শিশির বাবুর স্ত্রী প্রায় চার মাস ধরে অসুস্থ অনেক ডাক্তার দেখালেন কাজ হয়নি এমনকি হুজুর দরবেশ ওঝা কিছুই বাদ দেন নি কিন্তু ওনার স্ত্রীর অবস্থা দিনকে দিন শুধু খারাপই হচ্ছে শেষ পর্যন্ত শিশির বাবু তার এক বন্ধুর পরামর্শে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন
ডাক্তার সাহেব আমার স্ত্রী কে কেমন দেখলেন ? ও কি কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না ?
ভেঙে পড়বেন না শিশির বাবু আপনি যদি ভেঙে পড়েন তবে ওনাকে কে দেখবে ?
আমার মনেহয় উনি প্রচন্ড মানষিক আঘাত পেয়েছেন এবং সম্ভবত উনি কিছু একটা কে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছেন যতক্ষণ না ওনার মন থেকে ভয় দূর করা যাবে কতদিন পর্যন্ত ওনাকে সুস্থ করা সম্ভব হবে না তবে এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী সাহায্যে করতে পারেন আপনি আমি !!!!
হ্যাঁ উনি অসুস্থ হওয়ার আগে নিশ্চয়ই এমন কিছু আপনাকে বলতেন যা কিছুটা অবাস্তব হয়তো আপনি সেগুলি গুরুত্ব দেন নি ,অথবা ওনার অস্বাভাবিক কোন আচরন
এই সব ক্ষেত্রে রোগীর পিছনের ইতিহাস না জানলে চিকিৎসা করা খুবই কঠিন
আপনি এক সপ্তাহ পর আসুন আর এর মাঝে অবশ্যই আপনার স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার আগে কি কি করতেন সেগুলি লিখে নিয়ে আসবেন
এক সপ্তাহ পর ………………
আপনি এখানে লিখেছেন আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা হঠাৎ ই একেবারেই হারিয়ে যার কোন হদিস পাওয়া যায় নি এর দুই দিন পরই উনি মানুষিক ভারসম্য হারান
আচ্ছা মেয়েটার বয়স কেমন হবে ?
এই ধরুন দশ হতে পারে মেয়েটি হারানোর আগে কি আপনার স্ত্রী আপনাকে কিছু বলেছিলেন ??
প্লিজ একটু মনে করার চেষ্টা করুন হ্যাঁ মনে পড়েছে , হঠাৎ দুপুর বেলা ও এসে বলল এই তাড়াতাড়ি ব্যালকনি তে এসো আমি যাওয়ার পর আমাদের পাশের বাড়ির দিকে দেখিয়ে বলল , ওখানে একটা লোক দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর মুখের দুই পাশ থেকে রক্ত ঝরছিল আমি গুরুত্ব দিই নি ভেবেছি হয়তো দেখার ভুল আবার একদিন বলেছিলো চলো আমরা এই বাড়িটা বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাই আমার এখানে বসবাস করতে খুব ভয় করে তারপর এক সপ্তাহ পর ওর প্রচন্ড জ্বর হয় জ্বরের মধ্যে প্রলাপ বকছে সব কথা বোঝা যাচ্ছিলো না শুধু এতটুকু বুঝেছিলাম ও আমাকেও খুন করে ফেলবে ঐ যে একটা হাত ঝুলিয়ে রেখেছে , হাত থেকে টুপ টুপ করে রক্ত পড়ছে আমি গুরুত্ব দিইনি ,ভেবেছিলাম জ্বরের মধ্যে হয়ত কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছে ভুলটা এখানেই হয়েছে শিশির বাবু আচ্ছা উনি যে বাড়িটা প্রথম দিন দেখিয়েছিলেন ওখানে আসলে কে থাকেন ?
ঠিক বলতে পারব না তবে শুনেছি ঐ বাড়িতে একজন ভদ্রলোক থাকেন কিন্তু ওনাকে খুব কম লোকেই নিজের চোখে দেখেছে কিছু একটা এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যাবসা করেন মাঝে মাঝে রাতে বড় বড় বাক্স গাড়িতে করে নিয়ে আসতেন আবার নিয়ে যেতেন
কেসটা ধীরে ধীরে জটিল হচ্ছে এরমধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি ঐ লোকটা সম্পর্কে আরও জানতে হবে চলুন আমি আজকে আপনাদের বাড়িতে যাব ।
২ দিন পর সকালে…
শিশির বাবু গুড মর্নিং
আরে ডাক্তার বাবু আপনি ২দিন কোথায় ছিলেন ?
শিশির বাবু আপনার স্ত্রী সঠিক কথাই বলেছিলেন
মানে ,বুঝলাম না
ঐ লোকটি মানে আপনাদের পাশের বাড়ির রহস্যময় লোকটি একজন বিকৃতসম্পূর্ণা সাইকো , নারী খাদক ও বলতে পারেন ,
নরখাদক শুনেছিলাম ,নারীখাদক আবার কি ?
এরা আসলে শারীরিক ভাবে যৌন অক্ষম , নিজের অক্ষমতা এবং নারী দের উপর পূর্বের কোন রাগ থেকে ,এরা ভয়াংকর বিকৃতমনা খুনী তে পরিণত হয়, এরা মৃত নারীর শরীর কে উপভোগ করে তারপর ,শরীর টাকে কেটে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলে ,
আপনি হয়তো জানেন না এই লোকটা আপনাদের এলাকায় আসার পর আপনাদের স্থানীয় কবরস্থান থেকে অনেক গুলি অল্প বয়সী মেয়ের মৃত্যু দেহ রাতারাতি উধাও হয়ে যাচ্ছে , আর আপনি বলেছিলেন না ঐ লোকটা রাতে বড় বড় বাক্স কিছু আনা নেয়া করে ,ও গুলো আসলে মৃত্যু দেহের কফিন !!!
আমার মনে হয় কি জানেন আপনার বাড়ির কাজের মেয়েটাকে ঐ ব্যক্তি ই হত্যা করেছে কারণ ওর বাড়ির খাটের উপর থেকে একটা দশ বছরের মেয়ের জামাকাপড় পাওয়া গেছে
জামাকাপড়ে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে আমার ধারণা ঐ মেয়েটিকে সে প্রথমে হত্যা করে তারপর রেপ করেছিলো,
কাপড় গুলো এখন কোথায় রয়েছে ?
কাপড় এবং লোকটা দুজনেই বর্তমানে থানায় রয়েছে
থানায় ! আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনি ডাক্তার নাকি গোয়েন্দা ?
ঠিকই ধরেছেন আমি একজন পেশাদার গোয়েন্দা এই কেসটায় আপনাদের সহযোগীতা অপরিহার্য ছিল।
শিশির বাবু আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আমি একটু একা কথা বলতে চাই ।
এরপর শিশির বাবুর স্ত্রী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যান
শিশির বাবুর কাজের মেয়েটি কে সত্যিই ঐ নারী খাদক হত্যা করেছিলো, মেয়েটিকে হত্যা করার সময় শিশির বাবুর স্ত্রী দেখে ফেলেন।
আমাদের সকলের আশেপাশে হয়তো এমন অনেক সাইকো রা রয়েছে যারা সময় সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দেবে তাঁর রক্ত
পিপাসু জীব্বা ।
(সমাপ্ত)