দেবী (ভারত)
—‘আপনি এত সুন্দর ছবি আঁকেন যে আমি আপনার এক্সিবিশনে না এসে পারলাম না ।অনেকদিন ধরেই আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি আমি। আপনি তো অনেক বড় শিল্পী আপনার সাথে পরিচয় করার খুব ইচ্ছে ছিল। ’
—‘আমার সত্যিই খুব ভালো লাগছে যে আপনি এতো ব্যস্ততা সামলেও আমার এক্সিবিশনে এসেছেন ।আমি বড় কোন শিল্পী হয়ে উঠতে পারিনি…এখনো শিখছি। শেখার কী শেষ আছে বলুন?’
—‘শেখার তো আর শেষ নেই ।আপনার প্রত্যেকটা স্কেচ, জলরং, লাইভ স্টাডি যেন জীবন্ত ।আপনার আঙ্গুলের ক্ষমতা আছে বলতে হবে।’
—‘চোখে যতদিন দেখতে পাব ততদিন আঙ্গুলের ক্ষমতা থাকবে । যেদিন আর চোখে দেখতে পাবো না সেদিন আমার আঁকা ছবিগুলো এতটা জীবন্ত হয়ে উঠবে না।তবে আপনি তো দেখছি ড্রইং এর ব্যাপারে অনেক কিছু বোঝেন।’
—‘না না খুব বেশি বুঝি না। একসময় ক্যানভাস আর রং-তুলির সাথে জীবন বাঁধতে চেয়েছিলাম।তাই আর কি….. এখনো মনে আছে কিছু কিছু ।আপনার অনেকগুলো ড্রয়িং আমি কিনেছি ।তবে আমার একটা অনুরোধ আছে আপনার কাছে।’
—‘আমার মনে হয় আপনি এখনো আপনার ক্যানভাসকে, রংতুলিকে মিস করেন ।আমি জানি আপনি খুব ব্যস্ত তবুও আপনি চাইলেই আবার নতুন করে ছবি আঁকাটা শুরু করতে পারেন। ছবি আঁকার জন্য সময় আপনি ঠিকই বার করে নিতে পারবেন। আমি মনে করি নিজের ট্যালেন্টকে কোন কিছুর জন্য বিসর্জন দেওয়ার কোন মানে হয় না। অনেকে চাইলেও সুযোগ পায় না।’

—‘আমি বাধ্য হয়েই ছবি আঁকাটা ছেড়েছিলাম স্কুল ফাইনাল পাশ করার দুমাস আগে। আর কোনদিন রং তুলি ধরিনি। তখন মনে হয়েছিল আমার কাছ থেকে জোর করে আমার সবথেকে প্রিয় জিনিসগুলোকে কেড়ে নেওয়া হলো। সে যাই হোক …আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ ছিল।’
—‘বলুন কি অনুরোধ? আমি আপনার অনুরোধ রাখার চেষ্টা করব।’
—‘আমার সাথে আমার মায়ের একটা ছবি নষ্ট হয়ে গেছে ।সেই ছবিটা দেখে যদি একটা অয়েল পেইন্টিং করে দিতে পারেন তাহলে খুব ভালো হতো।মায়েরও তো বয়স হয়েছে । আমি মাকে খুব বেশি সময় দিতে পারি না যতটা সময় আমি দিতে চাই। তাই ছবিটা মায়ের জন্মদিনে উপহার দেব।ছবিটা পেলে মা খুব খুশি হবেন। ছবি আঁকার জন্য যা পারিশ্রমিক লাগবে আমি তা আপনাকে দেবো।’
—‘না না ঠিক আছে আমি ছবিটা পেলে নিশ্চয়ই ড্রইং করে দেব।আসলে আমার হাতে এখন বেশ কয়েকটা ছবি আছে সেই ছবিগুলো শেষ করেই না হয় আপনার মায়ের ছবিটা করে দেব।’
এরপর বেশ কিছু সপ্তাহ কেটে গেছে। ছবিটা সে পাঠিয়েও দিয়েছে রুদ্রজিত ছবিটা সে পাঠিয়েও দিয়েছে রুদ্রজিতকে কিন্তু দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল আচমকাই। নিস্তব্ধতা ভেঙে মোবাইলটা বেজে উঠল।
—‘হ্যালো …’
—‘আমি রুদ্রজিত বলছি। আপনার ছবিটা হয়ে গেছে। আমি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবো।বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে ঠিকই তবে ছবিটা কিন্তু খারাপ হয়নি। এবার শুধু উপহার দেওয়াটাই বাকি আছে।আপনার মা নিশ্চয়ই খুশি হবেন আর আপনি না হয় আমার পারিশ্রমিকটা ফোন পে করে দিন।’
—‘নিশ্চয়ই,আপনার পারিশ্রমিকটা ফোন পে পরে দেবো ।তবে ওই ছবিটার আর কোনো দরকার নেই।ছবিটা আপনার কাছেই রেখে দিন।কাকে আর উপহার দেবো বলুন? মানুষটা তো আর বেঁচে নেই। তিন দিন হলো মা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।’
নিস্তব্ধতায় দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল ফোনের ওপার থেকে। জানো সবকিছুর জন্য কেউ নিজেকে দায়ী করে চলছে।কেউ নিজেকে দোষী করছে অনুরোধ না রাখতে পারার জন্য আর কেউ নিজেকে দায়ী করছে সময়ে কাছের মানুষের পাশে না থাকতে পারার জন্য। যথাসময়ে ফোনটা কেটে গেল কিন্তু নিস্তব্ধতা নীরবতাকে কাটিয়ে উঠতে পারল না।