সম্পাদনায় :মেহজাব আহমেদ প্রবাল
গোপাল ভাঁড়ের গল্প চির নবীন চির তরুন।
কারণ বাঙ্গালি জীবনে পাগলামো রঙ্গরসিকতা ইত্যাদি থাকবেই না হলে কি আর বাঙ্গালী।
আর তাই গোপাল ভাঁড়ের মত রসরসিকও থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
গোপাল ভাঁড়ের আজকের এই গল্পটা আপনারা কম বেশি সবাই জানেন। একবার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, এই শীতের রাতে কেউ কি সারা রাত পুকুরে গলা পানিতে ডুবে থাকতে পারবে? যদি কেউ পারে, আমি তাকে অনেক পুরস্কার দেব।
তখন তাদের সামনে ছিল গরিব মানুষ।সে করোজোড়ে বলল, মহারাজ আমি পারব।
তখন সে মাঘ মাসের তীব্র শীতে সারা রাত পুকুরের পানিতে গলা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভোরের বেলা সে উঠল পানি থেকে।
তারপর কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে গিয়ে হাজির হয়ে সে বলল, মহারাজ আমি কাল সারা রাত পুকুরের পানিতে ছিলাম আর আপনার সেপাইরা তার সাক্ষী। এবার দয়া করে আমার পুরস্কার দিন।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কম যায় না তখনই বললেন, সেকি তুমি কেমন করে এটা পারলে!
গরিব লোকটা তখন বলল , আমি পানিতে সারা রাত দাঁড়িয়ে রইলাম আর দূরে অনেক দূরে এক গৃহস্থবাড়িতে দেখি প্রদিপের আলো জ্বলছে।আমি সেই দিকে তাকিয়ে রইলাম আর এ দেখে আমার সারা রাত কেটে গেল।

শিয়াল চতুর মন্ত্রী পাশ থেকে বলল, পাওয়া গেছে মহারাজ, এই যে দূরের প্রদীপের আলোর দিকে ও তাকিয়ে ছিল, সেই প্রদীপ থেকে তাপ এসে তার গায়ে লেগেছে, তাই তারপক্ষে সম্ভব হয়েছে এই শীতেও ওই পুকুরে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা, না হলে কারো পক্ষ্যেই তা সম্ভব নয় মানে এক প্রকার চুরি।
মহারাজ বললেন, তাই তো, তাহলে তো বাপু তুমি আর পুরস্কার পাও না উল্টো রাজার সাথে প্রতারনার জন্য কয়েদে যাবে তবে আমি তোমাকে তা করব না, যাও হে বাপু তুমি এবেলা বিদেয় হও।
গরিব লোকটা কাঁদতে কাঁদতে রাজ দরবার থেকে বিদায় নিল। সে তখন গেল গোপাল ভাঁড়ের কাছে। সবিস্তারে অনুযোগ জানাল তাঁর কাছে। সব মনযোগ সহকারে শুনলেন গোপাল ভাঁড়।
তারপর গোপাল ভাঁড় লোকটিকে বললেন ঠিক আছে, তুমি এখন যাও আর আমি বলছি ন্যায়বিচার পাবে।
তারপর গোপাল ভাঁড় দাওয়াত করলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে, দুপুরে খাওয়াবেন। রাজা এলেন গোপাল ভাঁড়ের বাড়ি। গোপাল ভাঁড় বললেন মহারাজ যে আসুন আসুন। আর সামান্যই আছে রান্নার বাকি।তা আপনার জন্য কী রাঁধছি দেখবেন চলেন।
গোপাল ভাঁড় কৃষ্ণচন্দ্রকে নিয়ে গেলেন বাড়ির পেছনে। সেখানে একটা তালগাছের ওপর একটা হাঁড়ি বাঁধা আর নিচে একটা কুপিবাতি জ্বালানো।
মহারাজ বললেন কই গোপাল তোমার রান্নার আয়োজন কই কিছুই তো দেখছি না।
গোপাল ভাঁড় গাছের উপরের দিকে দেখিয়ে বললেন, ওই যে মহারাজ হাঁড়ি ওটাতে পানি, চাল, ডাল, নুন সব দেওয়া আছে, এই তো খিচুড়ি হয়ে এল বলে।শিগ্রই আপনাদের গরম গরম খিচুড়ি খাওয়াচ্ছি।
রাজা বললেন, তোমার বাড়িতে দাওয়াত খাব বলে সকাল থেকে তেমন কিছু খাইনি। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে, এখন খাওয়ার বদলে এই রসিকতা ভালো লাগে!
গোপাল করজোড়ে বললেন রসিকতা কেন, রান্না হয়ে এল বলে।
রাজা বললেন, তোমার ওই খিচুড়ি জীবনেও হবে না, আমার আর খাওয়াও হবে না। চলো মন্ত্রী আমরা ফিরে যাই।
গোপাল বললেন মহারাজ কেন খিচুড়ি হবে না। দূরে গৃহস্থবাড়িতে জ্বালানো প্রদীপের আলো যদি পুকুরের পানিতে ডুবে থাকা গরিব প্রজার গায়ে তাপ দিতে পারে, এই প্রদীপ তো হাঁড়ির অনেক কাছে, নিশ্চয়ই খিচুড়ি হবে।রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তখন তার ভুল বুঝতে পারলেন। বললেন, আচ্ছা বুজেছি পাঠিয়ে দিয়ো তোমার ওই গরিব প্রজাকে। ওর প্রতি আসলেই অন্যায় করা হয়েছে, ওকে ডাবল পুরস্কার দেব।
সে তো আপনি দেবেনই, আমি জানতাম। আসুন ঘরে আসুন দুপুরের খাওয়া সব প্রস্তুত আপনার জন্য।
তারপর রাজা সত্যি সত্যি গরিব লোকটাকে অনেক পুরস্কার দিয়েছিলেন।
আজকের দিনে গোপাল ভাঁড় শারীরিক ভাবে নেই। কিন্তু তার রসিকতাগুলো রয়েই গেছে।