আশরাফুল ইসলাম
একটা কুমোরের ছেলের সাথে এক রাজকন্যার সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার নাম কঙ্কাবতী! সন্ধ্যার সময় রাজপ্রাসাদের অনতি দূরে একটি বনের পাশে প্রায়শই দেখা করে দুজন! ধীরে ধীরে কঙ্কাবতী ছেলেটিকে ভালবেসে ফেলে!
একদিন কঙ্কাবতী ছেলেটিকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়! ছেলেটি রাজকন্যার লোভনীয় প্রস্তাব শুনে খানিক সময় চুপ করে থাকে। ছেলেটি কঙ্কাবতীকে বলে যে তুমি যদি একটা বিষয় আমাকে অবগত করাতে পারো তাহলে আমি বিয়ের বিষয়টি বিবেচনা করবো!
বিষয়টি হলো তুমি তোমার মায়ের কাছে জেনে আসবে যে তোমার সত্যিকারের পিতা কে?
কঙ্কাবতী এবার ক্ষিপ্ত মেজাজে জবাব দেয় যে আমি এই দেশের মহান রাজার একমাত্র কন্যা!
এই রাজ্যের সবাই তা ভালভাবেই জানে! ছেলেটি কঙ্কাবতীকে শান্ত হতে বলে এবং বলে যে, সে যেন তার মায়ের কাছে এর সত্যতা যাচাই করে নেয়! রাজকন্যা মন ভার করে রাজপ্রাসাদে ফিরে আসে ।
দুরন্ত ও ছটফটে মেজাজের একমাত্র কন্যা সন্তানের গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে রাণী তার শরীর খারাপ কিনা জানতে চান। দেশের বিভিন্ন রাজবৈদ্যদের ডেকে এনে রাজকন্যার রোগ পরিক্ষা করে উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দেন!
কঙ্কবতীর কোন রোগ ধরা পড়ে না!
সে দিনদিন মনমরা হয়ে ওঠে!
একদিন কঙ্কাবতী রাণীর ঘরে প্রবেশ করে এবং মায়ের হাত তার মাথায় রেখে দিব্যি দিয়ে বলে যে আজকে তাকে বলতেই হবে তার জন্মদাতা পিতা কে?
এই প্রশ্ন শোনার সাথে সাথে রাণীর মুখ পানসে হয়ে যায় এবং তার শরীর কাঁপতে থাকে! কঙ্কাবতী মাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তিনজন কবিরাজ এসে রাণীকে ঝাঁড় – ফুক দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। কঙ্কাবতী মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রাণীর দুচোখের কিনারা দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে!
দেহরক্ষীদের সবাইকে বাহিরে যেতে বলেন রাণী!
এবার সে মেয়ের দুই হাত চেপে ধরে বলেন যে, হে আমার আদরের একমাত্র কন্যা! জানিনা হঠাৎ কেন তুমি আমাকে এমন প্রশ্ন করলে! আজ তোমার কাছে আমি কোন কিছুই লুকাবো না, আমার জীবনের চরম সত্য কথাটি তোমাকে বলবো তোমার দিব্যি রক্ষার্থেই একচুল বানিয়ে বলবো না।
তাহলে শোন,,,
বহুদিন আগে রাজামশাই এক মাসের জন্য সিকিম রাজ্যের পাহাড়ি বনাঞ্চলে হরিণ ও পাখি শিকার করতে যান তখন রাজ দরবার পরিচালনার ভার আমার উপরে ন্যাস্ত হয়।
বেশ কিছু দিন পর রাজ দরবারে এক চুড়ি – মালা বিক্রেতা এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাকে আমার খাস কামরায় ডেকে পাঠাই!
সে আমাকে বিভিন্ন চুড়ি – মালা দেখাতে থাকে।
গ্রীক, রোম, পারস্যের দামী – দামী বাহারি রঙের মুক্তোর চুড়ি – মালা আমাকে দেখায়।
সর্বশেষ সে তার গোপন আস্তিন থেকে একটি নীল রঙের দামী মুক্তোর মালা আমাকে উপহার হিসেবে দেয়! বিনিময়ে আমি তাকে স্বর্ণ মুদ্রার একটি পুটলী দিতে গেলে সে তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়! আমি তাকে শর্ত জুড়ে দেই যে, সে যদি নিজ হাতে আমাকে মালাটি গলায় পড়িয়ে দেয় তবেই আমি তা গ্রহণ করবো!
সে মুচকি হেসে আমাকে মালাটি গলায় পড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে! আমার চোখ পড়ে যায় তার লোমশ বুক ও মায়াবী চোখের দিকে! তার হাত দুটি আমার গলা স্পর্শ করে, তৎক্ষণাৎ আমার সারা শরীরে শিহরণ জেগে ওঠে! আমি তাকে বুকে জড়িয়ে নেই!,,,,,,,
হে আমার আদরের কন্যা! সেই চুড়ি – মালা বিক্রেতার ঔরসেই তোমার জন্ম!
রাজামশাই তোমার জন্ম দাতা পিতা নন!
হে কঙ্কাবতী তোমাকে অনুরোধ করবো এই গোপন বিষয়টি যেন কোনভাবেই রাজামশাই জানতে না পারেন তাহলে তিনি আমাদের দুজনকেই বনবাসে পাঠাবেন অথবা আমার শিরচ্ছেদ করার হুকুম দেবেন! কঙ্কাবতী মাকে ঘটনাটি গোপন রাখার আশ্বস্ত দেয়!
পরদিন বিকেলে কঙ্কাবতী তার প্রেমিকের সাথে দেখা করে এবং যাবতীয় কথাগুলো তাকে জানায়। এসময় তার দুচোখ বেয়ে ঝর্ণাধারার মত অশ্রু ঝরতে থাকে,,,,
ছেলেটি কঙ্কাবতীর চোখ মুছে দিয়ে বলে হে রাজকুমারী! আমি এক কুমোরের সন্তান! তোমার মত রাজকন্যাকে বিয়ে করার মত কোন যোগ্যতাই আমার নেই! আমি অতি নগন্য পরিবারের একজন সাধারণ যুবক! আমাদের মধ্যে আকাশ – পাতাল পার্থক্য! তোমার মাত্রাতিরিক্ত আবেগ, চঞ্চলতা ও
তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেবার প্রবনতা দেখেই আমি বুঝেছি যে তুমি এই মহামান্য রাজার ঔরসজাত কন্যা নও!
তোমার চরিত্র সম্পূর্ণ রাজামশাই এর বিপরীত!
আমাদের সম্পর্কের শুরু থেকেই আমি তোমার পেছনের সব ইতিহাস জানার চেষ্টা করি! তোমার বিশ্বস্ত সখি কমলীর কাছে সব কিছু জানতে পারি।
ইতিপূর্বে তুমি একজন গরীব ছেলেকে ভালবাসতে!
সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝগড়া হলে তুমিই তাকে ত্যাগ করে দূরে সরে যেতে বাধ্য করো!
এর কিছু দিন পরেই আমার সাথে তোমার পরিচয়! ভাললাগা থেকে ভালবাসা!
হে রাজকুমারী! তুমি কি জানো সেই গরীব ছেলেটি আজ কেমন আছে? জানো না!
তাহলে শুনে নাও,,,,
সেই ছেলেটি তোমার কাছে ভালবাসার বিনিময়ে প্রচন্ড আঘাত পায়! সে হেরে যায় তোমার মাত্রাতিরিক্ত অহংকার ও আবেগের কাছে!
তারপর তোমার দেয়া আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এই গাছের ডালে ফাঁসি নেয়!
তুমি আসো আমার সাথে, এই বলে রাজকন্যার হাত ধরে বনের ভেতরে প্রবেশ করে দুজন!
কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটি কবর দেখতে পায় তারা!
সুন্দর একটি Epitaph তাতে খোদাই করে লেখা!
In your name to the tune of rain
I sing how many songs
Leave me as far as you can
Yet I miss you long…..।