বাতায়ন24 ডেক্স
‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে
দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায়
ঘুমোতে দেয় না।’
স্বপ্নের জগতে পাড়ি দিলেন স্বপ্ন সৃষ্টির কারিগর “মিসাইল ম্যান”৷শুধু বিজ্ঞানী হিসাবে নয়,একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে তার মূল্যায়ন করা আমাদের অসাধ্য৷তিনিই সেই মানুষ যিনি পদাধিকার হয়েছিলেন দেশের প্রথম নাগরিক৷ যার আঙ্গুলি হেলনে পোখরানে “হেসেছিলেন বুদ্ধ”৷ মহামানবের সাগরতীরে একবিংশ শতাব্দির বড় বিস্ময় তিনি৷যার বাণী এখনো যুব সমাজকে আলোড়িত করে তোলে , যিনি প্রথম উপলব্ধি করেন – ‘The best brains of the nation may be found on the last benches of the classroom.’
জন্ম পরিচয় :
ভারতরত্ম পুরস্কার পাওয়া ‘ভারতের মিসাইল ম্যান’খ্যাত এই পরমাণু বিজ্ঞানীর পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আবদুল কালাম। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত রামেশ্বরম নামক স্থানে একটি তামিল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা জয়নুল-আবেদিন একজন নৌকার মালিক যিনি ছিলেন আদ্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এবং মাতা আশিয়াম্মা একজন গৃহবধূ ছিলেন।
দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই :
তিনি খুব গরীব পরিবারের সন্তান ছিলেন ৷তারা ছিলেন সাত ভাইবোন স্বাভাবিক ভাবেই পরিবার খুব অভাব ছিল৷খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল।বাবার একার রোজগারে চলত না সংসার, তাই বিদ্যালয়ে ছুটির পর তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করে রোজগার করতেন।
তার পড়াশুনা :
বিদ্যালয়ে তিনি ছিলেন সাধারণ মানের ছাত্র। কিন্তু তিনি ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর পরিশ্রমী ছাত্র। তাঁর শিক্ষাগ্রহণের তীব্র বাসনা ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি পড়াশোনা করতেন ও অঙ্ক করতেন। রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর কালাম তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ’স কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে সেই কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন।১৯৫৫ সালে তিনি মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে আসেন। এখানকার মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে তিনি বিমান প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহন করেন ৷তিনি অল্পের জন্য যোদ্ধা পাইলট হওয়ার সুযোগ হারান। উক্ত পরীক্ষায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর আট জন কর্মীর দরকার ছিল। তিনি পরীক্ষায় নবম হয়েছিলেন।
অণুপ্রেরণা :
তার জীবনে তার বাবার প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায় , ছোটো বেলায় কালাম লক্ষ্য করেন তার বাবা মসজিদে ভিড় জমানো অসুস্থদের জন্য দোয়া করতেন যদিও বাবা নিজে ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ, বাবার প্রভাবেই চরিত্রের দৃঢ়তা পান কালাম ৷ তিনি আরো লক্ষ্য করেছিলেন তার মা সকলের জন্য শুধু ভাত রান্না করলেও তার জন্য বাড়তি কয়েকটা রুটি তৈরি করতেন, যার জন্য বড়ো হওয়ার আগ্রহ সর্বদা তাকে তাড়িত করত৷
অবদান :
তিনি পেশায় ছিলেন একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী যিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পদার্থবিজ্ঞান ও বিমান প্রকৌশলবিদ্যা সম্বন্ধে অধ্যয়ন করে তিনি পরবর্তী চল্লিশ বছর রক্ষা অনুসন্ধান এবং বিকাশ সংগঠন ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের অন্তরীক্ষ কর্মসূচী ও সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত তাঁর গবেষণার কারণে তাঁকে ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র মানব হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনি ১৯৯৮ সালে সংগঠিত ভারতের পোখরান-২ ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জনতা পার্টি ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে কালাম ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায় (ডিআরডিও) বিজ্ঞানী ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (আইএসআরও) বৈজ্ঞানিক প্রশাসক পদে দীর্ঘদিন কাজ করেন।তার হাতেই রূপ পায় ‘অগ্নি ও পৃথ্বী’৷
কর্মের জন্য পুরস্কার :
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার এপিজে আবদুল কালামকে
★ ১৯৮১ সালে পদ্ম ভূষণ,
★ ১৯৯০ সালে পদ্ম বিভূষণ ও
★ ১৯৯৭ সালে ভারত রত্ন উপাধি দেয়।
এই তিন জাতীয় উপাধি ছাড়াও জাতীয় স্বার্থে ও মানব কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি আরও অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পদক-সম্মানে ভূষিত হন।
★ ২০০৯ সালে ইউ এস এ থেকে তাকে হোভার মেডেল দেওয়া হয়৷
বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহ :
তিনি শুধু মাত্র কর্মব্যস্তই ছিলেন না , পাশাপাশি তিনি বহু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন৷ তার বিখ্যাত আত্মজীবনির নাম “ উইংস অব ফায়ার” এছাড়াও অনান্য গ্রন্থের মধ্যে –
★ ইন্ডিয়া ২০২০
★ অ্যা ভিশন ফর দ্য নিউ মিলেনিয়াম ★ টার্নিং পয়েন্টস
★ অ্যা জার্নি থ্রু চ্যালেঞ্জেস
★ মাই জার্নি : ট্রান্সফরমিং ড্রিম ইন টু একশন”
★ইনস্পায়ারিং থটস প্রভৃতি উল্লেখ যৌগ্য৷
মৃত্যু
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় ভারতীয় প্রমাণ সময় সন্ধ্যে ৬:৩০ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সন্ধ্যে ভারতীয় প্রমাণ সময় ৭:৪৫ নাগাদ তাঁর মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর। তাঁর পরলোকগমনে ভারত সরকার সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছিল।
উপসংহার
তাঁর মৃত্যুর পরও যুব সমাজের কাছে তাঁর আবেদন এতটুকু কমেনি , তার কর্ম ও তাঁর সংযম ও দেশভক্তি আজও আমাদের মোহিত করে তোলে৷ মৃত্যুর আগে তিনি যে মেসেজ দিয়ে যান তা সত্যিই চোখে জল আসার মত “আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করো না,আমায় যদি ভালোবাসো,মন দিয়ে কাজ করো সেদিন”৷
তাঁর বিখ্যাত উক্তি গুলি ভারতবাসি মনের মণিকোঠায় তুলে রাখবে চীরদিন৷
তার বিখ্যাত কতগুলি উক্তি
★ আমি কখনো সন্দেহ করিনি যে আমাদের মসজিদের প্রার্থনা যেখানে পৌঁছায়, সেই একই গন্তব্যে পৌঁছায় মন্দিরের প্রার্থনাও।
★ একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশী শিখতে পারে ।
★আমি আবিষ্কার করলাম সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেশী বিক্রি হয়ে যায় সিগারেট ও বিড়ি। অবাক হয়ে ভাবতাম, গরিব মানুষেরা তাদের কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ এভাবে ধোঁয়া গিলে উড়িয়ে দেয় কেন।
★ আমি ভাবি, কেন কিছু মানুষ মনে করে বিজ্ঞান মানুষকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় খোদার কাছ থেকে ? আমি এটাকে যেভাবে দেখি তাহলো, বিজ্ঞানের পথ সর্বদা হৃদয়ের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আমার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান হচ্ছে আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি ও আত্ম-উপলব্ধির পথ।
★ আমরা প্রত্যেকেই ভেতরে ঐশ্বরিক আগুন নিয়ে জন্মায়। আমাদের চেষ্টা করা উচিত এই আগুনে ডানা যুক্ত করার এবং এর মঙ্গলময়তার আলোয় জগত পূর্ণ করা।
‘সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে
প্রথমে তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে
হবে।’
‘যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর,
দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট
করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার
কাজকে অসম্মান কর,অমর্যাদা কর ফাঁকি দাও,তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট
করতে হবে।’
‘যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না;
তাদের অর্জন অন্তঃসারশূন্য, উৎসাহহীন
সাফল্য চারদিকে তিক্ততার উদ্ভব ঘটায়।’
প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো :
★ আমি সেরা।
★ আমি করতে পারি
★ সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে
★ আমি জয়ী
★ আজ দিনটা আমার