স্নিগ্ধা ঘোষ
কুয়াশা মোড়া রাতে তিনটে বাজে ঘড়িতে,
লেপের মায়া ছেড়ে গেলাম প্রকৃতিকে সাড়া দিতে।
বারান্দা থেকে উঠোনে চোখ জোড়া আটকে গেল
এমনতর কুয়াশায় ওটা কে দেখা দিল!
কীভাবে দিই বর্ণনা তার যার পেয়েছি দেখা-
ঘন কুয়াশায় সারা শরীর সাদা চাদরে ঢাকা।
তার মুন্ডুখানা কি পাশে পড়ে আছে?
ওখান থেকে জলন্ত চোখে, আমায় কি দেখছে?
ঠকঠকিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে তো এলাম;
সাহস জুগিয়ে ভাবি, তবে কি ভুল দেখলাম!
শুনেছি এই সন্ধিক্ষণে তেনারা ঘুরে বেড়ান,
তাঁদের নজরে পড়লে কোনোভাবেই নেই ছাড়ান।
লেপের মধ্যে ঢুকেও বুক কাঁপে দুরু দুরু;
ভূতের আনাগোনা আবার কবে থেকে হলো শুরু!
হঠাৎ বুঝি আমার মাথায় সজোরে পড়লো বাজ,
নুপুরের মত ছন্ ছন্ ছন্, ওটা কীসের আওয়াজ!!!
ও মাগো, ও কারা নাচে আমার বাড়ির ছাদে!
ভেবে মরি আমি, এবার বুঝি তারা কাঁদে!
কীসব যেন ছিল, কী বেশ বলতে হয়,
ভুললাম কিভাবে আমি? পেয়েছি নাকি ভয়?
না না না, ভুলবো না, মনে করতে হবেই,
বুকের মাঝে সাহস এনে বলে দিলাম সবই-
“ভূত আমার পেত, পেত্নী আমার ঝি,
রাবণ আমার সাথে আছে করবে আমার কি?”
রাবণ নাকি রাম, কার থাকার কথা?
যা স্মরণে এলো তাই বললাম অগত্যা।
রাতটা এতো বড়ো কেন, কাটতে কেন চায় না?
জোর করে কেন কখনো জ্ঞান হারানো যায় না?
সারাটা রাত আলো জ্বেলে, রাবণের নাম জপি;
এই রাতে আমি নিজেকে ভগবানের কাছে সঁপি।
রাতটা তবে কাটলো প্রকৃতির নিয়ম মেনে,
সকাল হতেই আমি কথা তুললাম মায়ের কানে।
শুনে মায়ের থামে না হাসি, শুধু দম ছুটতে বাকি,
“কাল রাতে তুই আবার ভূত দেখলি নাকি?
ওই যে তোর সাদা শার্ট, সন্ধ্যায় বললাম তুলতে
কিন্তু তুমি এমন ভুলো, বাকি থাকেনি ভুলতে;
ওই যে দুটো লাল চোখ, ও যে পাড়ার হুলো
শীতের রাতে উনোনের পাশে একটু গরম হচ্ছিলো।
ওই যে দেখছিস হাতাখানা দেওয়ালেতে ঝুলছে,
আর কিছু না ওটা শুধু রাতের হাওয়ায় দুলেছে।
দুলতে দুলতে দু-একবার দেওয়ালে ঠেকা খেয়েছে,
আর তোকে বুঝি ভূতের নুপুর ভাবিয়েছে!
তারা যে হনুমান, যারা দিচ্ছিল ঝাঁপ
তাদের ওই লাফেই ধরেছে তোর কাঁপ।
আমার সাহসী মেয়ে, সাহস কোথায় গেলো?
এতদিনে বুঝি তোর, দেমাক তবে ঘুচলো।”
হেসে বলি আমি, “ভয় কখন পেলাম,
তুমি বুঝতেই পারোনি, আমি তো মজা করছিলাম।”