সম্পাদনায়: সাবরিনা ইসরাত জুই
মানব জীবনে গাছের ভূমিকা অপরিসীম, মানুষের প্রত্যাহিক কাজ কর্মে এই গাছ বিশাল ভূমিকা পালন করে।সমগ্র জীব জগতের শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজন বাতাস আর তা মূল উৎপাদনকারী হচ্ছে আমাদের চারপাশে থাকা এসব গাছ পালা।
মানব জীবনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই গাছের উপর নির্ভর করতে হয় এমন কি জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহার হয় সব রকমের গাছ।
আজ আমরা তেমনি একটি ভেষজ গুন সম্পন্ন গাছ নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব, তা হল সর্বাধিক পরিচিক অর্জুন গাছ।
ভেষজশাস্ত্রে ঔষধি গাছ হিসাবে অর্জুনের নাম সবার উপরে ব্যবহার হয়। এই উদ্ভিদ কমব্রিটেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘টারমিনালিয়া অরজুনা’, যার সংস্কৃত নাম ককুভ। বৃহদাকৃতির বহুবর্ষজীবী এই উদ্ভিদটি প্রায় ১৮-২৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
গাছটির মাথা ছড়ানো ডালগুলো নীচের দিকে ঝুলোনো থাকে। পাতা গুলো দেখতে অনেকটা মানুষের জিহ্বাকৃতির। ছাল খুব মোটা এবং ধূসর বর্ণের। এই গাছ থেকে সহজেই ছাল ওঠানো যায়। ফল দেখতে সবুজ রঙের কামরাঙার মতো, পাঁচ খাঁজ বিশিষ্ট কিন্তু আকৃতিতে অনেক ছোট।

এই গাছের ভেষজ গুন সমূহ :-
আমরা এখন এই বহুবিধ ব্যবহৃত গাছটির ভেষজ গুন সমূহ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব এবং আশা করি তা থেকে সবারই উপকার হবে, তাহলে চলুন দেখে নেই অর্জুন গাছের ভেষজ গুনগুলো।
১/ বুক ধড়ফড় করলে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম আর শুকনো হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মিলি জলের সাথে মিশিয়ে জাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যায়। তবে পেটে যাতে বায়ু না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২/ অর্জুন ছাল বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয় ও কার্যক্ষমতা বাড়ে।
৩/ এটি রক্তের কোলেস্টরল কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪/ বিচূর্ণ ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভারসিরোসিসের টনিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
৫/ অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে, এ ট্যানিন মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। এটি মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করে এবং শরীরে ক্ষত, খোস পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেঁটে লাগালে সেরে যায়।
৬/ অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা, ব্যথা, প্রদর ইত্যাদি চিকিৎসায়ও উপকারী।
৭/ অর্জুনে স্যাপোনিন রয়েছে, এটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়। অর্জুনের ছালের রস যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও ব্যবহার হয়। ৮/ অর্জুন গাছের তেল খাদ্য হজম ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যতন্ত্রের ক্রিয়া স্বভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৯/ ক্যানসার কোষের বর্ধন রোধকারী গ্যালিক অ্যাসিড, ইথিগ্যালি,লিউটেনোলিন রয়েছে অর্জুন ছালে। এ কারণে এটি ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আরো বহু ঔষধের ও রোগে ব্যবহৃত হয় এই অতিপরিচিত ভেষজ গাছটি। আমরা পরবর্তি আরো বিস্তারিত আলোচনার করতে চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।