বেলাল হোসেন
এইখানে মেঘনা মিশেছে গ্রামের তীর ধরে।
পূর্বদিকে জাগ্রত জনপদ কর্মে মৎসজীবি আর
বনঝোপে ঘেরা বন-জঙ্গলে পাটিপাতা,
তারই উত্তরে মরু ধূ-ধূ হাওর,ওপারে কৃষক জমি
ঠিক তারই পশ্চিমে যমুনা,দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
আমি আমার জন্মভূমির কথা বলছি।
আমি জন্মেছি এই নিসর্গের স্নেহমমতায়
অপরূপ সবুজ ঘাস আর শষ্যের গোলাবাড়িতে।
শীতের কুয়াশা সকালে বন-ঘুঘু আর শালিক পাখির কিচিরমিচির ;
ধান ক্ষেতে চড়ই,পুকুরে পানকৌড়ি আর ছদ্মবেশে সুঁচালো ঠোঁটে তীক্ষ্ণ চাহনি মাছের পানে।
আবার কখনো কাকপাখি যায় দলবেঁধে
আর নাম না জানা পাখি করুণ সুরে ফেলে দীর্ঘশ্বাস,
ভয়ে আতকে উঠে মন,শুনেছি কাকের ক্রন্দনে
আত্মীয়ের মৃত্যু হয়,সত্য শুনেছি!
সেদিন আকাশ ভাঙা বৃষ্টিতে মেঘনা হলো উতলা,
ভেঙে গেলো বাঁধ,ভেঁসে গেলো কৃষকের ফসল-গরু
আর পথিকের নতুন বধূ!
সোনালী ফসল,লাল গরু তারই রেশ ধরে
লাল কাপড় পরা পথিকের বধূ হারিয়ে গেলো!
হারিয়ে গেলো নোলক-রেশমি চুড়ি আর
গলায় ঝড়ানো বকুলের মালা।
চারিপাশে পানির কলরবে হৈ-চৈ পরলো
কার যেনো নতুন বধূ ভেঁসেছে,মেঘনার স্রোতে।
সত্তরের ঝড়ের মত ঘুম ভাঙলো পানির কলরবে।
কৃষকের জমি মরু ধূ-ধূ আর সময় বুঝে
ছেলে-পেলে আর মৎস্যজীবিদের আনাগোন,
কলাগাছের নাও ভাঁসিয়ে জাল বিছিয়ে রুই-কাতলা
আর মেঘনার সুস্বাদু মাছ ইলিশ ধরতে থাকে,
চোখে আনন্দের অশ্রু!
পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিনের নদী জলে একাকার,
শুধুই মাঝখানে জেগে আছে ছোট গ্রাম!
এখন সে কেবল স্মৃতিরখায় বিচলিত ইতিহাস
আমারই গ্রাম,এই প্রেম এই নিসর্গ!