বাতায়ন24.কম
শুক্রবার, মার্চ 31, 2023
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
বাতায়ন24.কম
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন
মূলপাতা মূলপাতা সাহিত্য সম্ভার বড় গল্প

আজাদি

শাশ্বত মন্ডল।

batayan24 দ্বারা batayan24
জানুয়ারী 31, 2021
ভিতরে বড় গল্প
0 0
0
0
শেয়ার
48
অবলোকন
ফেসবুকে ভাগ করুনটুইটারে শেয়ার করুন
শেয়র করুন

দমদম এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এল রোহিত। হাতঘড়ি তে সময় টা দেখে নিল, দুপুর ১২ টা। তার মানে তার হাতে খানিক টা সময় আছে, যা করার এর মধ্যেই করতে হবে তাকে। মোবাইল টা বের করে একটা ক্যাব বুক করে নিল সে। প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যেই ক্যাব এসে হাজির হল তার সামনে। ক্যাব এ উঠে গেল সে। চোখে মুখে যেন একটা উশখোখুসখো ভাব।

আজ ২৬ শে জানুয়ারী, প্রজাতন্ত্র দিবস। কিন্তু বর্তমানে কলকাতা শহরে এটা শুধু মাত্র সকাল সকাল পতাকা উত্তোলন আর দেশভক্তির গান চালানো ছাড়া আর কিছু নয়। এমন কি রোহিত এর ক্যাবেও গান চলছে,

“ সন্দেশেঁ আতি হ্যায়, হামে তরপাতি হ্যা…..”

“ দাদা একটু গান টা বন্ধ করুন না” বিরক্ত হয়েই ক্যাব ড্রাইভার কে বলে রোহিত। ক্যাব ড্রাইভার গান বন্ধ করে দিলে রোহিত নিজের ফোন বের করে একটা কল করে, স্ক্রিন এ ভেসে ওঠে “ বাবা।” ফোন টা কানে নিয়েই সে বলে,

      “ হ্যালো বাবা!”  তারপর গলার আওয়াজ একটু কমিয়ে বলে, “ বাবা আই গট দ্য কালপ্রিট, ইয়া আই হ্যাভ অল দ্য……..” একটা বিকট শব্দে ব্রেক কষার শব্দ হয় এবং গাড়ি টা সামনের একটা ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। জ্ঞান হারানোর আগে অবধি রোহিত এটা বুঝতে পারে যে তার মাথার পেছন দিকে ভারী কিছুর সাথে আঘাত লাগল। তার পর তার কিছু মনে নেই।

এস এস কে এম এর কেবিনে রোহিত কে তার দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির ছবি গুলিই দেখাচ্ছেন তার বাবা এ সি পি সৌরদীপ সেন, সাইবার সেল, কলকাতা পুলিশ।

সাথে আছে সৌরদীপ এর এসিস্ট্যান্ট, ইন্সপেক্টর স্বাতীলেখা ভট্টাচার্য।  ছবি গুলো দেখাতে দেখাতে সৌরদীপ বলতে থাকে,

   “ সেদিন অ্যাকসিডেন্ট এর আগে শেষ কল তুই আমাকেই করেছিলি, তারপর হঠাৎই তোর কল ডিসকানেকটেড হয়ে যায়। তারপর যখন খবরটা পাই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছিল, তাড়াতাড়ি যাই গিয়ে দেখি এসব, জানিস প্রায় ৭ মাস পর তোর জ্ঞান ফিরল।”

রোহিত তার বাবার কথা খুব মন দিয়ে শুনছিল, এতক্ষণে সে খানিকটা অবাক হয়ে বলল, “ আমি!!!আমি এখানে কি করে আসতে পারি বাবা? আমি তো ইউ এস এ ছিলাম, ক্যাল টেক এ আমি রিসার্চ…….”

রোহিতের কথা শেষ না হতেই সৌরদীপ অবাক হয়ে বলল, “ এসব কি রোহিত, কি বলছিস এসব তুই, সেসব তো ৭ বছর আগেকার কথা…..তুই তো এখন  ইউ এস এই চাকরি করিস…..”

“ আমি চাকরি!!!!!” আকাশ থেকে পরে রোহিত।

রোহিত কে হাইপার হতে দেখে স্বাতীলেখা সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার কে ডেকে নেয়। ডাক্তার এসে রোহিত কে শান্ত করে।

ডাক্তার বাইরে যেতেই  সৌরদীপ স্বাতীলেখা কে রোহিতের কাছে রেখে দিয়ে ডাক্তার কে ধরে,

  • কি বুঝছেন ডক্টর?
  • হুমম… এটা বিশেষ ভয়ের কিছু না।
  • মানে? প্লিজ মেক ইট ক্লিয়ার ডক।
  • মানে হল আপনার ছেলের অ্যাকসিডেন্ট এর জন্য পার্সিয়াল অ্যমনেসিয়া হয়ে গেছে, গত ৫-৬ বছরের কোন মেমরি ওর নেই।
  • ওহ গড! এবার??
  • আরে চিন্তা করবেন না অফিসার, এই কেসে মেমোরি খুব জলদি ফিরে আসে। কিন্তু একটা জিনস আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
  • কি, ডক? টেল মি!
  • আপনার ছেলেকে নরম্যাল ফিল করান, ওকে বুঝতে দেবেন না কি হয়েছে। ভালো ও ঠিক হয়ে যাবে ডোন্ট ওয়রি। এখন একটা ঘুমের অষুধ দিলাম,ঘূমোক, সন্ধ্যে বেলায় এসে আবার ওকে দেখে যাবেন।

ডাক্তার বিদায় নিলে সৌরদীপ ইশারায় স্বাতীলেখা কে ডেকে নেয়। ঘুমন্ত রোহিত কে দেখে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে সে। গাড়িতে দুজন উঠতেই স্বাতীলেখা জিজ্ঞাসা করে, “  কোথায় যাব? বাড়ি?

সৌরদীপ ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। স্বাতীলেখা গাড়ি চালাতে থাকে, জানালার দিকে তাকিয়ে সৌরদীপ ভাবতে থাকে বিগত ঘটনা গুলি কে।

ছোটোবেলা থেকেই রোহিত ছিল খুব মেধাবী, ৫ বছর বয়সে মা কে হারানোর পরে সৌরদীপ ই ছিল ওর বাবা আর মা। চাকরির ব্যস্ততা সত্ত্বেও সৌরদীপ তাকে সময় দিয়েছে অনেক, তাই বাবা – ছেলের সম্পর্ক আজ বন্ধুর মতো। রোহিতের মাধ্যমিকে রাজ্যে সপ্তম হওয়া থেকে শুরু করে কলকাতা আই এস আই থেকে বি. স্ট্যাট – এম.স্ট্যাট করা এবং ক্যাল টেক এ পি. এইচ. ডি করতে সবই মনে পড়ছে সৌরদীপের। হঠাৎই স্বাতীলেখার কন্ঠস্বরে তার সম্বিত ফিরে এল, “ স্যার, আপনার বাড়ি চলে এসেছে।” “ থ্যাংক ইউ” বলে হালকা হেসে গাড়ি থেকে নেমে এল সৌরদীপ। স্বাতীলেখা জিজ্ঞাসা করে,

  • স্যার ইভনিং এ যাচ্ছেন তো?
  • ইয়েস, স্বাতী
  • ও কে স্যার আমি আপনাকে পিক আপ করে নেব।

কোনো উত্তর না দিয়ে হালকা হাসে সৌরদীপ। তারপর গেটখুলে ঘরে চলে যায় সে।

ঘরে ঢুকে সৌরদীপ ফ্রিজ থেকে জলের বোতল বার করে ঢকঢক করে জল খেল। আসলে গত কয়েক মাস ধরে তার ওপর স্ট্রেস এমনিতেই বেশি তার ওপর রোহিতের এই স্মৃতিভ্রম। বছর ৫৭ এর সৌরদীপ সোফায় বসে পড়ল। প্রচন্ড ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে শরীর টাকে এলিয়ে দিল সোফায়।

আসলে এই ঘটনার শুরু, আজ থেকে প্রায় একবছর আগে থেকে, প্রথম প্রথম এই ঘটনা কে খুব একটা মনোযোগ না দিলেও শেষের দিকে এটা সবার ঘুম কেড়ে নিল। কলকাতা শহরে এক মারন গেম এর আবির্ভাব, যে গেমটা খেলার অর্থই হল মৃত্যু। চারজন তরুন প্রান এই গেম এর শিকার। পর পর এই চার টে মৃত্যু নড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ কে, স্বভাবতই কেস যায় কলকাতা সাইবার সেল এর কাছে, কেসের দায়িত্বে থাকে কলকাতা সাইবার সেল চিফ এ সি পি সৌরদীপ সেন এবং ইন্সপেক্টর স্বাতীলেখা ভট্টাচার্য।  স্বাতীলেখাকে নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করে সৌরদীপ। ভিকটিম রা যেহেতু সকলেই তরুন, অভিজ্ঞ সৌরদীপ বুঝেছিল এই কেস কে সলভ করার জন্য দরকার এক তরুন মস্তিষ্ক, তাই ২৮ বছর বয়সী সাহসী স্বাতীলেখাকে নিজের অ্যসিস্টেন্ট বেছে নিয়েছিল সে। প্রথমদিন ই স্বাতীলেখা নিজের কর্মদক্ষতা দেখিয়ে সৌরদীপ কে চমকে দিয়েছিল, যখন কেস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সে সৌরদীপ কে এনে দিয়েছিল।

  • স্যার, মে আই কাম ইন
  • ইয়েস, কাম স্বাতী
  • স্যার, অ্যাজ ইউ সেড, আই হ্যাভ গ্যাদারড অল দ্য ডিটেইলস রিগার্ডিং দিস কেস।
  • ইয়েস প্রসিড।
  • থ্যাংক ইউ স্যার।

প্রজেক্টারের সাথে নিজের ল্যাপটপ টাকে কানেক্টেড করে স্বাতীলেখা বলতে শুরু করে,

  • স্যার, আমি আমার ফাইন্ডিংস কে কয়েকটা চ্যাপ্টারে ভাগ করেছি, ফার্স্ট চ্যাপ্টার হল ডেস্ক্রিপশন, এই মারন গেম “আজাদি” শুধু মাত্র ইয়াং জেনেরাশন কেই টারগেট করেছে, আমাদের চারজন ভিকটিম এর বয়স দেখলেই তা বোঝা যায়। প্রথম ভিকটিম, প্রমিত যশ, বয়স ২২, ফাইনাল ইয়ার আশুতোষ কলেজ। দ্বিতীয় ভিকটিম, সুতপা দাস বয়স ১৯, এও কলেজ স্টুডেন্ট, গুরুদাস কলেজ। অভিজিৎ বিশ্বাস, বয়স ২৬ আই টি কর্মী আর লাস্ট শ্রীতমা মুখার্জি, বয়স ২৬, রিসার্চ স্কলার।
  1. আচ্ছা, গুড জব, নেক্সট চ্যাপ্টার?
  2. নেক্সট লি আমরা দেখব এদের মেন্টাল স্টেটাস। এরা চারজনেই মেন্টালি ডিস্টার্ব থাকত, এবং এরা প্রত্যেকেই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিক্ট ছিল।তাই এদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকেই এদের মেন্টাল কন্ডিশন সম্পর্কে যেকেউ আন্দাজ করতে পারবে। আর লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট এদের চার জন এর ই ডেথ হয়েছে এই গেম টা খেলার জন্য এবং আর একটা সব থেকে বড় বিষয় এরা চারজনেই সুইসাইড কে গ্লোরিফাই করেছে, মরার আগে এরা সুইসাইড নোট এ রেস্পেক্টিভ লি এই গান বা কবিতার লাইন লিখে গেছে, যেগুলো হল আই এন এ মার্চ, সুকান্ত ভট্টাচার্যর ১৮ বছর বয়স, নজরুলের “ গাহি সাম্যের গান” আর নজরুলের “ বিদ্রোহী”।
  3. আচ্ছা ভেরি গুড, আর কি প্রগ্রেস?
  4. স্যার এই গেম মূলত কলকাতা এবং শহর তলীকে টারগেট করেছে, অল ওভার বেঙ্গলে সেভাবে এখনো এফেক্ট করেনি, তবে করতে দেরি নেই, কলকাতা হাওড়া মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন এই গেমের ইউজার, সবার ফোন সিজ করে নেওয়া হয়েছে, তাদের জি মেল একাউন্ট ও আমাদের সুপারভিশনে। এই গেম কে আটকাতে হবে স্যার, নাহলে খুব ই বড়ো বিপদ আসছে।
  5. হুম, বাট গ্রেট জব স্বাতী।
  6. থ্যাংক ইউ স্যার। আর একটা বিষয়…
  7. ইয়া…টেল মি
  8. স্যার এই গেমের মাস্টারমাইন্ড প্রচন্ড স্মার্ট, আমরা এখনো অব্ধি এই গেম টাকেই ট্রেস করতে পারিনি, কিভাবে এরা একসেস করল সেটাই একটা ধোঁয়াশা। আমি জানি না আমরা কতটা এগুতে পারব, তাই বলছিলাম যদি কিছু মনে না করেন, আমরা যদি একজন এক্সপার্ট এর সাহায্য নি….
  9. কিরকম এক্সপার্ট?
  10. স্যার, আই মিন টু সে রোহিত, ইওর সন, সবাই জানে হি ইজ জাস্ট আ জিনিয়াস। আর ওর থেকে ভালো এই বিষয়ে আর কে হেল্প করবে,যদি তাড়াতাড়ি কেসটা সলভ করতে হয় আমাদের রোহিতের হেল্প দরকার।
  11. আচ্ছা, আই উইল থিংক এবাউট ইট।
  12. থ্যাংক ইউ স্যার……

মোবাইলের ক্রিং ক্রিং এলার্মে তন্দ্রা ছুটে গেল সৌরদীপের। ঘড়ি দেখল ৩ঃ৩০ বাজে, বিকালে সে যাবে আবার রোহিতের কাছে, তাই এখন ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে গেল সে।

হাসপাতালে চারতলায় রোহিতের কেবিন, একজন মুখোশধারী পাইপ বেয়ে রোহিতের কেবিনের জানালা খুলে ওর ঘরে ঢুকলো, আপাদমস্তক কালো পোশাক এবং মুখে কালো মাস্ক, রোহিত অঘোরে ঘুমাচ্ছে, চুপিসারে সেই ব্যাক্তি চলে গেল রোহিতের কাছে, হঠাৎই কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে রোহিতের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলেই সেই অজ্ঞাত পরিচয় কে দেখেই চিতকার করতে যাবে এমন সময় সে তার মুখ চেপে ধরল বাঁ হাত দিয়ে, আওয়াজ করতে পারল না রোহিত। ডান হাতে বের করে আনল চকচকে ধারালো ছুরি, যা রোহিতের বুকে বসানোর জন্য উদ্যত হল।

রোহিত প্রচন্ড চিতকার করে উঠতে গেল ( চিতকার), কিন্তু সেই মুহূর্তেই তার ঘুম ভেঙে গেল, সেই সাথে সাথে দেখল সে তার কেবিনেই আছে, সামনে তার বাবা সৌরদীপ, আর স্বাতীলেখা রয়েছে, সৌরদীপ তাকে এসে হাত টা চেপে ধরে বলে, “ রিলাক্স, কিচ্ছু হয় নি, কিচ্ছু হয় নি।” চারিদিক ভালো করে দেখে নিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে রোহিত বলে, “ ও তার মানে স্বপ্ন ছিল।”

ডাক্তার রোহিত কে রুটিন চেক আপ করে নিয়ে বলে, “ ইউ আর এবসলিউটলি ফাইন, কাল তুমি সকালেই বাড়ি যেতে পারবে।” ডাক্তার চলে যেতেই সৌরদীপ রোহিত কে জিজ্ঞাসা করে,

  • কেমন লাগছে এখন?
  • ভালো,  বাবা,কিন্তু মাথাটা বড্ড ধরে আছে।
  • হুম তা একটু থাকবেই
  • বাবা একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
  • হ্যাঁ  কর।
  • বাবা, আমি এই কলকাতায় এলাম কি করে? কাল তুমি আমাকে একসিডেন্ট এটসেট্রা বলছিলে, কিন্তু আমি তো ক্যাল টেক এ ছিলাম, ইন্ডিয়া কবে এলাম?

প্রশ্ন টা শোনার পর সৌরদীপ এবং স্বাতীলেখা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে, কি বলবে ঠিক বুঝতে পারল না। স্বাতীলেখাই নিজের নিরবতা ভঙ্গ করে কথা বলে উঠলো।

  • একচুয়েলি, রোহিত, দ্য পয়েন্ট ইজ দ্যাট….আসলে…..মানে…..

কথা শেষ করার আগেই সন্দিহান রোহিত স্বাতীলেখার হাত চেপে ধরে, ওর হাতের রিস্ট ওয়াচ টাকে দেখে বিস্ফারিত চোখে জিজ্ঞাসা করে,

  • হোয়াট দ্য হেল ইজ দ্যাট?  বাবা! এটা কি???

চমকে গিয়ে স্বাতীলেখা নিজের ইলেকট্রনিক ঘড়ির দিকে তাকায়, সাথে সাথে সৌরদীপ ও। দুজনেই দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়, সেখানে স্পষ্ট সময় এবং তারিখ, ৬ টা ১৫, ১২.৮.২০১৯. রোহিত আবার প্রশ্ন করে, এবার তার গলায় বিস্ময়ের সুর।

  • বাবা, আমি ২০১৯ এ কিকরে এলাম, আমি তো ২০১৩ তে ইউ এস গেছিলাম…..এসব কি হচ্ছে বাবা?? ( একটু অসহায় হয়ে) বাবা প্লিজ বলো এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে? কি লুকোচ্ছ তোমরা?……

রোহিতের অসহায় অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় সৌরদীপ। স্বাতীলেখার দিকে তাকাতে সে রোহিতের কাধে হাত রাখে এবং বলে

  • লুক রোহিত, তুমি সুস্থ হয়ে নাও, দেন উই উইল ডিসকাস এবাউট দিস
  • নো,  আমি এখনই জানতে চাই কি হয়েছে, বাবা?  কি হয়েছে?
  • ওকে রোহিত, আমিই বলছি কি হয়েছে?
  • ইয়া ইউ টেল মি, একসিডেন্ট এর আগে কি হয়েছিল, আর কিই বা হয়েছে এখন।

স্বাতীলেখা রোহিত কে তার স্মৃতিবিভ্রমের কথা জানায়, এবং এও জানায় তার গত ৬-৭ বছরের স্মৃতি চলে গেছে। রোহিত শুনে খানিক টা স্তব্ধ হয়ে যায়, তার পরেই সে সৌরদীপ কে জিজ্ঞাসা করে,

  • বাবা এর মধ্যে কি এমন হল যে আমাকে কলকাতা আসতে হল?

সৌরদীপ এবং স্বাতীলেখা একবার পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নেয়। তারপর সৌরদীপ তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতে থাকে, রোহিত সব টা মন দিয়ে শোনে.

  • তারপর আমি স্বাতীর কথা অনুযায়ী তোকে এই সিক্রেট মিশনে নিয়ে এলাম।
  • আচ্ছা তারমানে তোমাকে হেল্প করার জন্যই আমার কলকাতায় আসা।
  • নট দ্যাট মাই সান। তুই শুরুতে ওখানে বসেই কাজ করছিলি, কিন্তু হঠাৎই  তুই আসতে চাইলি কলকাতা, কেন সেটা তুই এসে বলবি বলেছিলি, কিন্তু তার আগেই……
  • আমি কতদিন এখানে এভাবে আছি বাবা?
  • প্রায় ৭ মাস।
  • ওহ মাই গড। এতদিন পর আমার হুশ এল।
  • হুম

বলেই সৌরদীপ তার ছেলে কে আয়না দেখায়, রোহিত নিজের বড়োচুল আর দাড়ি দেখে ঘাবড়ে যায়। সৌরদীপ তাকে আবার বলে,

  • কাল তোর ছুটি, তুই বাড়িতেই আরাম করবি এবার থেকে।

বলেই বিদায় জানায় সে, আর সাথে স্বাতীলেখাও।

গাড়িতে যেতে যেতে স্বাতীলেখা সৌরদীপ কে জিজ্ঞাসা করে,

  • স্যার, এবার কি হবে?
  • কিসের কি হবে?
  • স্যার আই মিন এই কেস টার?
  • যেরকম আমরা তদন্ত করছি সেরকমই হবে।
  • আর স্যার রোহিত?
  • নো, স্বাতী আমি পারব না আর আমার ছেলে কে বিপদে ফেলতে, আমি জানি এই একসিডেন্ট ও করানো হয়েছে, আসলে সে জানে রোহিত হয় তো তাকে ধরে ফেলবে, তাই সে ওকে মারার প্ল্যান করেছিল। আমি আর রোহিত কে টানব না এর মধ্যে।

স্বাতীলেখা, সৌরদীপ কে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে চলে যায়।

সেই রাত্রে রোহিত আর ঘুমাতে পারল না, তার যে পার্সিয়াল অ্যামনেসিয়া হয়েছে সেটা স্পষ্ট, সারা রাত ধরে সে তার বাবার কথা গুলো মনে করার চেষ্টা করল কিন্তু নাহ, কিচ্ছু তার মনে পড়ল না। সারা রাত সে এই চিন্তায় সে ঘুমাতে পারল না। সকাল হতেই সে ডাক্তার এর কেবিনে এসে হাজির হল।

  • ডক, মে আই কাম ইন?
  • ইয়েস রোহিত, কাম।
  • ডক আই হ্যাভ সাম কোয়েশ্চনস
  • ইয়া আস্ক মি।
  • ডক আই নো দ্যাট আই এম নট পারফেক্টলি ফাইন।
  • হু সেইড দ্যাট? ইউ আর এবসলুইট লি ফাইন।

কিন্তু একটা চেঞ্জ এসছে, সেটা হল তোমার ব্রেন রিস্টার্ট নিয়েছে, তাই আবার নতুন ফর্মে সেটা ছুটবে, আই মিন নাও ইউ আর মোর স্কিলড দ্যান প্রিভিয়াস।

  • মানে?
  • মানে হল তুমি এখন আর ও বেশি ভালো মাথা খাটাতে পারবে, আর হ্যাঁ পুরোনো কথা মনে করার বেশি চেষ্টা করো না, পার্সিয়াল অ্যামনেসিয়ায় স্মৃতি ঠিক ফিরে আসবে, ডোন্ট ওয়রি।
  • মানে আমি যা কাজ করছিলাম সব আমি আবার করতে পারি?
  • অফ কোর্স, ইউ হ্যাভ লস্ট সাম ইয়ারস নট ইওর স্কিল। গো গেট ইওর জব.
  • থ্যাংক ইউ ডক।
  • ওয়েলকাম

( থেমে গিয়ে)

  • ডক, ক্যান ইউ এরেঞ্জ আ ট্রিমার ফর মি….আই নিড টু বি ফ্রেশ।
  • ইয়া সিওর ( হেসে)

প্রায় সকাল দশ টায় সৌরদীপ আসে হসপিটালে। কিন্তু এসেই রোহিতের সেই পুরোনো দাড়ি ট্রিমড চেহারা দেখে ভারী অবাক হয় সে। দেখে রোহিত বাড়ি যাবার জন্য তৈরী। রিসেপশনে কথা বলা থেকে শুরু করে, সব নিজে করে রোহিত নিজেই গাড়িতে উঠল। সৌরদীপ গাড়ি স্টার্ট করল, আজ রোহিত কে দেখে অনেক সুস্থ লাগছে, মনে হচ্ছে যেন পুরোনো ফর্মে রোহিত ফিরে গেছে। মনে মনে খানিক টা স্বস্তি পেল সৌরদীপ। গাড়িতে যেতে যেতেই রোহিতই নিজে থেকে কথা বলতে শুরু করে,

  • বাবা!
  • বল।
  • বাবা, আই ওয়ানা গেট ব্যাক টু জব।
  • ওকে, কিছুদিন রেস্ট কর, দেন তোর ইউ এস যাবার এরেঞ্জমেন্ট করছি।
  • না, বাবা, তুমি যে কাজ আমাকে দিয়েছিলে সেই কাজ আমি করতে চাই।

কথা টা শুনে একটু ঘাবড়ে যায় সৌরদীপ, রোহিত আবার তাকে বলে,

  • বাবা তোমার মনে আছে, আমার আইডল কে?
  • হুম, কেন থাকবে না, “নেতাজি”
  • হুম তাহলেই বোঝো, পিছনে আমি হটব না, আমি কাজ করেই ছাড়ব, ধরেই ছাড়ব সেই কালপ্রিট কে।

সৌরদীপ খানিকক্ষণ চেয়ে থাকে রোহিতের দিকে, গর্ব অনুভব হয় নিজের ছেলের জন্য, মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও সে এই কেসে তাকে সাহায্য করতে চাইছে। সে বলে

  • প্রাউড অফ ইউ, রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ।
  • আচ্ছা, তুমি বলছিলে আমি খানিকটা এগিয়েছিলাম কেসে, সেই ফাইন্ডিংস তুমি আজ আমাকে দেবে।
  • ঠিক আছে, আগে বাড়ি চল।
  • হুম।

তারা বাড়ি চলে এল। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিল, তারপর তারা আলোচনায় বসল। রোহিতকে কেস সংক্রান্ত ডিটেলস আবার একবার সৌরদীপ, সেগুলোকে নিয়ে আলোচনা হতে হতেই রোহিত হঠাৎ চমকে উঠল,

  • বাবা, এটা কি? শ্রী এল কিকরে এর মধ্যে?
  • কে শ্রী?
  • শ্রীতমা, একে আমি চিনি, আমার স্কুলমেট, এও কি???
  • হুম, এই চারজন ই সুইসাইড করেছে।

রোহিত খানিকটা চুপ করে যায়। সৌরদীপ তাকে আরও বলে,

  • যখন তুই প্রথম শ্রীতমার ব্যাপারে শুনেছিলিস, তুই এভাবেই চমকে উঠেছিলিস, একমাস কেস তদন্ত করার পর তুই আমাকে জানিয়েছিলিস তুই কলকাতা আসতে চাস, আমি কারন জিজ্ঞাসা করলেও তুই বলিস নি, বলেছিলি এসে বলবি
  • ইয়া, আই নো দ্যাট কাল ও বলেছিলে।
  • আর ও একটা কথা
  • কি?
  • একসিডেন্ট এর আগে তুই আমাকে ফোন করেছিলি, আর বলেছিলিস যে তুই কালপ্রিট কে খুজে পেয়েছিস। কিন্তু তার আগেই….

রোহিত চুপ করে থাকে, আরও বলে সৌরদীপ,

  • আমি জানি এবারেও তুই খুঁজে পাবি কালপ্রিট কে।
  • হুম বাবা, পেতেই হবে।
  • যা, রেস্ট কর, সন্ধ্যেবেলা স্বাতী আসবে, তখন আরও ডিসকাস করব আমরা।
  • ওকে বাবা।

সন্ধ্যাবেলা স্বাতীলেখা এলে, ডিটেলে আলোচনা শুরু হয়, রোহিত নিজের ব্যাখ্যা শুরু করে।

  • আচ্ছা, আমরা শুরু করি, প্রথমেই আমরা দেখে নেব আমাদের ভিক্টিম দের, নাম, বয়স পরিচয় বলে আর সময় নষ্ট করছিনা,  আমি আসি আসল বিষয়ে। এই প্রত্যেক ভিকটিম এর মধ্যে একটা বিষয় কমন। সেটা হল প্রত্যেকেই এরা ছিল মানসিক অবসাদগ্রস্ত। “আজাদি” এদের সেই অসুস্থতার ফায়দা নেয় এবং এদের দিয়ে টাস্ক করাতে থাকে, ফাইনালি এরা সুইসাইড করে, কিন্তু আমার খটকা এই গেম এল কিকরে এদের কাছে, শুধু এদের কাছে নয়, সেই দু,শো জন ইউজারের কাছেই বা কিকরে এল?

স্বাতীলেখা প্রশ্ন করে,

  • কিভাবে? হয় তো কোনো লিংক পাঠানো হয়েছিল, যেটা খুলতেই এই গেম অটো ইনস্টল হয়ে গেছে।

রোহিত বলে

  • গুড পয়েন্ট, কিন্তু আমি যখন কেসটা হাতে নিয়েছিলাম তখন আমি এরকমই কিছু সন্দেহ করেছিলাম, কিন্তু পাইনি।

সোৌরদীপ বলে,

  • তবে কি?

রোহিত

  • তবে বিষয় টা অনেক গভীর। আমি সারা দুপুর পুরো বিষয় টাকে নিয়ে ঘেটেছি, তাতে যে জিনিস টা আমি পেলাম সেটা সত্যি অবাক করার মত।

স্বাতীলেখা –

  • কি সেটা?

রোহিত

  • হুম, দ্যাট ইজ ভেরি ইনটারেস্টিং, এরা প্রত্যেকেই অনলাইন শপিং প্রচুর করত, তাই এই হ্যাকার একটি ফেক ওয়েবসাইট বানিয়ে কম দামে জিনিস অফার করে, এবং এরা মানে যাদের ফোনে গেম ইনস্টল হয়েছে, তাদের সিস্টেম এর ওপর একসেস পেয়ে যায়, তারপর ফ্ল্যাশ মেল ইউজ করে এদের লিংক পাঠায় আর বাকিটা বুঝতেই পারছ।

এই বলে রোহিত এই সমস্ত কিছু তার ল্যাপটপ এ দেখাচ্ছিল। সব দেখে সৌরদীপ বলে

  • তাহলে এগুলো আগে বার করতে পারিসনি?
  • না বাবা তখন এই দিকটা ভেবেই দেখিনি, বা দেখেছিলাম, সেসব এখন তো জানি না,, কিনতু এখন তো জেনে গেছি, আর একটা কথা,
  • কি?
  • যারা সুইসাইড করেছে, প্রত্যেকেই কিন্তু সুইসাইড কে গ্লোরিফাই করে গেছে, তাই কবিতা, আই এন এ সং এসব পেয়েছি আমরা, কিলার যেই হোক ও কিন্তু কিছু একটা মেসেজ দিতে চাইছে আমাদের।

রোহিতের কথায় চুপ করে থাকে সৌরদীপ আর স্বাতীলেখা। রোহিত আরো বলে,

  • আমার বিশ্বাস আর একদিনের মধ্যেই আমি আবার কালপ্রিট কে খুজে নেব। ৯০% তো আমি করেই ফেলেছিলাম, বাকিটা আমি জলদিই করে নেব।
  • ওকে গ্রেট।

সেদিন আলোচনার শেষে স্বাতীলেখা চলে যায়, ডিনার সেরে রোহিত ওর বাবাকে বলে,

  • বাবা,
  • বল
  • থ্যাংকস ফর বিইং দেয়ার, হয়তো মরেই যেতাম, তুমি আমাকে নতুন করে বাঁচালে।
  • ওসব কথা ছাড়, আর নিজে বাবা হলে বুঝবি, কতটা দুশ্চিন্তা হয়, তোর মা থাকলে হয় তো….যাক গে ছাড় সেসব, তুই সুস্থ হয়েছিস তাতেই আমি খুশি
  • কিন্তু বাবা,
  • কোনো কিন্তু না, সব ঠিক হয়ে যাবে, একটু সময় নে।
  • ওকে বাবা, গুড নাইট।

রাত্রে রোহিত ঘুমাতে পারল না, শেষ অব্ধি তার বন্ধু শ্রী কেও গ্রাস করল “ আজাদি” তাকে আজ খুজে বের করতেই হবে কালপ্রিট কে। সারারাত ধরে, সে চেষ্টা চালিয়ে গেল এবং যখন শেষ পর্যায়ে পৌছুলো, তখন তার মুখ শুকিয়ে গেল, এটা কি দেখছে ও! না এটা কক্ষনোই সম্ভব না। আর সারারাত ঘুম হল না, সে ভাবতে থাকল কলকাতায় আসার পর সে কিভাবে এই সত্যি কথা টা বাবার কাছে বলতে যাচ্ছিল, কি এমন ঘটেছিল যার জন্য এসব। সে জানুয়ারী মাসের নিজের ফোন এর সমস্ত ডিটেলস বার করল, লোকেশন ট্রেস করল, দেখল তার ফোন এর লোকেশন শ্রীতমার বাড়ির দিকে! আরো অবাক হল রোহিত, তারমানে কলকাতায় এসে সে প্রথম শ্রীতমার বাড়ি গেছিল, বাড়িতে ওর ভাই শুভ থাকে, তবে ওর সাথে কি কথা বলতে গেছিল ও??? সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে! সে কে আসলে???  আর ভাবতে পারে না সে। সকাল হলেই তাকে এর উত্তর খুজে বের করতে হবে। তাই সক্কালবেলা উঠেই সে কাউকে না জানিয়ে চলে যায় শ্রীতমার বাড়ি।

শ্রীতমার বাড়ি তে গিয়েই তার দেখা হয় শুভর সাথে,

  • রোহিত দা, তুমি এত সকালে? হসপিটাল থেকে কবে ফিরলে?
  • সব বলছি আগে ভেতরে যেতে দে!
  • এস এস
  • দেখ শুভ, ২৬ জানুয়ারি আমি তোর বাড়ি এসেছিলাম?
  • হুম এসেছিলে তো, এখান থেকে ফেরার পথেই তো একসিডেন্ট হয় তোমার।
  • কেন এসেছিলাম বলতে পারবি?
  • মানে? তুমি নিজেই তো জানো।
  • না, আমি সত্যিই জানি না, এই একসিডেন্ট আমার লাইফ কে ছাড়খার করে দিয়েছে ( অসহায় ভাবে)

রোহিত শুভ কে সমস্ত কথা বলতে থাকে কিভাবে কি হয়েছে এবং শেষ এ জিজ্ঞাসা করে,

  • এবার বল ভাই, কেন এসছিলাম
  • দাড়াও দাদা, আমি আসছি এখুনি।

শুভ চলে যায় এবং একটা পেনড্রাইভ নিয়ে আসে,সেটা নিজের ফোনে রেখে সে একটা ভিডিও প্লে করল, শ্রীতমার নিজের ভিডিও, তাতে সে বলছে

“ রোহিত, তুই ঠিক আমি তোকে বুঝতে পারিনি, আজ বাংলা ভাষা কে অপমান করার জন্য আমি এই “ আজাদি” গেম এর জালে জড়িয়ে গেছি, প্রতি রাউন্ডে বাংলা কে অপমান করেছি যত, তত পয়েন্টস পেয়েছি, ভাবিনি শেষ টা এরকম হবে, তুই সারাক্ষণ ই বলতিস না, বাঙালী দের ছোট করতে নেই, আজ সেটা বুঝতে পারছি, এখন আমার সমস্ত পার্সোনাল ডিটেলস ওদের হাতে, আমি হয় তো আর বাঁচব না, কিন্তু এই মেসেজ টা তোর জন্য, আমি তোকেই ভালোবাসি, এখন সেটা বুঝলাম।”

ভিডিও টা দেখার পর রোহিতের চোখে জল চলে এল, সে জলদি শুভকে বিদায় জানিয়ে চলে এল, হয় তো খানিকটা বুঝতে পেরেছে সে।

বাড়ি এসে সে চিন্তা করতে লাগল, তার মনে পড়তে লাগল, শ্রীতমা বাংলা কে নিয়ে কতটা মজা করত, বলত বাঙালি রা খুব নাকি অলস, খুব রাগ হত রোহিত এর। মনে হত এদের মেরে ফেলবে। বাঙালী দের কে মজা করছে তার ওপর সে নিজে বাঙালী?  এ জিনিস মেনে নেওয়া যায়না! তার মনে পড়ল সে প্রায়ই বলত, “ দেখিস যে বাঙালী বাঙালী কেই সম্মান করে না, তার বেচে থাকার অধিকার নেই, এদের কঠোর শাস্তি দরকার,এই বাংলায় কত বিখ্যাত মানুষ জন্মেছেন, তাও বাঙালি কেন নিজেকে নিয়েই মজা করে??? এসবই ভাবত রোহিত। তার জীবনের লক্ষ্য ছিল বাঙালী দের বিশ্বের দরবারে উচু জায়গা দেবে তার জন্য যদি কিছু দুর্বল মানুষ কে বলি দিতে হয় দেবে সে। কিন্তু নিজে পিছপা হবে না। এতসব ভাবতে ভাবতে সে বুঝতে পারল কি হয়েছে আসলে। সে তার বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দিল,

  • বাবা, আই হ্যাভ ফাউন্ড দ্য কালপ্রিট।

বলেই কেটে দিল সে।

সন্ধ্যে বেলায় তার বাবা আসতেই, রোহিত তাকে বলল,

  • আমি পেয়ে গেছি বাবা তাকে!
  • হুম বল
  • বাবা তার আগে তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই
  • বল
  • আমি কলকাতা কেন এসেছিলাম জান? শ্রীতমার সুইসাইড এর পর ওর ভাই শুভ আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, তাই এসেছিলাম, আর এসে দেখলাম এটা।

বলেই ভিডিও টা সৌরদীপ কে দেখায় সে। আরো বলতে থাকে,

  • জানো বাবা, আমি বরাবরই এটা চেয়ে এসছিলাম যে বাঙালী কে যারা অপমান করে, তারা যেন সব শেষ হয়, আর দেখেছ বাবা যারা সুইসাইড করেছে তারাও কিন্তু বাংলা কে নিয়ে মজা করত….

সৌরদীপ চুপ করে থাকে

  • বাবা আমার কিছু মনে নেই শেষ কয়েক বছরের কথা, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি কি হয়েছে,  আর আমি চাই একজন দক্ষ বাঙালী পুলিশ অফিসারের মাথা কখনোই নিচু না হোক, সেদিন তুমি আমার ফোন কল পুরোটাই শুনেছিলে একসিডেন্ট এর আগে, কিন্তু তুমি সেটা লুকিয়েছিলে। এবার সেটা রেকর্ড করা আছে, চালাও।

সৌরদীপ কলরেকর্ড চালু করে, শোনা যায় রোহিতের গলার আওয়াজ।

“ হ্যালো বাবা! বাবা আই গট দ্য কালপ্রিট ইয়া আই হ্যাভ অল দ্য ডিটেইলস, ইটস মি, বাবা……..( একসিডেন্ট এর আওয়াজ)

রোহিত বলতে থাকে,

  • তুমি একজন অসাধারণ পুলিশ অফিসার বাবা! তুমি রোহিত কে ধরার জন্য রোহিত কেই কাজে লাগালে, কিন্তু এতদিন কেন লুকিয়ে রাখলে?

মৃদু হেসে সৌরদীপ বলে,

  • বাবা হ।  বুঝবি

রোহিত হেসে বলে

  • তুমি চেয়েছিলে না? আমি যাতে ফ্রি থাকি?
  • হুম
  • বাবা, ভুল আমার দ্বারা হয়েছে, নেতাজী কে আদর্শ করে আমি এগিয়েছি, তাই বাংলা আমার আত্মায়, চেয়েছি বাঙালী সবার শ্রেষ্ঠ হোক, কিন্তু আমার কাজ ভুল ছিল, আমার কাজের জন্য বাংলা কলঙ্কিত হত, তাই আমি চাই তুমি আমাকে এরেস্ট করো, এটা আমার চয়েস, আই ওয়ান্ট টু বি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, নট ফ্রি।

সৌরদীপ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর ফোন করে কমিশনারের অফিসে খবর দিয়ে দেয়। সেদিন রাত্রেই এরেস্ট হয় রোহিত।

(রোহিতের গলায়)

ভুল করলে শাস্তি অনিবার্য, ক্ষুদিরাম, ভগত সিং, দীনেশ গুপ্ত ও পেয়েছিল, তাহলে আমি কেন পাব না। অন্যায় করে পালানো নয়, অন্যায় স্বীকার করে শাস্তি কে মেনে নেওয়াই স্বাধীনতা, এর নাম ই “ Azaadi “

Tags: আজাদিগল্পবড়

অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা বাতায়ন24-Subscribe করার জন্য ধন্যবাদ

Unsubscribe
আগের পোস্ট

মীরসরাইয়ের মায়ানীতে সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ’র সভা শেষে ফেরার পথে দু’ছাত্রলীগ কর্মী আহত!

পরের পোস্ট

পিতৃতর্পণ

batayan24

batayan24

অনলাইন বাতায়ন24 নব দিগন্তে সত্য হোক উন্মোচন

পরের পোস্ট

পিতৃতর্পণ

সব সময়ের জনপ্রিয়

  • চলমান
  • মন্তব্য
  • সর্বশেষ

চা বানানোর কয়েকটি সহজ নিয়ম

সেপ্টেম্বর 3, 2022

ময়মনসিংহ গীতিকা : লোকজীবনের স্বরূপ অন্বেষণ

সেপ্টেম্বর 3, 2022

সৈয়দপুরে কনের সাথে জোর পূর্বক অশ্লীল ছবি তুলে টাইগার বাহিনী’র প্রতারনা

অক্টোবর 29, 2021

দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজীলত

সেপ্টেম্বর 3, 2022

ত্বক ও চুলের জন্য টক দইয়ের ঘরোয়া প্যাক

সেপ্টেম্বর 3, 2022

অবিন্যস্ত পংক্তিমালা

2

দুই প্রতিবেশী

2
ফাইল ফটো

তুমি কবি ! মহাকবি !

2

সুতার বাধন প্রতি রাতের কান্না পর্ব ৩য়

2

কঠিন ব্রত

2

মতলব উত্তরে চতুর্থ শ্রেণীর বিজয় দাসের ডিম নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না

মার্চ 31, 2023
ছবি : বিডি প্রতিদিন

নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে হাজারও মুসলমান একসাথে তারাবির নামাজ আদায়

মার্চ 31, 2023

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

মার্চ 31, 2023

বিএনপি বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সৌজন্যে ইফতার আয়োজন

মার্চ 31, 2023

শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দিবে হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ: নুর হোসেন পাটওয়ারী

মার্চ 31, 2023

সাম্প্রতিক প্রকাশিত

মতলব উত্তরে চতুর্থ শ্রেণীর বিজয় দাসের ডিম নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না

মার্চ 31, 2023
ছবি : বিডি প্রতিদিন

নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে হাজারও মুসলমান একসাথে তারাবির নামাজ আদায়

মার্চ 31, 2023

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

মার্চ 31, 2023

বিএনপি বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সৌজন্যে ইফতার আয়োজন

মার্চ 31, 2023

শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দিবে হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ: নুর হোসেন পাটওয়ারী

মার্চ 31, 2023

মতলব উত্তরে লেংটার মেলা ; অশ্লীলতা বন্ধের দাবী এলাকাবাসীর

মার্চ 30, 2023

মতলব উত্তর নৌপুলিশের অভিযানে ১শ ২৫ কেজি ঝাটকা সহ আটক ৪

মার্চ 30, 2023

মতলব উত্তরে জব্দকৃত জাটকা বন্টন নিয়ে মারামারি ; ইউপি সদস্য সহ আহত ৪

মার্চ 30, 2023

মতলব উত্তরে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত ; তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা

মার্চ 30, 2023

চিলমারীতে হাসপাতালে রোগীর মাথা ফাটিয়ে দিলেন ডাক্তার

মার্চ 30, 2023

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

Facebook Page

Twitte

Instagram

Linkedin

Yiutube

বাতায়ন24.কম

সম্পাদকঃ আবুল কাশেম পাটোয়ারী। বার্তা সম্পাদকঃ খোরশেদ আলম বিপ্লব। নির্বাহী সম্পাদকঃ তানভীর আহমেদ। প্রকাশকঃ আজম পাটোয়ারী। প্রকাশক কর্তৃক দক্ষিন টরকী,মতলব উত্তর,চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত।

WhatsApp: +880-1834-986850
E-mail: [email protected]
প্রযুক্তি সহায়তা : মোহাম্মদ আরিফ হোসেন

  • Batayan24.com
  • Privacy Policy
  • কাব্য সমগ্র
  • জীবন ব্যবস্থা
  • নারী আলাপন
  • ফটো গ্যালারী
  • ব্যবহারের শর্তাবলি
  • শিশুতোষ
  • সপ্তাহের আলোচিত খবর
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য সম্ভার

© ২০২০-২০২৩ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত - অনলাইন পত্রিকা বাতায়ন২৪ডটকম (R. D. M. Media & Publishing).

  • সপ্তাহের আলোচিত খবর
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • বিনোদন
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • স্বাস্থ্য পরামর্শ
  • বাংলার বই
  • সাহিত্য সম্ভার
  • কাব্য সমগ্র
  • শিশুতোষ
  • সম্পাদকীয়
    • বিশেষ কলাম
  • আমাদের সম্পর্কে
    • Privacy policy
কোন ফলাফল নেই
সমস্ত ফলাফল দেখুন

© ২০২০-২০২৩ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত - অনলাইন পত্রিকা বাতায়ন২৪ডটকম (R. D. M. Media & Publishing).

ফিরে আসার জন্য স্বাগতম!

Sign In with Facebook
OR

নীচে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন

Forgotten Password?

নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি!

Sign Up with Facebook
OR

নিবন্ধন করতে নীচের ফর্মগুলি পূরণ করুন

সমস্ত ক্ষেত্র প্রয়োজন প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করুন

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করতে আপনার নাম বা ইমেল লিখুন.

প্রবেশ করুন