই ফোন করলাম তোমার খোঁজ খবর নিতে,কি করছো?

এইতো বই পড়ছিলাম,তুমি কি করছো?

আমিও বই পড়ছিলাম।(একটা ছোটখাটো মিথ্যে বলে ফেললাম)।আজকে বিকেলে কি দেখা করতে পারবে?

কেন বলতো?

তোমার সাথে কিছুক্ষন হাঁটতে খুব ইচ্ছে করছে।

(আমি অনুভব করতে পারছিলাম খড়ি মৃদুভাবে  হাসছে।

সেই হাসির মৃদু শব্দ আমার পূরো মনকে দোলা দিয়ে গেলো)

শুধুই হাঁটতে নাকি হাতটি ধরে হাটতেহাঁটতে  ইচ্ছে করছে?

(লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেল,ভাগ্যিস খড়ি সামনে নেই,তাহলে সে এ দৃশ্য দেখে খুব হাসতো)

তুমি দেখা করতে পারবে কি না বলো?

কখন দেখা করবো বলো?

বিকেল ৫ টায় পারবে?

আচ্ছা ঠিক আছে বিকেল ৫ টায় বের হবো।

সেই বিকেল ৫ টায় দেখা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এমন দেখা করতে  আমি কখনোই চাইনি, কখনোই না।।

সেদিন খড়ি খুব করে সেজেছিল,আমি সবসময় ভাবতাম হলুদ  শাড়িতেই হয়তো বা মেয়েদের খুব মানায়,খড়ি সেদিন নীল আর কালোর কম্বিনেশনের মধ্যে  একটা শাড়ি পড়েছিল।সেদিন ওকে দেখে এতো মুগ্ধ হয়েছিলাম যা আপমি কখনো  ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না ,সে আমার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।

আমি তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলাম,সে আমায় দেখে মুচকি হাসছিল,সে স্মৃতি  কখনোই ভুলতে পারবো না।  কিন্তু হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটা ট্রাক উঠে গেল খড়ির উপরে।

খড়ির পাশে আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল

বেশ কয়েকজনের উপরেই গাড়িটা উঠে গেল।সকলেই আর্তনাদ করছে,সকলের আর্তনাদ ছাড়িয়ে আমার কানে শুধু খড়ির আওয়াজই ভেসে এলো কিন্তু দূরে বলে কিছুই বুঝতে পারছি  না।

আমি কিছুক্ষনের জন্য পাথরের মতো  হয়ে গেলাম।

সবকিছুই আমার চোখের সামনে ঘটছিল,কিন্তু আমি এক পা ও নড়তে পারছিলাম না,আমি তাকিয়েই রইলাম সেদিকে।

খড়ি চারদিন প্রানপনে লড়েছিল বাঁচার জন্য কিন্তু শেষটায় জয় সৃষ্টিকর্তাই  হয়েছে।

চার দিন পর খড়িকে আমি হারিয়ে ফেলি সারা

জীবনের মতো খড়ি মৃত্যুর আগে আমাকে শেষ কথাটা বলেছিল

মন খারাপ করো না,আমি ওপারে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো ,দেখা আমাদের হবেই।

খড়িকে আমি কতটা ভালোবাসতাম তা ওর মৃত্যুর পর ভালোমতো অনুভব করতে পেরেছিলাম।

 আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক প্রার্থনা করেছি।তিনি যেন আমার খড়িকে সঙ্গে না নিয়ে যান,কিন্তু তিনি আমার প্রার্থনা  শুনেননি।হয়তোবা খড়ি ই সত্যি ছিল,আমাদের দেখা

ওপারে হবে এপারে নয়।

আমার হাতগুলো ঠান্ডা হয়ে আসছে,শীত করছে খুব।

চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে,কলমটা শক্ত করে ধরতে পারছি না।

শরীরটা একদিকে ঢলে পড়ছে।

আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, এটা ঘুম নাকি চিরঘুম?

Tags: গল্পজীবননারী

অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা বাতায়ন24-Subscribe করার জন্য ধন্যবাদ

Unsubscribe
আগের পোস্ট

সুলতান সুলেমান উপন্যাস  (পর্ব-১৯)

পরের পোস্ট

দুর্ঘটনা

batayan24

batayan24

অনলাইন বাতায়ন24 নব দিগন্তে সত্য হোক উন্মোচন

পরের পোস্ট

দুর্ঘটনা

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সব সময়ের জনপ্রিয়

  • চলমান
  • মন্তব্য
  • সর্বশেষ

চা বানানোর কয়েকটি সহজ নিয়ম

সেপ্টেম্বর 3, 2022

ময়মনসিংহ গীতিকা : লোকজীবনের স্বরূপ অন্বেষণ

সেপ্টেম্বর 3, 2022

সৈয়দপুরে কনের সাথে জোর পূর্বক অশ্লীল ছবি তুলে টাইগার বাহিনী’র প্রতারনা

অক্টোবর 29, 2021

দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজীলত

সেপ্টেম্বর 3, 2022

মানব জীবনে নামাজের গুরুত্ব

এপ্রিল 1, 2021

দুই প্রতিবেশী

2

মোঃ সেলিম হোসেন এর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা

2

অবিন্যস্ত পংক্তিমালা

2
ফাইল ফটো

তুমি কবি ! মহাকবি !

2

সুতার বাধন প্রতি রাতের কান্না পর্ব ৩য়

2
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র শোক প্রকাশ।

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রকাশ

জুন 4, 2023

এবারের বাজেট সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট : ওবায়েদুর কাদের

জুন 4, 2023

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের পূণরুদ্ধারে সুষ্ঠু ভোটের বিকল্প নেই : এম এ মতিন

জুন 3, 2023

চাঁদপুর জেলায় বিজ্ঞান মেলায় প্রথম হয়েছে হাইমচরের দূর্গাপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজ

জুন 3, 2023

মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

জুন 3, 2023

সাম্প্রতিক প্রকাশিত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র শোক প্রকাশ।

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রকাশ

জুন 4, 2023

এবারের বাজেট সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট : ওবায়েদুর কাদের

জুন 4, 2023

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের পূণরুদ্ধারে সুষ্ঠু ভোটের বিকল্প নেই : এম এ মতিন

জুন 3, 2023

চাঁদপুর জেলায় বিজ্ঞান মেলায় প্রথম হয়েছে হাইমচরের দূর্গাপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজ

জুন 3, 2023

মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

জুন 3, 2023

অক্টোবর বিপ্লব

জুন 3, 2023

তুমি

জুন 3, 2023

ভীরু মন

জুন 3, 2023

The Language of Poetry

জুন 3, 2023

দ্বীপাঞ্চলে কিভাবে গভীর সাগরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়?

জুন 3, 2023

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

Facebook Page

Twitte

Instagram

Linkedin

Yiutube

বাতায়ন24.কম

সম্পাদকঃ আবুল কাশেম পাটোয়ারী। বার্তা সম্পাদকঃ খোরশেদ আলম বিপ্লব। নির্বাহী সম্পাদকঃ তানভীর আহমেদ। প্রকাশকঃ আজম পাটোয়ারী। প্রকাশক কর্তৃক দক্ষিন টরকী,মতলব উত্তর,চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত।

WhatsApp: +880-1834-986850
E-mail: [email protected]
প্রযুক্তি সহায়তা : মোহাম্মদ আরিফ হোসেন

  • Batayan24.com
  • Privacy Policy
  • কাব্য সমগ্র
  • জীবন ব্যবস্থা
  • নারী আলাপন
  • ফটো গ্যালারী
  • ব্যবহারের শর্তাবলি
  • শিশুতোষ
  • সপ্তাহের আলোচিত খবর
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য সম্ভার

© ২০২০-২০২৩ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত - অনলাইন পত্রিকা বাতায়ন২৪ডটকম (R. D. M. Media & Publishing).

  • সপ্তাহের আলোচিত খবর
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • বিনোদন
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • স্বাস্থ্য পরামর্শ
  • বাংলার বই
  • সাহিত্য সম্ভার
  • কাব্য সমগ্র
  • শিশুতোষ
  • সম্পাদকীয়
    • বিশেষ কলাম
  • আমাদের সম্পর্কে
    • Privacy policy
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন

© ২০২০-২০২৩ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত - অনলাইন পত্রিকা বাতায়ন২৪ডটকম (R. D. M. Media & Publishing).

ফিরে আসার জন্য স্বাগতম!

Sign In with Facebook
OR

নীচে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন

Forgotten Password?

নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি!

Sign Up with Facebook
OR

নিবন্ধন করতে নীচের ফর্মগুলি পূরণ করুন

সমস্ত ক্ষেত্র প্রয়োজন প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করুন

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করতে আপনার নাম বা ইমেল লিখুন.

প্রবেশ করুন