স্বাধীনতা মানবজীবনে আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে স্বাধীন সত্তা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আর তার স্বাধীন বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। পরাধীনতা মানব জীবনে সবচেয়ে বড় বঞ্চনার নাম। বাবা আদম ও মা হাওয়ার আবাসভূমি ছিল পৃথিবী জুড়ে। পৃথিবীর বিশাল বক্ষে তখন কোন সীমানা চিহ্ন আকতে পারেনি কেউ।
তারপর তার সন্তানেরা পারস্পরিক স্বার্থপরতার পথ ধরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সীমানা চিহ্নিত করে ফেলেছে নিজেদের আবাসভূমি। সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য স্বাধীন রাষ্ট্র। জন্ম নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাধীন জাতি। আর যখনই কোন জাতির এক অংশ অন্য অংশের দ্বারা নিজেদের স্বাধীনতা খর্ব হতে দেখেছে একে অন্যের দ্বারা শোষিত হয়েছে তখনই শোষিত জনগোষ্ঠী শোষন কারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেদের মুক্ত করতে সংগ্রাম করেছে। একই ধারায় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি এবং স্বাধীন বাঙালি জাতির অভ্যুদয় হয়েছিল ১৯৭১ সালে। এ মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ঝরেছে সাগর সমান রক্ত, পাহাড় সমান লাশ,হাজার -হাজার পঙ্গুত্ববরণ শত- শত মা-বোনের ইজ্জত আর লক্ষ -লক্ষ টাকার দেশীয় সম্পদের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই বিজয়ের দেখা পেয়েছি স্বাধীন সংবিধান লাল সবুজের পতাকা বাংলাদেশ নামের সীমানা ও মানচিত্র ।
স্বদেশ প্রেম প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস, বিশেষত মুসলমানদের প্রতিটি রক্তকণিকায়ই দেশপ্রেমের শিহরণ থাকা বাঞ্চনীয়।কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দেশপ্রেমিকের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সফর থেকে প্রত্যাবর্তন কালে মদিনার সীমান্তে অহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির চেহারায় আনন্দের় আভা ফুটে উঠত । তিনি বলতেন “ওহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও ওহুদ পাহাড় কে ভালবাসি”। (বুখারী শরীফ ১০২৮) দেশপ্রেমের অন্যতম বর্হিপ্রকাশ হলো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য প্রানপন চেষ্টা করা। হাদীস শরীফে এসেছে আল্লাহর পথে একদিন একরাত সীমান্ত পাহারা দেওয়া এক মাস পর্যন্ত সিয়াম পালন ও একমাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এই অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মৃত্যুর পরও তারা তার জন্য অব্যাহত থাকবে কবর হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। ( মুসলিম শরীফ হাদিস নং ১৯১৩)
বিজয় দিবস উদযাপনে করণীয়: ইসলাম একমাত্র জীবন বিধান যাতে রয়েছে সকল সমস্যার সমাধান। সকল কাজের সঠিক দিকনির্দেশনা। ইসলাম ধর্মে বিজয় দিবস উদযাপনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে । বিজয়ীদের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে।
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো। আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ।(সূরা নাসর আয়াত ১-৩) এ আয়াত থেকে জানা যায় বিজয় দিবসের দিনে আমাদের যা করণীয় তা হচ্ছে
*আল্লাহর বড়ত্ব পবিত্রতা বর্ণনা করা
*যুদ্ধকালীন আমাদের অজান্তে ভুলত্রুটি হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও।আর হাদীস শরীফে এসেছে
*বিজয় দিবসে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা
*মৃত ব্যক্তিদের জন্য ইস্তেগফার দোয়া করা
*কোরআন পাঠ সহ বিভিন্ন ভাবে ঈসালে সাওয়াব করা। মুসলমানদের উচিত ইসলামী সংস্কৃতি অনুসরণ করে মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করা ও বিজয় উদযাপন করা। মহান আল্লাহ আমাদের ইসলামি নির্দেশিত পথে আল্লাহ পাকে অমিয় দান বিজয় দিবস পালন করা ও আত্নত্যাগী শহিদের প্রতি সম্মান দোয়ার তৌফিক দান করুন । আমিন
মাওলানা ইব্রাহিম খলিল মাহমুদী
ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, বাতায়ন24.কম