সম্পাদনা: মেহজাব আহমেদ প্রবাল
কোন এক দেশে ছিল এক বীর রাজা৷ তার ছিল অনেক শক্তি৷ কেউ তাকে যুদ্ধে হারাতে পারত না৷ তার চারপাশের দেশের রাজারা পড়ল মহা চিন্তায়… কোন দিন না সে আবার তাদের দেশ নিয়ে নেয়৷ তাই তারা অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করলো৷ তারা ডেরা পিটিয়ে পুরস্কার ঘোষণা করলো যে এই বীর রাজাকে যুদ্ধে হারাতে পারবে তাকে দেয়া হবে অর্ধেক রাজত্ব (আর রাজকন্যা যদি রাজী হয় তবে রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে)৷
কিন্তু কেউই সাহস করলো না বীর রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করতে কারণ যুদ্ধে গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু৷ রাজারা সব হতাশ, কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না বীর রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য৷ একদিন এক রাধুনী এলো রাজার দরবারে বলল, আমি বীর রাজাকে হারাব৷ সবাই তো অবাক! যেখানে বীর সেনাপতিরা ভয় পায় সেখানে এক রাধুনী হারাবে বীর রাজাকে এটা কি করে সম্ভব?
রাধুনী বলল, আমকে বিশ্বাস করুন মহারাজ আমিই পারব বীর রাজাকে হারাতে৷ আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন৷
রাজা বললেন, ঠিক আছে তুমি যখন এত করে বলছ তখন একবার চেষ্টা করেই দেখ৷
রাধুনী বীর রাজার দেশে গেল৷ সেখানে রাজার দরবারে গিয়ে
বলল, হুজুর, আমায় আপনার রান্নার দায়িত্ব দিন, আমি অনেক মজার মজার রান্না জানি৷ আপনি এমন মজার রান্না জীবনেও খাননি৷
বীর রাজার তো শুনে জিভে পানি চলে এলো৷
সে বলল, ঠিক আছে এখনি তুমি কাজে লেগে যাও৷ রাধুনী রাজার জন্য দিন রাত মজার মজার সব খাবার বানাতে শুরু করলো খাটি ঘিএ তৈরি নানা রকম সুস্বাদু খাবার।
এদিকে রাজা শাক সবজী খাওয়া এক প্রকার ছেড়েই দিল৷ পানির বদলে সব মজার মজার অন্যান্য পানিয় খেতে শুরু করলো ৷
ধীরে ধীরে রাজার ভুড়ি বেড়ে গেল, শরিরে চর্বি বেড়ে গেল,ডায়াবেটিস হলো৷
রাজা অসুস্থ হয়ে পড়ল, তাই দেখে মন্ত্রী উজির কবিরাজ ডেকে পাঠালেন।
কবিরাজ রাজাকে খুব ভাল করে পরিক্ষা করে বলল, মহারাজ আপনি বেশী করে সবজি খান আর এসব খাবার ছেড়ে দিন৷
কিন্তু এদিকে রাধুনী প্রতি বেলাতেই মজার মজার খাবার বানিয়েই চলল-খাটি ঘি দিয়ে,দ।
রাজা খাবার টেবিলে এসব খাবার দেখে বলল, কবিরাজ আমাকে এসব খেতে বারণ করেছে৷

রাধুনি বলল, রাজা আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি, তাই কষ্ট করে এসব মজার খাবার আপনার জন্য রান্না করি৷ আপনি না খেলে তো আমার কষ্টই বৃথা৷ রাজা ভাবে তাই তো, বেচারা এত কষ্ট করে আমার জন্য, আমাকে কত ভালবাসে, আমি এগুলো না খেলে সে মনে কষ্ট পাবে তাই রাজা এখবর গুলা খায়৷
আরো ক’মাস পরে রাজার বুকে অনেক ব্যথা হলো৷ তাড়াতাড়ি করে আবার কবিরাজকে ডাকা হলো৷
কবিরাজ এসে রাজাকে খুব ভাল করে পরিক্ষা করলো তারপর বলল, মহারাজ আপনার হার্টে অসুখ হয়েছে আপনি বেশী করে সবজী খান আর এসব খাবার একেবারে ছেড়ে দিন৷
কিন্তু রাধুনী আগের মতই মজার খাবার বানিয়েই চললখাটি ঘি দিয়ে ৷
রাজা খাবার টেবিলে এসব খাবার দেখে বলল, কবিরাজ আমাকে এসব খেতে বারণ করেছে৷
রাধুনি বলল, রাজা আজ মেহমান এসেছে, মেহমানদের সাথে একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না৷
রাজা ভাবলো, তাইত একদিন খেলে কিছু তো হবে না৷
রাধুনী মজার খাবার বানিয়েই চলল খাটি ঘি এর৷
রাজা খাবার টেবিলে এসব খাবার দেখে বলল, কবিরাজ আমাকে এসব খেতে বারণ করেছে৷
রাধুনি বলল, মহারাজ আজ একটা খুশীর দিন; আজ খেলে কিচ্ছু হবে না৷ এভাবে যখনি রাজা বলত কবিরাজ আমাকে এসব খেতে বারণ করেছে। তখনই রাধুনী কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে বলত মাত্র একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না৷
এভাবে রাধুনী মজার খাবার বানিয়েই চলল- খাটি ঘি দিয়ে৷
আর রাজা খেয়েই চলল৷
আরো কিছু দিন পরে রাজার আবার প্রচন্ড বুকে ব্যথা হলো৷
কবিরাজ এলো,তারপর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই আর কিছু হলো না৷ রাজা অবশেষে মারা গেল৷
আর রাধুনী দৌড়ে গেল পাশের দেশের রাজার দরবারে তার পুরস্কার আনতে৷ কারণ, সে বীর রাজাকে যুদ্ধ ছাড়াই মেরে ফেলতে পেরেছে৷