চয়ন সাহা
(আগরতলা,পশ্চিম ত্রিপুরা)
সন্ধ্যার পর যখন ফাঁকা ঘরটাতে বসি,
এক অদ্ভুত অন্যমনস্কতায় হারিয়ে যায় আমার অবচেতন আয়না,
অপলক দৃষ্টিতে নিরন্তর ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থাকি,
দেওয়ালের বুকে ঝোলানো পুরোনো সেই ব্ল্যাকবোর্ডে।
একবার নীলাম্বরী বলেছিলো;
বোর্ডের বুকে দীর্ঘ সময়ের লাঙল নিড়ানি তে,
তার জড়তা-সংকোচ তীব্র আকার নিয়ে বসেছে।
নেহাৎ এই জড় বস্তুটা এখন আর চকের আঁচড় ধরে রাখতে পারে না।
যত বার আঁচড় কাটতে গেছি তখনই নাকি,
একটা অস্পষ্ট কিছু ভেসে উঠেছে চকের টানে,
সেদিন প্রথম বার নিজের চোখে তেজ,
আমার সন্দেহের খাতায় বন্দি হয়েছিলো,
নীলাম্বরীও সেদিন আমার বসন্তের পাতা ঝড়ে পরার কথা বলতে পারেনি,
হাতে তোলা চক আর ডাস্টার টা ঘুচিয়ে রেখে,
সে যাচ্ছি বলে বেড়িয়ে গেল চোখ লুকিয়ে,
আর ফিরে আসে নি সে!
একদা এই বোর্ডের সীমানা জুড়ে লিখে দিতাম,
অজস্র প্রশ্ন উত্তরের সমাধান,লিখতাম একরাশ জিজ্ঞাসার ব্যাখ্যা।
এই বোর্ডের গায়ে চকের আঁচড় দিয়ে দাঁড়িয়েছে,
সভ্যতার অগ্রগতি সভ্যতার ইতিহাস আর গৌরব।
শুধু কি তাই? না!
এই বোর্ডের এক প্রান্ত সাক্ষী আছে,
বিমল,রমা,অপূর্ব ও অভীকদের মতো কিছু কাগজি অসফলতার।
ভাবনাগুলোও আমার মতো ঝাপসা হয়ে আসছে,
আমার কাঁপা হাত আর বোর্ডের বুকের অস্পষ্ট আঁচড়,
দুই’ই আজ মিলে মিশে একাকার!
অথচ, এই হাতে এই বোর্ডে একদা শক্ত হয়েছে শিরদাঁড়া,
সমাজ পেয়েছে এক একটা শক্ত মেরুদন্ড,
সেই মেরুদন্ডেই আজ সভ্যতার হাহাকার।
আর আমার বলতে,
শুধু পড়ে রইলো এক টুকরো ভাতরঙা কাপর,
আর বাকি সবই রইলো সভ্যতার।